কলকাতা, ২৩ মার্চ: গার্ডেনরিচের নির্মীয়মাণ বাড়ি ভেঙে ১১ জনের মৃত্যু। তোলপাড় রাজ্য। নানা প্রশ্নের মুখে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা। পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম আগেই বলেন, বহু চেষ্টা করেও বেআইনি বাড়ি নির্মাণ আটকাতে ব্যর্থ পুরসভা। এবার সেই অবস্থান থেকে সরে এসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছেন মেয়র। ঘটনার বিস্তারিত খবরাখবর নিতে তিনি ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করলেন। এই কমিটির কাজ হবে, গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া বাড়ি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আটটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। মেয়রের নির্দেশে পুর কমিশনার ধবল জৈন এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে কলকাতা যুগ্ম কমিশনার জ্যোতির্ময় তাঁতিকে। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ, জঞ্জাল সাফাই এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আধিকারিকরা এই কমিটিতে রয়েছেন। এছাড়া কলকাতা পুলিস, বিএলআরও এবং পুরসভার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল মুগ্ধা চক্রবর্তীকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
সাত সদস্যের এই তদন্ত কমিটি যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজবে সেগুলি হল প্রথমত জমির মালিকানা কার? কী ধরনের জমি? জমিতে কোনও বদল আনা হয়েছে কি না অর্থাৎ জমির চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে কি না।
দ্বিতীয়ত বাড়িটির প্ল্যান বৈধ কি না। তাতে কোনও অনুমোদন ছিল কি না। অনুমোদন দেওয়া হলে কারা দিয়েছে? বাড়ি তৈরির আগে মাটি পরীক্ষার যে রিপোর্ট দিতে হয়, সেই রিপোর্ট আছে কি না! কারা ওই বাড়ি নির্মাণ করছিল? ইঞ্জিনিয়ার কে ছিলেন? কর্মী কারা ছিলেন? পশ্চিমবঙ্গ সরকার, অগ্নি নির্বাপণ বিভাগের অনুমোদন ছিল কি না! সিইএসসি-র কাছে বিদ্যুতের সংযোগের কোনও আবেদন করা হয়েছিল কি না! নির্মাণ কাঠামো কতটা মজবুত তার রিপোর্ট যথাস্থানে দেওয়া হয়েছিল কি না।
তৃতীয়ত বাড়িটির নির্মাণ কাজে কী ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছিল এবং কি অনুপাতে মেশানো হয়েছিল? চতুর্থত বাড়িটি ভেঙে পড়ার প্রকৃত কারণটি কী? পঞ্চমত কতটা ক্ষতি হয়েছে? (সম্পত্তির ক্ষতি এবং জীবনের ক্ষতি— দু’টি বিষয়েই জানতে হবে।)
ষষ্ঠত এই ঘটনায় সরকারি আধিকারিকদের জড়িত থাকার বা গাফিলতির যে অভিযোগ উঠছে, তা সত্যি কিনা! সপ্তমত গার্ডেনরিচের ওই বহুতলের ফ্ল্যাট কি নির্মাণ চলাকালীন বিক্রি করা হয়? নাকি তৈরি হওয়ার আগেই বিলিবণ্টন হয়ে গিয়েছিল?
ঘটনাস্থলে গিয়ে এই সমস্ত প্রশ্নের বাইরে অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে কিনা তা সংগ্রহ করা। এছাড়াও এই সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ে তদন্ত করবে কমিটি। আগামী সাত দিনের মধ্যেই কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার প্রত্যাশিত তারিখ আগামী ২৯ মার্চ।