শতাধিক পুরসভার ভোটকে ঘিরে চাপানউতোর অব্যাহত। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি চাইছে এই ভোট যাতে পিছিয়ে যায়। যদিও ইতিমধ্যে এই ভোটকে কেন্দ্র করে প্রার্থী তালিকা তৈরি করার ক্ষেত্রে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে প্রার্থী তালিকা তৈরির তৎপরতা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে।
সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। বুধবার জানুয়ারির ২ তারিখ তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন রয়েছে। ৩ তারিখ জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন দফতরের সচিবদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যাচ্ছে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি শতাধিক পুরসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ প্রকাশ করতে পারে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট ধরে নিয়ে কমিশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে। এই নিয়ে কমিশনে চূড়ান্ত তৎপরতা চলছে। যদিও এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে।
ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হলে নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে যাবে ওইসব পুর এলাকায়। নতুন করে কোনও প্রকল্প ঘোষণা করা কিংবা কোনও সরকারি কর্মসূচির উদ্বোধন করা যাবে না সেই সঙ্গে সরকারি কর্মী ও আধিকারিকরা নতুন করে কোনও কর্মসূচিতে যুক্ত থাকতে পারবেন না।
তাই রাজ্য নির্বাচন কমিশন পুরভোটের দিনক্ষণ কবে ঘোষণা করে তা নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে আমজনতার মধ্যে। যদিও এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে। এদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল বিজেপি।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি শতাধিক পুরসভার ভোট রয়েছে। এই ভোট আরও চার সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানাল বিজেপি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য রবিবারই জানিয়েছিলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই দাবি করছি সব পুরসভা এবং পুরনিগমের ভোট একদিনেই হোক।’
সেই সঙ্গে বিজেপির আরও দাবি, বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল, শিলিগুড়ি এই চার পুরনিগম সহ ১০৮টি পুরসভার ভোটগণনা হোক একই দিনে। এ প্রসঙ্গে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই চার পুরনিগমের ভোটের ফলাফল আগে ঘোষণা হলে এর প্রভাব পড়বে অন্য ভোটগুলিতে।
আমরা প্রথম থেকেই সব পুরনিগম এবং সব পুরসভা, যেগুলির ভোট বকেয়া রয়েছে, তা একদিনে করা এবং ভোটের ফলাফল একদিনে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যদিকে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টচার্যের ব্যাখ্যা, বেশ কয়েকটি পুরসভার ভোট দু’বছর বা তার বেশি সময় বকেয়া রয়েছে। মানুষ এতদিন যখন গণতান্ত্রিক অধিকার এবং পুর পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন, তখন আর চার সপ্তাহ অপেক্ষা করতে ক্ষতি কোথায়?
এদিকে এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু রায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, করোনাকে ঢাল করে নির্বাচনে ভরাডুবির ভয়ে পালাতে চাইছে বিজেপি। বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি নির্বাচনী প্রচার করছে, তখন করোনার কথা মনে পড়ছে না।
এ রাজ্যে হঠাৎ করে করোনার কথা তাদের মনে হল। আসলে গোহারা হারবে, তাই নতুন করে করোনার বাহানা তুলেছে। উল্লেখ্য, ২৭ জানুয়ারি চার পুরনিগমের ভোট পিছানোর দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়।
ভোট চার থেকে ছয় সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া যায় কিনা, তা বিবেচনা করার জন্য কলকাতা হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে বলে। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের শাসক দল ওই ভোট পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন চার পুরনিগমের পুরভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে।