নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট বলেছে, রাজ্যপাল সম্পর্কে মর্যাদাহানিকর কোনও মন্তব্য করা যাবে না। তারপরই বিবৃতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সঞ্জয় বসু। “মুখ্যমন্ত্রীর যে যে বক্তব্যকে মানহানিকর বলে মামলা হয়েছে, সে ব্যাপারে আদালত কিছুই বলেনি”, এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী। পাশাপাশি তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন যে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও একজন মহিলা এবং জনপ্রতিনিধি। তিনি যদি মহিলাদের যন্ত্রণার কথা জানেন, তা হলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো তাঁর কর্তব্য। সবকিছু দেখেও তিনি চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন না। আইনজীবী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, “দেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধানের ১৯ নং ধারায় তাঁর বাকস্বাধীনতা লিপিবদ্ধ রয়েছে।” সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য যে মানহানিকর নয়, তার বিবৃতিই দিলেন মমতার আইনজীবী সঞ্জয় বসু।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন রাজ্যপাল বোস। তৃণমূলের দুই বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রেয়াত হোসেন সরকার এবং তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষকেও ওই মামলায় যুক্ত করা হয় রাজ্যপালের তরফে। মঙ্গলবার বিচারপতি কৃষ্ণ রাওয়ের এজলাসে শুনানি হয় এই মামলার। আদালতের পর্যবেক্ষণ, মামলাকারীর দাবি অনুযায়ী, তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বেশ কিছু মন্তব্যে। ওই রকম মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত। যদি এই পর্যায়ে অন্তবর্তীকালীন আদেশ মঞ্জুর-না করা হয় তবে মামলাকারীর বিরুদ্ধে মানহানিকর বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টিতে উৎসাহ দেওয়া হবে। বিচারপতি রাও এর আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজ্যপাল বোস সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্য যে সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলিকেও এই মামলায় যুক্ত করতে হবে। মঙ্গলবারের শুনানিতে তিনি বলেন, “এটা স্বীকার করতেই হবে যে মামলাকারী সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের একজন। তাঁর বিরুদ্ধে যে সব মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।” পাশাপাশি আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, “বাদী পক্ষ একটি প্রাথমিক মামলা করেছেন এবং এই পর্যায়ে একটি অন্তর্বর্তী আদেশ মঞ্জুর করা-না হলে সেটা বিবাদী পক্ষকে মানহানিকর বিবৃতি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার শামিল হবে। তাতে দুই পক্ষেরই সুনামের উপর প্রভাব পড়তে পারে।”
এবার একটু অতীত ঘেঁটে দেখা যাক। সম্প্রতি নবান্নের একটি সরকারি বৈঠক থেকে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রায়াত হোসেন সরকারের শপথগ্রহণ নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে রাজ্যের যে টানাপড়েন চলছে, সে ব্যাপারে মমতা বলেছিলেন, “জেতার পরেও এক মাস ধরে আমার বিধায়কেরা বসে আছেন! রাজ্যপাল শপথ নিতে দিচ্ছেন না। মানুষ ওঁদের নির্বাচিত করেছে। ওঁর কী অধিকার তাঁদের শপথ নিতে না দেওয়ার? উনি হয় স্পিকারকে এই অধিকার (শপথগ্রহণ করানোর) দিন, নয়তো ডেপুটি স্পিকারকে দিন। আর তা না হলে নিজে বিধানসভায় যান। ওঁর রাজভবনে কেন সকলে যাবেন? রাজভবনে যা কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।”
তারপরই হাইকোর্টে মানহানি মামলা করেন রাজ্যপাল। এ প্রসঙ্গেই রাজ্যপালের আইনজীবী বলেছিলেন, “রাজ্যপাল সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য করা হয়েছে। মহিলারা রাজভবনে যেতে ভয় পান— এই ধরনের মন্তব্য বিদ্বেষমূলক মন্তব্য।” মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীর পাল্টা সওয়াল ছিল, “দু’টি অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। রাজভবনের এক মহিলা কর্মী এবং এক জন নৃত্যশিল্পী অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী ওই মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর ওই মন্তব্য মানহানিকর নয়। সাধারণের স্বার্থে এমন কথা বলেছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন সবাইকে রাজভবনে যেতে হবে? মহিলারা সেখানে যেতে নিরাপদ বোধ করেন না। মহিলারা তাঁকে সে কথা বলেছেন। এটা মানহানি হতে পারে না! জনসমক্ষে রয়েছে, এমন কথাই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। এটা তাঁর বাক্স্বাধীনতা।”