সোমবার রাজ্যপাল তথা আচার্যের ডাকা বৈঠকে এলেন না কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। শিক্ষা দফতরের থেকে অনুমােদন না মেলায় বৈঠকে তারা হাজির থাকতে পারেননি রাজভবনের বৈঠকে। এরই মধ্যে আগামী ১৭ জানুয়ারি সমস্ত বিধায়কদের নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলেন রাজ্যপাল। গণপিটুনি ও তপশিলি জাতি-উপজাতি কমিশন বিল নিয়ে আলােচনার জন্যই বিধায়কদের ডাকছেন রাজ্যপাল। বিধানসভার বিল নিয়ে রাজভবনে বিধায়কদের ডেকে পাঠানাের ঘটনা নজিরবিহীন। ওই বৈঠকেও তৃণমূল বিধায়ক এমনকী বাম বিধায়কদেরও হাজির থাকার নিশ্চয়তা নেই।
রাজ্য ও রাজ্যপালের যুদ্ধে উলুখাগড়ার মতাে দশা উপাচার্য কিংবা বিধায়কদের। সােমবার রাজ্যপাল টুইট করে জানান, গণপিটুনি এবং তপশিলি জাতি-উপজাতি কমিশন বিল নিয়ে আলােচনার জন্য আগামী ১৭ জানুয়ারি, বেলা দু’টোয় সর্বদলের বিধায়কদের ডাকা হচ্ছে। কারণ এই দু’টি বিল নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রয়ােজনীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। উপরন্তু বিধানসভা এবং রাজ্য সরকার এই বিল নিয়ে অসমর্থনযােগ্য তথ্য জনসমক্ষে আনছে। সেই কারণেই এই সব দলের বিধায়কদের নিয়ে আলােচনা করার জন্য বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
রাজ্যপালের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েই বাম-কংগ্রেস নেতারা যৌথ বৈঠক ডাকেন। বিরােধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, গণপিটুনি বিল নিয়ে রাজ্যপালের কাছে আপত্তি জানিয়েছিলাম। দেখা যাক বৈঠকে কী হয়। অন্যদিকে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্যপাল তাে টুইট করতেই থাকেন। বিষয়টা যেন হাস্যকর না হয়ে দাঁড়ায়। তবে রাজ্যপালের তথ্য জানতে যে কাউকে ডাকতে পারেন। আর রাজ্য সরকারের কাছে সবসময় তথ্য থাকে না, সেকথা সাধারণ মানুষও জানে। তবে সেজন্য রাজ্যপালকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকবেন, এমন কথা শুনিনি। তবে আগামী ১৭ জানুয়ারির বৈঠকের দিন তিনি কেরালায় থাকবেন বলে জানান সুজনবাবু। তাই তাঁর পক্ষে ওইদিনের বৈঠকে সম্ভব হবে না। তবে রাজ্যপালের সর্বদলীয় বৈঠককে সমর্থন জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ। তিনি বলেন, বাংলায় যেভাবে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, সেখানে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য যাওয়া উচিত।
এদিকে রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে বিধায়কদের হাজিরা নিয়ে কোনও বাধ্যবাধকতা আছে কিনা সেটা নিয়ে এখনও স্থির করে উঠতে পারেনি তৃণমূল। তাই এখনও এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি তারা। তবে সােমবার রাজ্যপাল তথা আচার্যের ডাকা বৈঠকে উপাচার্যদের উপস্থিত থাকার যে কোনও বৈধ ভিত্তি নেই, সেকথা জানা গিয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ কিছুদিন আগেই আচার্যের ক্ষমতা নিয়ে নতুন বিধি পাশ হয়ে গিয়েছে বিধানসভায়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল, উপাচার্যদের বৈঠকে ডাকতেই পারেন আচার্য তথা রাজ্যপাল। কিন্তু তা ডাকতে হবে উচ্চশিক্ষা দফতরের মাধ্যমে।
সােমবার আচার্য যে বৈঠক ডেকেছিলেন, সেখানে শিক্ষা দফতরকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই কারণেই উপাচার্যরা রাজভবনের বৈঠকে যােগ দেননি বলে ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে। তবে সােমবারের বৈঠকে উপাচার্যরা না আসায় রীতিমতাে ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয়ে আলােচনার জন্যে উপাচার্যদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন আচার্য। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও একজনেরও দেখা মেলেনি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের মধ্যে থেকে বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করা থেকেই রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতন্ত্রে সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত চলছে। এরপর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসমিতি বা পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে তা স্থগিত করা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ঢুকতে না পাওয়া ইত্যাদি ঘটনার আচার্যের সঙ্গে শিক্ষা দফতরের মধ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে। যার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বশাসনের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।