পশ্চিমবঙ্গে গত এক বছরে স্কুলছুটের সংখ্যা শূন্য। কেন্দ্রের শিক্ষা মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে গত এক বছরে কোনও পড়ুয়া স্কুলছুট হয়নি। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পড়ুয়া মাঝপথে স্কুল ছাড়েনি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও এই পরিসংখ্যান অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও করা হয়। প্রাথমিকের ক্ষেত্রে হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি, চণ্ডীগড়, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে স্কুলছুটের সংখ্যা শূন্য। উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রে এই শিক্ষাবর্ষে স্কুলছুটের হার শূন্য তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরলে।
বাংলায় স্কুলছুটের হার শূন্য হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি রাজ্যের শিক্ষাবিদরা। এই পরিসংখ্যান বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় যা যা পদক্ষেপ করা হয়েছে তা বজায় রাখতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। ‘কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর তরফেও প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষক – শিক্ষিকারা। তাঁরা জানান, প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক পর্যন্ত স্কুলছুটের হার শূন্য হওয়ার এই পরিসংখ্যান খুবই আশাব্যঞ্জক। এটা ধরে রাখা প্রয়োজন। বিভিন্ন সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষক -শিক্ষিকারাও এই খবরে উৎসাহ প্রকাশ করেন। তাঁদের মতে, এই পরিসংখ্যান সরকারি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ফল। স্কুলছুট না হওয়ার অন্যতম কারণ মিড ডে মিল। তাঁদের মতে, এই পরিসংখ্যানই প্রমান করে যে, স্কুলগুলিতে মিড ডে মিল যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে।
পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুট রয়েছে মাধ্যমিক স্তরে। কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নবম ও দশম শ্রেণির স্কুলছুটের সংখ্যা ১৭.৮৫ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগের বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে এসে কেন পড়ুয়ারা স্কুল ছাড়ছে তা আরও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে বলে মনে করছে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর । জানা গিয়েছে, রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর ইতিমধ্যে একটি সমীক্ষা শুরু করেছে যেখানে দেখা হবে স্কুল প্রতি পড়ুয়া ও শিক্ষক কত রয়েছে। অনুপাতে সামঞ্জস্য রাখতে একই এলাকার অল্পসংখ্যক পড়ুয়া ও শিক্ষক থাকা স্কুলগুলিকে অন্য স্কুলের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
কেন্দ্রের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে স্কুলছুট পড়ুয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বিহারে,৮.৯ শতাংশ। রাজস্থানে প্রাথমিক স্তরে স্কুলছুটের পরিসংখ্যান ৭.৬ শতাংশ, মেঘালয়ে ৭.৫ শতাংশ, অসমে ৬.২ শতাংশ, অরুণাচল প্রদেশে ৫.৪ শতাংশ।
উচ্চ প্রাথমিকে স্কুলছুটের হার সবচেয়ে বেশি বিহারে, প্রায় ২৫.৯ শতাংশ। মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুটের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বিহারে ,২৫.৬৩। কেন্দ্র বিহারকে লাল তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর পরেই রয়েছে অসম, ২৫.০৭ শতাংশ। কর্নাটকে ২২.০৯, মেঘালয়ে ২২ শতাংশ। গুজরাতে ২১.০২, লাদাখ ১৯.৮৪, অরুণাচল প্রদেশ ১৯.২৯, সিকিম ১৯.০৫, মধ্যপ্রদেশ ১৭.৬৯, ছত্তিশগড় ১৬.২৯, মণিপুর ১৫.৩০ এবং ঝাড়খণ্ড ১৫.১৬ শতাংশ।
মেঘালয়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির মধ্যে গত শিক্ষাবর্ষে ১২.৪ শতাংশ পড়ুয়া স্কুলছুট হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে মধ্যপ্রদেশ , রাজস্থান , ঝাড়খণ্ড , অসম , অরুণাচল প্রদেশ , নাগাল্যান্ড এবং মিজ়োরাম।
পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে একই এলাকার দুটি স্কুলকে মিলিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু সমস্যার কথাও উঠে এসেছে। সেক্ষেত্রে স্কুল বিল্ডিংয়ের সমস্যা , স্কুলের গ্ৰুপ ডি কর্মীদের বিষয়ে কী ভাবে পদক্ষেপ করা হবে, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, দপ্তরের সমীক্ষার রিপোর্ট হাতে এলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।