বন্যার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ১০ জেলায় ১০ সচিবকে পাঠাচ্ছে রাজ্য

নিম্নচাপের জেরে টানা ৩ দিন প্রবল বর্ষণ। এরই মধ্যে রাজ্যের নদীগুলোর জলস্তর বেড়ে গিয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। অন্য দিকে, ডিভিসির অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে, বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যের একাধিক জেলায়। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? সে বিষয়ে জানালেন মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে কোথায় কী পরিস্থিতি হয়ে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে জেলায় জেলায় যাবেন সচিবরা। প্লাবন পরিস্থিতির জন্য রাজ্যের ১০ জেলায় ১০ জন সচিবকে পাঠানো হচ্ছে।

এদিন নবান্নে বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের তরফে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে আলপনবাবু বলেন, ‘ডিভিসির মাইথন, পাঞ্চেত জলাধার ও দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে অত্যধিক জল ছাড়ার কারণে নিম্ন দামোদর উপত্যকায় প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই কারণে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রধান সচিব ও সচিব পর্যায়ের ১০ জন সিনিয়র আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমএসএইচএমই-র প্রধান সচিব হাওড়ায় যাচ্ছেন। বীরভূমে যাচ্ছেন প্রধান সচিব হাউসিং, পশ্চিম মেদিনীপুরে যাচ্ছেন প্রধান সচিব পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনীয়রিং, হুগলিতে যাচ্ছেন কৃষি, পূর্ব মেদিনীপুরে যাবেন প্রধান সচিব খাদ্য, ঝাড়গ্রামে যাচ্ছেন পরিবহন সচিব, বাঁকুড়ায় শ্রম সচিব, পুরুলিয়ায় শিল্প দফতরের অন্তর্গত সচিব, পশ্চিম বর্ধমানে ব্যাকওয়ার্ল্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার বিভাগের সচিব ও পূর্ব বর্ধমানে যাচ্ছেন পঞ্চায়েত সচিব।’


আলপনবাবু বলেন, ‘ রাজ্যের সকল বিশেষত, নিম্ন বঙ্গের অধিবাসীদের সতর্ক থাকার, প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অনুরোধ রাখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, সিনিয়র অফিসারেরা সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’ উল্লেখ্য, নিম্নচাপ ও টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে নদীগুলিতে জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। ওদিকে ডিভিসি থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে, হাওড়ার উদয়নারায়নপুর, আমতায় বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আজ বুধবার এই জল এসে পৌঁছবে আমতায়। ওদিকে হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ায় বানভাসি গ্রামগুলি।

সূত্রের খবর, আজ সকালে ডিভিসি থেকে প্রায় দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এমনকী, বাংলার ঝাড়খন্ড সীমান্তে পাঞ্চেত এবং মাইথন থেকেও জল ছাড়া শুরু করেছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, দামোদর নদে জলস্তর বাড়ায়, এবার জল ছাড়া শুরু করেছে দুর্গাপুর ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ জল ছেড়েছেন ২১ হাজার ২০০ কিউসেক। ফলে, কুরচি শিবপুর, কানুপাট মনসুকা এবং সিংটি শিবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কমপক্ষে ১৬টি গ্রাম জলের তোড়ে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও এই জল ছাড়ার কারণে চিন্তার কোনও কারণ নেই বলেই জানাচ্ছে প্রশাসন। তবে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়লে, আশঙ্কা করা হচ্ছে দামোদর তীরবর্তী উপকূল এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

ওদিকে এই বন্যা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আলাপনবাবু জানিয়েছেন, বীরভূম, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও পশ্চিম বর্ধমানের জেলাগুলোর একাংশ বন্যায় প্রভাবিত হতে পারে। তার আগাম ব্যবস্থা হিসেবে ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

যার নম্বর ০৩২২২-২৭৫৮৯৪, ৮৩৪৮৩৩৮৩৯৩। মেদিনীপুর সদর মহকুমার কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০৩২২২-২৭৫৩৩০, খড়্গপুর মহকুমার কন্ট্রোল রুম নম্বর ০৩২২২-২২৫৩৪৫, ঘাটাল মহকুমার কন্ট্রোল রুম নম্বর ০৩২২৫-২৫৫০৪৫,২৫৫১৪৫।

এছাড়াও বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে ৪৬ হাজারেরও বেশি তারপোলিন বণ্টন করা হয়েছে। এছাড়াও দেড় লক্ষ তারপোলিন বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রভাবিত জেলাগুলোতে ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে ৭ হাজার ৯৫২ জনকে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন টানা বর্ষণের ফলে দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নচাপের মেঘ সরলেও বিপর্যস্ত বিনপুর ও লালগড় থানা এলাকার বাসিন্দারা। জলমগ্ন নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্ৰাম, অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টির জেরে বেশ কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরেছে, পুজোর মুখে নষ্ট হচ্ছে সবজি থেকে ফসল।