বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ ডি পদে কর্মী নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ নিয়ে মামলার শুনানি চলে। এদিন এসএসসি সচিবকে তীব্র ভৎসনা করে থাকে কলকাতা হাইকোর্ট।
অবিলম্বে ২৫ জন ‘ভুয়ো’ চাকরিজীবীর বেতন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। এই ভুয়ো চাকরিজীবিদের কর্মস্থলের সংশ্লিষ্ট জেলার ডিআইকে এই নির্দেশ কার্যকর করার কথা বলেছে আদালত। স্কুল সার্ভিস কমিশনকে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে হলফনামা জমারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতির।
আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে। গত ২০১৬ সালে গ্রুপ ডি কর্মী হিসাবে প্রায় ১৩ হাজার নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে রাজ্য সরকার। ধাপে ধাপে পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ নেয় সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন।
এরপর প্যানেল গঠন করা হয়। ২০১৯ সালে এই প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয় বলে জানা গেছে। অভিযোগ, প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রচুর নিয়োগ করেছে কমিশন কর্তৃপক্ষ। ২৫ জনের নিয়োগের সুপারিশ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে সম্প্রতি মামলা করা হয় হাইকোর্টে।
এরপরই ওই ২৫ জনের নিয়োগের সুপারিশের নথি-সহ কমিশনের সচিবকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে প্রয়োজনে সিবিআইকে দিয়ে এই তদস্ত করানো হবে বলেও জানিয়েছিলেন বিচারপতি।
বুধবার এসএসসি সচিব হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন। এসএসসির আলতকে জানায়, ‘নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ওই ২৫ জন চাকরি পান’। কিভাবে চাকরি পেলেন তাঁরা, সে সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলে কলকাতা হাইকোর্ট। নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র চাওয়া হয়। তবে উপযুক্ত নথিপত্র পেশ করা সম্ভব হয়নি।
এই কারণে এসএসসি সচিবকে তীব্র ভর্ৎসনা করে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি আদালতে শুনানির সময় বলেন, সহিত সিআইএসএফ দিয়ে অফিস তল্লাশি করাব? নিয়োগে দুর্নীতি কোনওভাবেই বরদাস্ত নয়।
এরপর বুধবার দুপুর তিনটের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে ওই ২৫ জনের নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তবে দুপুর তিনটের পর দাখিল হওয়া তথ্যে বিস্ময় প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট। ওই ২৫ জন ‘ভুয়ো’ চাকরিরতের বেতন বন্ধের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
‘ভুয়ো’ চাকরিজীবীকে মামলার পক্ষভুক্ত করারও নির্দেশ দেন বিচারপতি। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টোয় ফের মামলার শুনানি রয়েছে। সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনকে গ্রুপ ডি নিয়োগের মামলায় তীব্র ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট।
এদিন আদালতে কমিশন গ্রুপ ডি নিয়োগের কোনও রেকমেন্ডেশন লেটার দেখাতে পারেনি। কলকাতা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে শুনানির সময় বলেন, ‘এখানে দালাল চক্র চলছে। যাঁরা নিযুক্ত হয়েছেন, কাজ করে চলেছেন, তাঁদের কাছ থেকে জানতে হবে কোন দালালকে তাঁরা কত টাকা দিয়েছে।
এই মামলা চলাকালীন নিযুক্ত কর্মীদের বেতন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। পুনরায় নির্দেশ না পাওয়া তাঁরা কেউ বেতন পাবেন না এদিন কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, ‘২৫ জনের নাম ও ঠিকানার তালিকা বৃহস্পতিবারের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে। যাতে তারাও এই মামলায় অংশ নিতে পারে।
গ্রুপ ডি-র এই নিয়োগ দুর্নীতির দায় সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন বা রাজ্য সরকার, কেউই নিতে চায়নি। উভয় তরফেই নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল সার্ভিস কমিশন কেন রেকমেন্ডেশন লেটার ইস্যু করেনি সেই বিষয়ে বৃহস্পতিবার তাদের হলফনামা জমা করতেও বলা হয়েছে।
গ্রুপ ডি তে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিকাশ বাবু জানিয়েছেন ‘পাঁচশোর উপর এমন নিয়োগ হয়েছে যার রেকমেন্ডেশন লেটার নেই। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে’।