ভোট বাক্সে প্রভাব ফেলতে রাজনৈতিক নেতাদের মতুয়া তোষণ সকলেরই জানা। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা ভোটের পূর্বে তাঁদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের মতুয়া ঘনিষ্ঠ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও হয়েছে রাজনৈতিক মেরুকরণ। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা তৃণমূল ও বিজেপিতে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারেও ঠাকুরনগরের মতুয়া মেলাতেও রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। ভিড় করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরাও।
মতুয়াদের এই ধর্ম মোহামেলায় প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন তৃণমূল ও বিজেপির নেতা ও মন্ত্রীরা। গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। কে কত মতুয়া ঘনিষ্ঠ, তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে এই মেলাতেই। ইতিমধ্যে সেই বিতর্কে জড়িয়েছেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার। তিনি বুধবার অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুরের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতেই ব্যাপক রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। আবার অসীমবাবুর হয়ে সাফাই গেয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অসীম বাবুকে পাশে বসিয়ে শুভেন্দু বলেন, উনি তো ঠাকুরবাড়ির মা। সেজন্য অসীমবাবু ঠিক কাজই করেছেন।
বুধবার ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক। পরের দিন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামীও গিয়েছেন। তৃণমূল নেতারা প্রথামাফিক মন্দিরে প্রণাম সেরে ফিরলেও বিজেপি নেতাদের আনাগোনা যেন চোখে পড়ার মতো। এদিন সকালে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলের জনা পনেরো বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুরনগরে পৌঁছন। সেখানে হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে প্রণাম সারেন। এরপর দেখা করেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে। মতুয়াদের মন জয় করতে তিনি আশ্বাস বাণীও শোনান।
শুভেন্দু এদিন বলেন, ‘পাঁচ বারের বেশি মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসেছি। তবে এমন পুণ্যদিনে এই প্রথম এলাম। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ঠাকুরবাড়ির সব সদস্যকে আমার প্রণাম। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করলাম, বাংলাদেশের মতুয়া হিন্দুরা ভাল থাকুক। তাড়াতাড়ি চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুর মুক্তি দাও। জেহাদিদের হাত থেকে ঠাকুর আমাদের মুক্তি দিন।’
অন্যদিকে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে মতুয়া ভক্তদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ অন্যান্য নেতা-মন্ত্রীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তায় লিখেছেন,‘জয় হরিবোল, জয় হরিচাঁদ, জয় গুরুচাঁদ। শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিবস উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র বিশ্বের সাধু, গোঁসাই, পাগল, দলপতি, মতুয়াভক্তবৃন্দ নির্বিশেষে সকলকে জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম, শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লেখেন, ‘সেবা ও আধ্যাত্মিকতার উপরে জোর দেওয়ার জন্য তিনি অগণিত মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগর এবং বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে (হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান) ভ্রমণ আমি কখনও ভুলব না। আমাদের সরকার মতুয়া সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এভাবে আগামী দিনেও তাঁদের কল্যাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাব।’
জানা গিয়েছে, গত বুধবার রাতেই প্রতি বছরের মতো এবারেও ঠাকুরনগরে মতুয়া মেলা শুরু হয়েছে। ট্রেনে বাসে বাড়ছে ঠাকুরনগরগামী মতুয়া ভক্তদের ভিড়। বিশেষ করে রাতের আপ বনগাঁ লোকালে ভিড় থিকথিক করছে। স্টেশনে স্টেশনে মতুয়াদের ডাঙ্গি পেটানোর গুরুগম্ভীর আওয়াজে অনেক যাত্রী তাল মেলাতে শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু বছর ঘুরতেই বিধানসভা ভোট। এই ভোট যত কাছে আসবে, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে কাছে টানার খেলায় নেমে পড়বেন শাসক ও বিরোধী জোটের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। মতুয়া মেলাতেই তার প্রতিফলন স্পষ্ট।