২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প ঘোষণা করে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার আরজি কর বিতর্কের মাঝেই বাংলার আবাস যোজনা প্রকল্পে এগারো লক্ষ পরিবারকে বাড়ি দিতে চলেছে মমতা সরকার। আগামী ডিসেম্বরেই তার প্রথম কিস্তির টাকা দেবে রাজ্য। ২০২৬ সালের আগে নতুন করে আরও একটি মাস্টারস্ট্রোক দিয়ে দিলেন মমতা ও অভিষেক। ফলে এই প্রকল্পে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা আটকে রেখে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়ল কেন্দ্রের মোদী সরকার।
আগেই মমতা ও অভিষেক জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেন্দ্র আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা আটকে রাখলেও মানবিকতার স্বার্থে রাজ্যই সেই টাকা দেবে। অবশেষে সেই কথা রাখল মমতা সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় ১১ লক্ষ পরিবারের প্রত্যেকে পাবে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে। মোট তিন কিস্তিতে এই টাকা দেওয়া হবে। প্রথমে ডিসেম্বরের ২০ তারিখের মধ্যে ৬০ হাজার টাকা দেবে রাজ্য। দ্বিতীয় কিস্তিতে দেবে ৪০ হাজার টাকা। এবং তৃতীয় কিস্তিতে আরও ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
এই ১১ লক্ষ গৃহ নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকারকে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এমনিতেই রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট রয়েছে, তার মধ্যেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আসবে কোথা থেকে? এব্যাপারে সরকার একটি বিশেষ কৌশল নিয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। এই টাকা দুটি আর্থিক বছরে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই হিসেবে অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরের বাজেট থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা এবং আগামী বছরের বাজেট থেকে আরও ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।
এরফলে রাজ্যের প্রায় ৪৪ লক্ষ গরিব মানুষ উপকৃত হবেন। যাদের মাথার ওপর ছাদ নেই, তাঁরা নিশ্চিন্তে মাথা গোঁজার ন্যূনতম আশ্রয় পাবেন। প্রসঙ্গত এবার বন্যার জলে রাজ্যের বহু মানুষের বাড়িতে জল ঢুকে যায়। যাঁদের দোতলা বাড়ি আছে, তাঁরা বাড়ির প্রথম তলা জলমগ্ন হলেও দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নিতে পেরেছেন। আবার যাঁদের ছাদ দেওয়া একতলা বাড়ি আছে, তাঁদের বাড়ির নিচের তলায় জল ঢুকে গেলেও বাড়ির ছাদে ত্রিপল টাঙিয়ে রাত কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু, যাঁদের সেই সম্বলটুকু নেই, তাঁদের চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে। অনেকের কাঁচা বাড়ি ভেঙে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়েছে। দেওয়াল চাপা পড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
এমত অবস্থায় গ্রামের গরিব মানুষের ন্যূনতম মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে একটি ছাদ দেওয়া বাড়ির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ হয়েছে। রাজ্য সরকার সেই প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে ১১ লক্ষ পরিবারের গৃহ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। গ্রামাঞ্চলে এইসব পরিবারের ন্যূনতম একটি পাকা বাড়ি থাকলে, বন্যার জলে রাস্তা বা বাড়ির চারপাশে জল জমলেও তাঁরা ঘরের ভিতর বসবাস যেমন করতে পারবেন, তেমনি কৃষিক্ষেতে উৎপাদিত শস্যও আপৎকালীন অবস্থায় বাড়িতে নিশ্চিন্তে মজুত করে রাখতে পারবেন।
এদিকে, নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার আবাস যোজনায় যাতে কোনওরকম দুর্নীতি না হয়, সেজন্য উপভোক্তা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। যাতে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যর্থ না হয়। পাশাপাশি, দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে আদালতে মামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণে একাধিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। এইসব বিষয়গুলি মাথায় রেখে উপভোক্তা বাছাই করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকায় গৃহ নির্মাণ করলে নিয়ম অনুযায়ী, বাড়ির সামনে একটি ফলক বসাতে হয়। সেই ফলকে লিখতে হয়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আর্থিক আনুকূল্যে এই গৃহ নির্মাণ করা হল। কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু রাজ্য সরকার পুরো টাকাটা দিচ্ছে, সেজন্য উপভোক্তাদের এই বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়তে হবে না। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ‘বাংলা আবাস যোজনা’র নামেই ফলক বসানো যাবে। এমনিতেই লোকসভা ভোটের সময় লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে কুপোকাত হয়ে যায় রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। এবার বিধানসভা ভোটের কয়েকমাস আগে ১১ লক্ষ গৃহ নির্মাণ হলে গেরুয়া শিবির ধরাশায়ী হয়ে যাবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।