উদ্বাস্তুদের পায়ের তলার মাটি আর মাথার ওপরে ছাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রায় দু লক্ষ উদ্বাস্তুকে জমির দলিল বিলি করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বাস্তুদের উদ্দেশে বলেন, অনেক সংগ্রাম, অনেক কঠিন সময় পেরিয়ে আপ্পারা ঠিকানা খুঁজে পেলেন। এদিন মতুয়াদেরও জমির পাট্টা দেওয়ার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ এনে টুইট করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সেই টুইটে মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে শুভেন্দু প্রশ্ন তুলেছেন পুরভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশ হওয়ার পরেও এরকম সুবিধে প্রদানের অনুষ্ঠান কীভাবে হয়?
প্রসঙ্গত উদ্বাস্তুদের জমির দলিল দেওয়ার কাজ ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরই করে থাকে।
এই দলিল বিলির কাজ মসৃণ করতে ভূমি সংস্কার দফতরের কাজের গাফিলতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা বলেন, কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার নয়, নিয়ম মেনে কাজ করবেন।
প্রসঙ্গত গত বছরই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাজে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নভেম্বর মাসে হাড়া জেলায় শিল্প বিনিয়োগের জন্য জমির প্রয়োজন।
কিন্তু সেই সংক্রান্ত কাজ থমকে থাকায় বৃহস্পতিবারও প্রকাশ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের তিরস্কার করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বলেন, জেলা ভূমি দফতরের কর্তারা দেরিতে কাজ করছেন কার নির্দেশে কাজ বন্ধ করেছেন তাঁরা?
উদ্বাস্তু মানুষজন যাতে ঠিকমতো দলিল পান, সেজনা তৎপর হতে নির্দেশ দেন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকদের। কড়া বার্তা দিয়ে বলেন কাউকে ফেরাবেন না, সবার কাজ করে দেবেন।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, ২৬১ টি উদ্বাস্তু কলোনীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এরপর তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, বস্তিবাসীদের জমি দখল করা যাবে না কোনও কলোনী থেকে উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদ করা যাবে না।
এমনকী রেলসহ কেন্দ্রীয় সরকার এমনকী বেসরকারি সংস্থার জমিতেও যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও উচ্ছেদ করা যাবে না মমতার কথায়, বাংলার সব উদ্বাস্তুরাই নিজের জমি ও ঘর পাবেন।
সরকার সব কলোনিকেই আইনি বলে ঘোষণা করেছে। ধীরে ধীরে সবাই জমির দলিল হাতে পেয়ে যাবেন।
অতীতে সাংসদ হিসেবে উদ্বাস্তুদের স্বার্থে তাঁর লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে মমতা বার্তা দেন, তিনি কলোনীর মানুষের পাশে ছিলেন, থাকবেনও। এদিন মতুয়াদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বিজেপিকেও খোঁচা দেন।
তিনি বলেন, মতুয়াদের নিয়ে কেউ কেউ রাজনীতি করে। নাম না করে মমতা বলেন, ওরা শুধু রাজনীতিই করবে। সমস্যার সমাধান করবে না।
বঙ্গ বিজেপিতে শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে মতুয়াদের বিদ্রোহকে কৌশলে কাজে লাগিয়েই এদিন মতুয়াদেরও জমির পাট্টা দেওয়ার কথা জানিয়ে দিলেন মমতা।
অন্যদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন উত্তরপ্রদেশের মতো টাকা বাংলা পায় না বিজেপি শাসিত রাজ্য টাকা পায়।
উত্তরপ্রদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি উদ্বাস্তু মানুষকে নিঃশর্ত দলিল দেওয়ার কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন মমতা।