রাস্তায় বাস না নামালে আইনি ব্যবস্থা, বেসরকারি বাস নিয়ে চালাবে সরকার, হুঁশিয়ারি মমতার

প্রতিকি ছবি (File Photo: iStock)

রাস্তায় বেসরকারি বাস নামানো নিয়ে টালবাহানায় এবার কঠোর পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। বুধবার থেকে বেসরকারি বাস না চালালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে বেসরকারি বাস নিজেরা নিয়ে নেবে রাজ্য সরকার। চালক দিয়ে সেই বাসই চালানো হবে। সেক্ষেত্রে বেসরকারি বাসের চালক রাজি থাকলে তাঁকেই বেতন দেওয়া হবে। তা না হলে সরকারি বাসচালকই সেই বেসরকারি বাসগুলি চালাবে।

মঙ্গলবার আনলক ২ পর্যায়ের সূচনা পর্বে নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মানুষের সুবিধে অসুবিধের কথা চিন্তা করেই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে রাজ্য সরকার। আশা করি আমাদের ভুল বুঝবেন না। তিনি জানান, বুধবার পয়লা জুলাই থেকেই তিন মাসের জন্য ছয় হাজার বাসপিছু পনেরো হাজার টাকা ভর্তুকি বাস মালিকদের দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার।

এই করোনা পরিস্থিতি ভাড়াবৃদ্ধি না করে বাস চালানোর জন্য বাস মালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে একাধিকবার মিটিং হয়েছে। রাজ্য সরকারে পক্ষ থেকে ভর্তুকির কথাও বলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা কথা রাখেননি। তাই পয়লা জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হল। আশা করি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।


কাল থেকে ছয় হাজার বাস রাস্তায় নামাবেন। না হলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। দু-তিন দিন আমরা দেখে নিচ্ছি। এর মধ্যে রাস্তায় বাস না নামালে অতিমারী আইন প্রয়োগ করা হবে। যাতে সেই আইন প্রয়োগ করতে না হয়, সেটাই দেখুন। কেউ কেউ এই বিষয়ে রাজনৈতিক প্ররোচনা দিচ্ছে। কিন্তু এই সময়টা প্ররোচনা দেওয়ার নয়।

ক্রমাগত ডিজেলের দাম বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রকে এদিন তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেত্রী। পাশাপাশি বাসমালিকদের উদ্দেশে একথাও বলেছেন, যখন পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়ছে তখন যদি ভাড়া বাড়াতে হয়, তাহলে এগুলির দাম কমলে তখন তো ভাড়া কমানোও উচিত। কিন্তু তা কি কখনও হয়েছে। বাসভাড়া কখনই কমেনি।

এদিন মমতা ফের বেসরকারি বাস মালিকদের উদ্দেশে বলেন, এটা বার্গেনিং করার সময় নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়। কিন্তু সেটা যদি না করেন, তাহলে সরকারকে আইনি ব্যবস্থা নিতেই হবে। সেই সঙ্গে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের জন্য মেট্রো চালানোর জন্য আর্জি জানিয়ে রেলকে চিঠি পাঠানো হল রাজ্যের তরফে। সেই চিঠিতে শহরের পরিবহণ ব্যবস্থার একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

কলকাতা মেট্রোতে গড়ে ছয় থেকে সাত লক্ষ মানুষ যাতায়াত করে। শহুরে মানুষের যাতায়াতের অনেকটাই মেট্রোর ওপর নির্ভরশীল। গণপরিবহণের চাপ সামলাতে রাজ্য সরকার রাস্তায় প্রায় ১৫০০ সরকারি বাস নামিয়েছে। কিন্তু কলকাতায় প্রায় ২৫০০ বেসরকারি বাস কম চলছে। রাজ্য সরকারি অফিসে উপস্থিতির হার ৩৩ শতাংশ কমানো হয়েছে। একদিন ছাড়া অফিসে আসার রীতি লাগু হয়েছে।

তা সত্ত্বেও শহরের রাস্তায় বেরনো মানুষ গণপরিবহণের অপ্রতুল ব্যবস্থায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থায় পুলিশ, স্বাস্থ্য, পুরসভা, বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী তথা জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের জন্য মেট্রো চালু করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লাকে দেওয়া চিঠিতে।

মমতা এদিন এই জরুরি পরিষেবার মানুষরা মেট্রোতে যাতায়াত করতে পারলে, বাকিদের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে। এছাড়া বিমান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করতে মঙ্গলবার সিভিল অ্যাভিয়েশন এবং স্বরাষ্ট্রদফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের আবেদন, আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকুক। আন্তঃরাজ্য বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে আগামী দু সপ্তাহ বিমান না চালানোর জন্য বলা হয়েছে আর হটস্পট নয়, এমন রাজ্য থেকে সপ্তাহে একদিন করে বিমান অবতরণ করুক রাজ্যে এমনটাই চায় সরকার।

অন্যদিকে মমতার ঘোষণা আনলক ২ পর্যায়ে ভারত-বাংলাদেষ সীমান্ত বাণিজ্যে ছাড় দেওয়া হল। তাই আজ থেকেই কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্তে ভারত বাংলাদেশের বাণিজ্য করিডর খুলে দেওয়া হল। তবে কন্টেইনমেন্ট এলাকা এবং হটস্পটে লকডাউন কঠোরভাবে পালন করা হবে।

প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে আনলক ২ পর্যায়ের সূচনালগ্নে মমতা জানিয়ে দেন, লকডাউন এবং মানুষের জীবনযাত্রার স্বাভাবিকতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাতঃভ্রমণের সয়মসীমা সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে আটটা করা হল। শুধু প্রাতঃভ্রমণই নয়, বিয়েবাড়ি এবং শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিতির সংখ্যা পচিশ থেকে বাড়িয়ে পঞ্চাশ জন পর্যন্ত করার কথা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।