• facebook
  • twitter
Sunday, 24 November, 2024

লেখক

জলদ চা পান শেষ বাজারে যাবার উদ্যোগ নিতেই সুবর্ণা এগিয়ে এল

জলদ খাটের উপর দু’পা ভাঁজ করে প্রায় পদ্মাসনের ভঙ্গিতে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল জলদ। স্ত্রী সুবর্ণা ঢাকনা যুক্ত চায়ের পেয়ালাটি বিছানার উপর অবজ্ঞা ভরে বসিয়ে বলল, নটা বেজে গেছে, আগে বাজার করে আনো। এর পরে টাটকা সবজি মিলবে না। টাটকা সবজি না হলে আমি রান্না করতে পারবো না। আমার কি আর বসার সময় আছে! তুমি বেরুলেই মেয়ে নিয়ে স্কুলে ছুটতে হবে। জলদ পেয়ালার দিকে চেয়ে রইল। পেয়ালা দুলছে তাঁর ভাগ্যের মতোই। ঠক করে একটা শব্দ হলে দৃশ্যটা মানানসই হতো। টেবিল না হয়ে বিছানা হওয়ায় সেটি হল না।

খবরের কাগজ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পেয়ালার ঢাকনা খুলে ওষ্ঠদ্বয়ে ঠেকাতেই তীব্র ছেঁকাসহ অন্ধকার নেমে এল চোখে। উষ্ণ বাষ্প চশমার কাচ দুটোকে ঝাপসা করে দিল আর ছেঁকার পরিমাণ অতটাই তীব্র যে সঙ্গে সঙ্গে পেয়ালাটিকে বিছানার উপর বসিয়ে দিতে হল। সুবর্ণা দেখেনি তাঁর চৌদ্দপুরুষের সৌভাগ্য। দেখলে তাকেই দু’কথা শুনিয়ে দিত। জামার খুঁট দিয়ে চশমা মুছল সে। যতই নিম্নমেধার হোক সুন্দরীদের তালিকায় রাখা যায়। কোনোরকমে দু’বারের চেষ্টায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে সুবর্ণা। একরকম উচ্চবিত্ত পরিবারের আদুরে কন্যা। দু’বছর প্রতিষ্ঠিত পাত্রের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরেও তেমন সাফল্য আসেনি। বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল নিম্ন মেধা।

সেও তেমন বড় চাকুরে নয়। তখন সবে করণিকের চাকরি পেয়েছে। বেসরকারিকরণের যুগে যতই হোক সরকারি চাকরি তো। এক বন্ধুর মাধ্যমেই তাঁর কাছে প্রস্তাব আসে। প্রথমে না করে দিয়েছিল। কারণ তাদের পরিবার ততটা সচ্ছল নয়। কিন্তু বন্ধুর চাপাচাপিতেই দিদি জামাইবাবুকে নিয়ে দেখতে গিয়েছিল। মেয়ে পছন্দ হলেও কোথাও একটা ‘কিন্তু’ থেকে গিয়েছিল। তাদের মফস্সল ঘেঁষা গ্রাম, মেয়ে যদি মানিয়ে নিতে না পারে! সব কিন্তুর মাথায় ঠাণ্ডা জল ঢেলে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে তাকে।

যা ভেবেছিল বাস্তবে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। বাবা-মার সঙ্গে মোটেই বনিবনা হল না স্ত্রীর। টুকটাক অশান্তি প্রায়ই লেগে থাকতো। কোনদিক সামলাবে সে? স্ত্রীর পক্ষ নিলে বাবা-মার মুখ ভার, আবার বাবা-মার পক্ষ নিলে স্ত্রীর মুখ ভার। দু’কূল সামলাতে তাকে হিমসিম খেতে হচ্ছিল।

এই টানাপোড়েনের মধ্যে সে পুত্র সন্তানের পিতা হল। নতুন অতিথির আগমনে সংসারে কিছুটা শান্তির বাতাবরণ তৈরি হলেও বেশিদিন স্থায়ী হল না। পুত্রের বয়স দু’বছর পার হতেই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সুবর্ণা এতই চিন্তিত হয়ে উঠল যে, সামান্য কথা কাটাকাটি সুনামির আকার নিতে শুরু করল। সুবর্ণার যুক্তি— এখানকার গ্রাম্য পরিবেশে ছেলের লেখাপড়া হবে না। ভালো স্কুল নেই। ভালো শিক্ষক নেই। সব সুযোগ সুবিধা মিলবে শহরে।

বাবা-মার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তাঁদের বৌমার উদ্দেশ্য। মা একদিন তেড়ে-ফুঁড়ে বলেন, আর শহর দেখিয়ো না, আমার ছেলে কি গ্রামে থেকে লেখাপড়া শেখেনি? চাকরি পায়নি? আমার ছেলের মতো এত ভালো ছেলে সাত গাঁ খুঁজে একটাও পাবে না। সুবর্ণাও না দমে বলল, এখানে ক’টা মিলবে জানি না তবে আমাদের শহরে অলিগলিতে ঘরে ঘরে মিলবে।
মা রণে ভঙ্গ দিল। বুঝে গেছে শিক্ষিত বৌমার সঙ্গে কথায় পেরে উঠবে না। মার চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু বেরিয়ে এল। ছেলের প্রতি অশোভন মন্তব্যে ব্যথিত হয়েছেন। সন্তান হয়ে মার সমর্থনে কোনো কথা বলার সাহসটুকু হারিয়েছে জলদ। কারণ মাকে সমর্থন করে কিছু বললেই গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা। সুতরাং রণে ভঙ্গ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সেদিন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল সে।

বাড়ি ফিরল রাত দশটায়। ভেবেছিল ভালোয় ভালোয় সব হয়তো মিটে গেছে। ভাবনায় ছেদ পড়ল। সুবর্ণা তারস্বরে বলল, অনেক হয়েছে, এ বাড়িতে আর থাকা সম্ভব নয় । এক সপ্তাহের মধ্যে খুঁজে নাও ভাড়াবাড়ি, নইলে আমি ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যাব। জলদের মনে হল, মাথায় যেন বজ্রপাত হল। কোনোরকমে অভিঘাত সামলে বিছানায় বসল। তার মনে হল— তার শরীর যেন কুকুরের মতো কুণ্ডলি পাকিয়ে যাচ্ছে। আরো দুটো পা, একটা লেজ বেরুচ্ছে। বলতে ইচ্ছা করছে, তোমার যেখানে খুশি যাও, বাবা মাকে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবো না। কিন্তু বলতে পারল না। তার মনে হল— অন্তত কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ শব্দে প্রতিবাদ করা উচিত। তেড়েফু়ঁড়ে চিৎকার করে বলতে চেষ্টা করল, অসম্ভব। কিন্তু স্বরই বেরুলো না।

মা-বাবা এভাবে খেলার মাঠ ছেড়ে দেবে বুঝতে পারেনি সে। মা এসে বলল, দ্যাখ খোকা, আমরা ভেবে দেখলাম বৌমা ঠিক কথাই বলছে। তুই শহরে বাড়ি ভাড়া দেখে নে।
এরপর জলদ গ্রামের প্রকৃতি, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন, বাবা-মাকে ছেড়ে শহুরে জীবন বেছে নিয়েছে। বাবা-মা ও তার মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা সৃষ্টি হয়েছে। বছরে দু-একবার বাবা-মার কাছে যায়। মা-বাবা একটু ব্যবধান রেখে কথাবার্তা বলে। আগের সাবলীলতা হারিয়ে গেছে। কারণ বুঝে গেছে দুটো টুকরোতে পরিণত হয়েছে। কিছুতেই এক করা যাবে না।

জলদ চা পান শেষ বাজারে যাবার উদ্যোগ নিতেই সুবর্ণা এগিয়ে এল। এভাবে ভাড়াবাড়ির গুমটির মতো ঘরে কি সারা জীবন কাটিয়ে যাব নাকি? বলার মতো নিজের একটা বাড়ি না থাকলে চলে? খোকার স্কুলের বন্ধুদের সবার দোতলা, তিনতলা বাড়ি, অনেকেই দামি চারচাকা গাড়িতে স্কুলে আসে। আমরা এখনো ভাড়া বাড়িতে থাকি— এ কথা বলতেই লজ্জা করে। কবে আর বাড়ি করার চিন্তাভাবনা মাথায় ঢোকাবে?

জলদ ঢোক গিলে বলল, বাড়ি! অত টাকা কোথায় পাব? এখনও বাস্তু জমি কিনে উঠতে পারিনি। বাড়ি আমার কাছে স্বপ্ন।

সুবর্ণা তেড়েফুঁড়ে বলল, স্বপ্ন দেখতে শিখতে হয় বুঝলে। এখন তো সবাই ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে বাড়ি করছে। তাছাড়া অফিস থেকে লোন নিলেই তো পারো। এবার একটু চোখের দৃষ্টি উপর দিকে তোলার চেষ্টা করো।

জলদ হাত কচলাতে কচলাতে বলল, তা তো নিতেই পারি, পরিশোধ করবো কী করে? খোকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মাইনে, বাড়ি ভাড়া, বাবা-মাকে মাসিক তিন হাজার পাঠিয়ে সংসার খরচের পরে উদ্বৃত্ত তেমন কিছু থাকে না।

সুবর্ণা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, তোমার বাবার সংসারে তেমন অনটন আছে বলে মনে হয় না। এবার থেকে ওদের অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দিও। ব্যাঙ্কলোনের ব্যবস্থা করো। এদিকে আমিও চেষ্টা করি। আমার বাবার কাছে থেকে যদি দু-চার লাখ টাকা ধার হিসাবে নিতে পারি—
জলদ বলল, কী করা যায় ভেবে দেখছি। তোমার বাবার কাছে হাত পাতার প্রয়োজন নেই। বলেই বাজারের পথে হাঁটা দিল। আজকের রবিবারের পাতা খুলতেই দেখল গল্পটা। ‘ঝামা’ নামে একটা গল্প পাঠিয়েছিল একটা দৈনিক সংবাদপত্রে। নামটা পড়ার পড়েই লেখকের নামের দিকে নজর দিয়ে ছিল। জলদ শব্দটা সবে পড়ছে— মাথাটা যেন টলে গেল। পদবিতে চোখ রাখার আগেই সুবর্ণা তেড়ে এল। ভালো করে আর দেখা হল না। একই নামের দু’জন লেখক থাকতেই পারে। তার গল্পটা কি দৈনিক সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে? পত্রিকা দপ্তর থেকে তাকে কোনো সংবাদ দেয়নি। হয়তো ওটা অন্য কারো লেখা।

সংক্ষিপ্ত বাজার সেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরল। বাজারের থলি রান্নাঘরে ঢুকিয়ে শোবার ঘরে প্রবেশ করল। এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল। পেল না। সংবাদপত্রটা কোথায় যে রাখল! বলল, সুবর্ণা আজকের সংবাদপত্রটা তুমি কি নিয়েছো?

রান্নাঘর থেকে ভেসে এল— না আমি নিইনি। তোমার ছেলেও নেয়নি। তুমি নিশ্চিত বাজারে নিয়ে গিয়েছিলে। ভুল করে কোথাও ফেলে এসেছো। তোমার যা ভুলো মন! কাগজ নিয়ে আমাকে আর বিরক্ত করবে না। আজ বিকালে ছেলের দুটো টিউশানি আছে। আমিই তো ওকে নিয়ে যাই। তুমি তো পায়ের পা তুলে…

জলদ মনে মনে ভাবল, এতটা ভুল হতে পারে না। সঙ্গে সংবাদপত্র নিয়ে সে বাজারে যায়নি। সুতরাং বাইরের ফেলে আসার সম্ভাবনা কম। বাড়ির মধ্যে কোথাও গুঁজে রেখেছে। বাড়ির কোথাও কাগজের হদিস না পেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
মনের মধ্যে একটা কাঁটা যেন বিঁধে চলেছে। ছোটো-খাটো লিটিল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় তার লেখা। বড় প্রত্রিকায় এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। এত নামি সংবাদপত্রে তার লেখাটাই…! ভালো করে দেখাই তো হল না। জলদ মনে মনে ভাবল, সন্ধ্যায় বাজারে গিয়ে সংবাদপত্রটা কিনে নিলেই হবে।

দুপুরে আহার পর্ব শেষে সুবর্ণা ছেলে নিয়ে বেরিয়ে গেল। দু-জায়গায় ছেলের টিউশন শেষে ফিরতে ওর সন্ধ্যা পেরিয়ে যাবে। অগত্যা লম্বা একটা রবিবাসরীয় ঘুম দেওয়া ছাড়া উপায় কী। জলদ বিছানায় শুয়ে শরীর এলিয়ে দিল।

ঘুম ভাঙল কলিং বেলের শব্দে। ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসল জলদ। আবার কত অভিযোগের ঝুড়ি উপুড় করবে কে জানে! এগিয়ে গেল দরজার দিকে। দরজা খুলতেই হাস্যোদ্দীপক মুখে সুবর্ণা ঢুকে পড়ল অভ্যন্তরে।

জলদ মনে মনে ভাবল মহারানীর মেজাজ তো এত ফুরফুরে হওয়ার কথা নয়। নিশ্চিত কোনও শিক্ষক ছেলের প্রশংসা করেছে। ছেলের প্রশংসা শুনতে সব বাবা-মার ভালো লাগে। ছেলেকে ভবিষ্যতে ডাক্তার কিংবা ইজ্ঞিনিয়ার বানাবার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ছে সুবর্ণা। সে নিজে অতো উচ্চাশা পোষণ করে না। যার যেমন মেধা তাকে সে ভাবেই বাড়তে দেওয়া উচিত।

সুবর্ণা দু’কাপ চা নিয়ে তার পাশেই বসল। এককাপ তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, আজ ওদের চড়া মেকআপে কালি লেপে দিয়েছি। তখন সবার মুখ মরা মাছের মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেল। দেখে আমার যে কী হাসি পাচ্ছিল তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। কোনও রকমে হাসি সামলেছি।

জলদ বলল, দেখ আমরা সাধারণ মানুষ, আমি সাধারণ চাকরি করি। বড় লোকেদের সঙ্গে পেরে উঠব কেন? ওদের হাত হয়তো লম্বা থাকতে পারে। পিছনে লাগতে পারে। ওদের ঘাঁটানো উচিত নয়। কী এমন বলেছ?

সুবর্ণা বলল, মশাই কিছুই বলতে হয়নি। একটা জিনিস শুধু মুখের উপর ছুঁড়ে মেরেছি। তাতেই মুখ আলকাতরার মতো কালো আর হাতগুলো গুটিয়ে ছোট হয়ে গেল। এতদিন ওদের অনেক মাতব্বরি শুনেছি। আর না। ওদের সবার বর নাকি বড় বড় অফিসার কর্তা। বছরে একবার অফিসের কাজে বিদেশ যেতে হয়। মাসে লক্ষ টাকা উপরি মাইনে পায়। কারও দোতলা, কারও তিনতলা বাড়ি। তিন চারটে করে কাজের লোক। আজ একজন বলল, তোমার বর তো ক্লার্কের চাকরি করে, তুমি এসব বুঝবে না। আমাকে ছোটো করা! অতি অহঙ্কারে দর্প যে চূর্ণ হয়— তা প্রমাণ করেই ছেড়ছি।

জলদ বলল, এত ভণিতা না করে কী অঘটন ঘটিয়ে এসেছে সেটা তো বল?

সুবর্ণা একটু দম নিয়ে বলল, আগে বল তুমি আমাকে ক্ষমা করেছ? আমি রাগের মাথায় একটা অন্যায় কথা বলে ফেলেছি। আর কোনোদিন বলব না গো। বাবা-মায়েরা কত কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করে। বিপদে আপদে বাবা-মায়ের দেখাশোনা করা তো সন্তানদেরই কর্তব্য। আমি নিজের স্বার্থের কথা ভেবে তোমার বাবা-মাকে টাকা পাঠানো বন্ধ করতে বলেছি। তোমার কর্তব্য থেকে তুমি সরবে কেন? এবার থেকে যদি সম্ভব হয় টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে দিও। ওই ফ্লাট কেনা কিংবা জমি কিনে বাড়ি করার ভূত আজ মাথা থেকে উড়িয়ে দিয়েছি। ওসব নিয়ে আর চিন্তা করব না। সব সময়ের হাতে ছেড়ে দিলাম। সময় এলে একদিন হবে— না এলে হবে না।

জলদ বুঝে উঠতে পারছে না, কেন সুবর্ণার এত পরিবর্তন। কী এমন ঘটনা ঘটেছে যা ওকে আমূল বদলে দিল। বলল, সংসারে থাকলে অনেক কথা এক কান দিয়ে শুনে পুনরায় অন্য কান দিয়ে বার করে দিতে হয়। কিন্ত তুমি মূল বিষয় থেকে পিছলে সরে যাচ্ছ। এবার আসল বিষয়ে ফিরে এসো। তোমাকে ওরা অপমান করেছে? নাকি ঝগড়া করেছ ওদের সঙ্গে?
সুবর্ণা বলল, সে সাহস ওদের আছে? ওদের মুখের উপর যা ছুঁড়ে দিয়েছি— সেটাই এখন হজম করুক ওরা। আজ এজজন একটা নতুন চারচাকা নিয়ে এসেছে। গতকাল নাকি কিনেছে। সবাই আল্লাদে আটখানা। গাড়ি যেন প্রথম দেখছে। মাঝ থেকে একজন মহিলা বলল, তোর বর সামান্য ক্লার্কের চাকরি করে। তোর বর কি আর গাড়ি কিনতে পারবে? তখন রাগে আমার গা-পিত্তি জ্বলতে শুরু করেছে। আগেই দশটা খবরের কাগজ কিনে নিয়ে গিয়ে ছিলাম। ওদের সবার মুখে কাগজগুলো ছুঁড়ে মারলাম।

জলদ বলল, কী দরকার ছিল এসব করার। অর্থ তো তোমারই অপচয় হল। ওরাও নিশ্চয় ঝগড়াঝাঁটি করল তোমার সঙ্গে?

সুবর্ণা বলল, জোঁকের মুখে নুন পড়লে সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে? বললাম, তোমাদের বাড়ি, গাড়ি, দামি কসমেটিকের গল্প অনেক শুনেছি। ওসব নিয়ে গর্ব করার আমার প্রয়োজন হয়নি। আমার গর্বের ধন বাড়িতে আগলে রেখেছি। কাগজ খুলে রবিবারে পাতা দেখ, আমার স্বামী জলদের গল্প বেরিয়েছে। ও দশ বিশটা কাগজ, পত্রিকায় গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লেখে। আজ বাধ্য হলাম মুখ খুলতে। দেখে শুনে ওদের চড়া মেকআপ কালো হয়ে গেল।
জলদের মুখে কথা নেই। মনে মনে ভাবল তার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। পাগলি, তোর সঙ্গেই কাটাতে হবে বাকি জীবন।