কয়েক হাজার প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ রাজ্যের

রাজ্যের মাধ্যমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয়গুলো থেকে পঞ্চম শ্রেণিকে সরিয়ে প্রাথমিক স্কুলে অন্তর্ভুক্তিকরণের নির্দেশ দিল স্কুলশিক্ষা দপ্তর।
আগামী ২০২৫ সালের শিক্ষাবর্ষে ২৩৩৫টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে স্কুলশিক্ষা দপ্তর।
সে ক্ষেত্রে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মোট ২৩৩৫টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে যে সমস্ত স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেই স্কুলগুলোর তালিকাও সমস্ত জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার এই মর্মে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে স্কুলশিক্ষা দপ্তর। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শিশুদের বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন–২০০৯ অনুযায়ী, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২৩৩৫টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্ষদ, কলকাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্ষদ এবং শিলিগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর্ষদকে রাজ্যের এই নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে।
অবশ্য একাংশ শিক্ষকদের বক্তব্য যে, প্রাথমিক স্কুলগুলোতে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংখ্যাও অপ্রতুল। এছাড়াও হাইস্কুলের মতো কোনও প্রাথমিক স্কুলে করণিক এবং গ্রুপ ডি কর্মচারী নেই। ফলে, পঠনপাঠনে সমস্যা তৈরি হবে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘রাজ্যের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তার জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক নেই। এইসব বিদ্যালয়ের কোথাও গ্রুপ-ডি, গ্রুপ-সি কর্মী নেই। এই অবস্থায় শিক্ষার অধিকারের কথা বলা হলেও প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে শিশুরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিকাঠামো-সহ পর্যাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা না-করা হলে, অভিভাবকদের বৃহৎ অংশ তাঁদের সন্তানকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না-রেখে, বেসরকারি বিদ্যালয়ে নিয়ে যাবে। এর ফলে সরকারি শিক্ষা আরও ধ্বংসের দিকে যাবে।’
ওদিকে অল পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি চন্দন গরাই বলেন, ‘দেরিতে হলেও ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ২৩৩৫টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত, তবে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ ও পরিকাঠামো উন্নয়ন না-হলে, পঠনপাঠন সমস্যা বাড়বে। ফলে, জুনিয়র হাইস্কুলের অস্তিত্ব সমস্যায় পড়বে।’
প্রসঙ্গত, জাতীয় শিক্ষা নীতিতে পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিকে যুক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। গোটা দেশেই এই নীতি মেনে প্রাথমিকের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ রাজ্যেও প্রায় ১৭ হাজার প্রাথমিক স্কুলে ২০১৮ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণিকে যুক্ত করার করা শুরু হয়। তবে বাকি প্রাথমিক স্কুলে তা করা হয়নি এখনও। সেই সংখ্যাটা প্রায় ৩৩ হাজার। এবার ধাপে ধাপে এই সংখ্যক প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত করা হবে। তবে, শুধু পঞ্চম শ্রেণির সংযুক্তিকরণই নয়। গোটা রাজ্যে বেহাল প্রাইমারি স্কুলগুলির মেরামতেও উদ্যোগী হতে চলেছে শিক্ষা দপ্তর।