‘আন্দোলন চলবে’! গণকনভেনশন থেকে দাবি জুনিয়র চিকিৎসকদের

৯ আগস্ট ঘটে যায় আরজি করের মর্মান্তিক ঘটনা। কর্মরত অবস্থায় রাতের অন্ধকারে ট্রেনি চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই নিয়েই উত্তাল হয় গোটা দেশ। চলে বিক্ষোভ, আন্দোলন। এখনও আন্দোলন অব্যাহত। নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে এবং ১০ দফা দাবিকে সামনে রেখে টানা ১৭ দিন ধরে জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ ‘আমরণ অনশন’-এ বসেন। পরে নবান্নে ১৭ দিনের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেখানে দুপক্ষের মধ্যে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ চললেও, বৈঠক শেষে অনশনমঞ্চে ফিরে পড়ুয়া চিকিৎসকরা অনশন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেন। এমনকি গত মঙ্গলবার ডাক দেওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য ধর্মঘটের, তাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে আন্দোলন থেকে তারা পিছপা হচ্ছেন না বলে সেদিন জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই দিনই আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবি চেয়ে ডাক দেওয়া হয় গণকনভেনশনের। সেখান থেকেই আবারও ‘আন্দোলনরত’ জুনিয়র চিকিৎসকরা স্পষ্ট করলেন, আন্দোলন চলবে। যতদিন না পর্যন্ত নির্যাতিতা সুবিচার পাবে, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন আব্যাহত থাকবে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট।

গণকনভেনশন থেকে এদিন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ অনিকেত মাহাতো প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন এখনও অবধি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তদন্তে অগ্রগতি আনছে না? কেন সিবিআই তাদের চার্জশিটে শুধুমাত্র সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের নাম পেশ করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করছে?’ পাশাপাশি, এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘একজন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে বাঁচানোর জন্য রাজ্য প্রশাসন কেন উঠেপড়ে লেগেছে? এর পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে, কেন এমন নারকীয় ঘটনা ঘটল তা জানতে চাই।’

উল্লেখ্য, নির্যাতিতাকে ধর্ষণের ঘটনায় একা সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় দোষী নয়। ঘটনার পিছনে আরও অনেকে জড়িয়ে আছে বলে ঘটনার প্রথমদিন থেকেই দাবি করে এসেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের সদ্যসরা।


এদিন জুনিয়র চিকিৎসকদের নেতা অনিকেত গণকনভেনশনে উপস্থিত দর্শকদের মনে করিয়ে দেন, ‘আমরা একসঙ্গে এতটা পথ হেঁটেছি। আজ এখানে সবার মতামত খুব জরুরি। সবার কথা শুনতেই এখানে এসেছি।’

পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের উপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস রাখি, শীর্ষ আদালত এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করবে, এবং শীঘ্রই আমরা সুবিচার পাব। কিন্তু শুনতে পাচ্ছি, সুপ্রিম কোর্টে নির্যাতিতার বিচারের আলোচনার চেয়ে আমাদের আন্দোলন নিয়ে আলোচনা চলছে বেশি। নির্যাতিতার সুবিচারের দাবি পিছনে থেকে যাচ্ছে।’

আরও এক পড়ুয়া চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘চার বছরের বেশি সময় ধরে আরজি করে অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গণতান্ত্রিক কোনও পরিবেশ ছিল না। আজকের অনুষ্ঠানে যে সমস্ত প্রাক্তনীরা এসেছেন, সবাই এটা জানেন। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। আমরা সুবিচারের দাবিতে যা করার, সবটাই করব।‘

উল্লেখ্য, এদিন কল্যাণী মেডিক্যালেও ডাক দেওয়া হয় গণকনভেনশনের। প্রথমে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাতে অনুমতি দেওয়া হলেও, পরে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র কথা বলে বাতিল করে দেওয়া হয় গণকনভেনশন। কারণ, দুর্যোগের মধ্যে কনভেনশন হলে অডিটোরিয়ামে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে দাবি করা হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।

গণকনভেনশনে জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার অভিযোগ তোলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বৈঠকের দিন অভিযোগ তোলেন, আন্দোলন আব্যাহত রেখে আমরা বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবে বাঁধা দিয়েছি। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আমরা উৎসবে কোনওভাবেই বাধা দিইনি। আমরা শুধু বলেছি, প্রতিবাদের ভাষা ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের কাছে উৎসব। আমরা উৎসবের মঞ্চ হিসাবে ধর্মতলাকেই বেছে নিয়েছিলাম। তাই সুবিচারের দাবি থেকে নজর সরানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’