সম্প্রীতির বাংলায় রাম রাহিম চিরকাল এক সঙ্গেই হেঁটেছেন। রোববার ৬ এপ্রিল সম্প্রীতির ছবি উঠে এলো বাংলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও। মালদা থেকে বীরভূম-রাজ্যের নানা প্রান্তে রামনবমীর মিছিলে পুষ্পবৃষ্টি এবং তাতে অংশগ্রহণকারীদের জল ও মিষ্টি বিতরণ করলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। রামনবমীতে অস্ত্র মিছিল যেমন দেখা গেছে তেমনি দেখা গেছে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুরা এক মিছিলে হেঁটেছেন। রামনবমীর দিন খাস কলকাতায় রামনবমীর মিছিলে পর্যন্ত পা মেলালেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। গোলাপি পাগড়ি মাথায় বেঁধে মিছিলের অগ্রভাগে হাঁটলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কিছুদিন আগেই মালদার মোথাবাড়ির অঞ্চলের অশান্তির ছবি চিন্তায় ফেলেছিল গোটা বাংলাকে, সেই আবহেই পালন হয়েছে ঈদ আর রবিবার সারা দেশের মতো বাংলায় সম্প্রীতির সঙ্গে পালিত হলো রামনবমী।
বিশ্বাস সেতুবন্ধন করে, দেওয়াল তুলে দেয় না—বাংলা দেখিয়ে দিল দেশকে, রামনবমী উদ্যাপন হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে। মালদহে ‘আটকোশী আঞ্জুমান আকবারিয়া ইসলামিয়া শহর মুসলিম কমিটি’র পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, রামনবমী উপলক্ষে তারা বিশেষ আয়োজন করছে। সেই মতোই জেলার বিভিন্ন জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে রামনবমীর মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানোর জন্য একাধিক ব্যবস্থা করেছিলেন কমিটির সদস্যরা। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের উপর পুষ্পবৃষ্টি করেন তাঁরা। আকসার হোসেন এবং রিয়াজুল হকেরা বিতরণ করেন মিষ্টি ও জল। এদিন গরমের দাবদাহ থেকে উদ্ধার পেতে রামদের ছায়া হয়েছেন রহিমরা।
বীরভূমেও জেলা পরিষদের সহসভাপতি কাজল শেখ রামমবমীর মিছিলে হেঁটেছেন। সেখানেও এরকমই সম্প্রীতির চিত্র উঠে এসেছে। রামপুরহাটে রামনবমীর মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পানীয় দল ও মুখ মিষ্টির নানা আয়োজন করা হয় সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে। এই দৃশ্যে ভীষণ খুশি হন স্থানীয় বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলাম হিন্দু ভক্তদের মধ্যে চকলেট ও জল বিতরণ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে শোভাযাত্রায় হাঁটেন। তিনি বলেন, ‘বাংলা হল ভালোবাসা আর সাম্প্রদায়িক ঐক্যের ভূমি।’
শিল্পনগরী দুর্গাপুরেও দেখা যায় আবেগঘন মুহূর্ত। সেখানে মুসলিম যুবকেরা রামনবমীর শোভাযাত্রায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাঁরা সরবত বিতরণ করেন, এমনকি ভক্তিমূলক গানে নাচতেও দেখা যায় তাঁদের।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ে রামনবমীর মিছিলে পা মেলালেন শওকত মোল্লা। সব মিলিয়ে রামনবমীর দিন বিভেদ নয়, ঐক্যের বাংলায় সম্প্রীতির বন্ধনকেই গুরুত্ব দিলেন বঙ্গবাসী।