মোল্লা জসিমউদ্দিন: মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে উঠে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বিষয়ক মামলা। এদিন ‘ভুয়ো’ শিক্ষকদের বেতন বাবদ যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে সেইসমস্ত তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে চাইল আদলত। পরবর্তী শুনানির আগে রাজ্যকে এই তথ্য জমা দিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টে।অভিযোগ, ভুয়ো নথির ভিত্তিতে স্কুলে চাকরি পেয়েছেন বেশ কয়েকজন । এরপর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চে দায়ের হয় মামলা। আর সেই সময় বিচারপতির নির্দেশে এই ঘটনা নিয়ে সিআইডি তদন্ত শুরু করে। সেই তদন্ত চলাকালীন সময় সামনে আসে পাঁচ জন ভুয়ো শিক্ষকের নাম। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল,’ ওই ভুয়ো শিক্ষকদের বেতন রাজ্যের কোষাগার থেকে দেওয়া হয়েছে। সেইজন্য রাজ্যসরকারের কাছে সেই টাকা শিক্ষকদের ফেরত পাঠাতে হবে।’
উল্লেখ্য, এই ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগের জন্য এসএসসি পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। তিনি এখন রয়েছেন জেল হেফাজতে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোন বিচারবিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বলেন, ‘ আদালত বলার পর কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জেল থেকে মুক্তি পেলে ওনাকে কী আপনারা এসএসসির চেয়ারম্যান করতে চাইছেন?’ আগামী ১২ অগস্ট পরবর্তী শুনানিতে এসএসসিকে এই নিয়ে জবাব দিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টে।রাজ্যের ‘ভুয়ো’ শিক্ষকদের বেতন বাবদ যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের জন্য কী পদক্ষেপ করেছে সরকার? জানতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট।
এই সংক্রান্ত রিপোর্ট রাজ্যের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনে ‘দুর্নীতি’র এই মামলায় রাজ্যের থেকে রিপোর্ট চেয়েছে হাই কোর্ট। পরবর্তী শুনানির দিন ওই রিপোর্ট রাজ্যকে জমা দিতে হবে আদালতে।মুর্শিদাবাদের সুতির গোথা এ রহমান হাই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে মামলা হয়েছিল হাইকোর্টে। সেই মামলাতেই বেশ কয়েক জন ভুয়ো শিক্ষক ধরা পড়েছিলেন। অভিযোগ, তাঁরা নথি জাল করে চাকরি পেয়েছেন। ওই ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। মামলাটির তদন্তে রাজ্যের আরও পাঁচ ভুয়ো শিক্ষকের নাম উঠে আসে। তাঁরাও নথি জাল করে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। বিচারপতি বসু জানান, ওই শিক্ষকদের বেতন সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা ফেরত নিতে হবে রাজ্যকে।গোথা এ রহমান স্কুলের এই মামলায় এসএসসি পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যানকে। ওই স্কুলটিতে চাকরি পেয়েছিলেন প্রধান শিক্ষকের পুত্র। সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।
তথ্য জানার অধিকার আইনে এই নিয়োগ নিয়ে তথ্য জানতে চান অনেকে। হাইকোর্টে দায়ের হয় মামলা। জানা যায়, অনিমেষ ওই স্কুলে দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি করলেও জেলার স্কুল পরিদর্শকের কাছে তাঁর নামে কোনও নিয়োগপত্রই নেই। অর্থাৎ, তিনি অবৈধ ভাবে চাকরি পেয়েছেন।তদন্তে জানা যায়, নবম-দশম শ্রেণির এক ভুগোল শিক্ষকের নিয়োগপত্র এবং সুপারিশপত্র জাল করেই এই চাকরি পেয়েছেন অনিমেষ। প্রশ্ন ওঠে, যদি ওই শিক্ষকের নিয়োগপত্র জাল করে অনিমেষ চাকরি পেয়ে থাকেন তবে যোগ্য ব্যক্তির কী হল? তিনি কি চাকরি করছেন না? দেখা যায়, তিনিও বহাল তবিয়তে চাকরিরত মুর্শিদাবাদেরই বেলডাঙার একটি স্কুলে। সাধারণত প্রত্যেক নিয়োগপত্রের একটি মেমো নম্বর থাকে। অনিমেষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সেই মেমো নম্বর এক রেখে নিজের নাম বদলে দেন নিয়োগপত্রে। সেই জাল মেমো নম্বরের নিয়োগপত্রেই ভুগোল শিক্ষক হিসাবে চাকরি পান গোথা এ রহমান স্কুলে। যদিও আরটিআইয়ের মাধ্যমে স্কুলের কাছে অনিমেষের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হলে প্রধান শিক্ষক অর্থাৎ অনিমেষের বাবা জানিয়ে দেন, -‘অনিমেষ সেখানে কর্মশিক্ষার শিক্ষক’।আগামী ১২ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।