নির্যাতিতার সুবিচারের দাবিতে আন্দোলনের গতি সংকল্প নিয়ে শনিবার দুপুরে আরজি করে গণকনভেনশনের ডাক দিয়েছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। তবে সেই একই দিনে আত্মপ্রকাশ করল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা পাল্টা সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সংগঠনের কথা প্রকাশ করলেন তাঁরা।
শনিবার দুপুরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে এবার ‘টেরর কালচার’ চালানোর গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন আরজি কর হাসপাতালেরই আরও কয়েকজন জুনিয়র চিকিৎসক। এদের মধ্যে শ্রীশ চক্রবর্তীসহ বেশ কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের’ বিরুদ্ধে নতুন সংগঠন গড়ে বিচার চাইছেন। শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রীশ অভিযোগ করেন, নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের নামে অনিকেত মাহাতো ও তাঁর দল ৪.৭৫ কোটি টাকা তুলেছেন।
একই সঙ্গে, বিচার চাওয়ার নামে রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। শ্রীশের মতে, ”নির্যাতিতা চিকিৎসক দিদির জন্য আমরাই প্রথম বিচার চাইতে পথে নেমেছিলাম, তবে আমরা কোনো কর্মবিরতি চাইনি। রোগী পরিষেবা চালু রেখেই আমরা আন্দোলন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই সময়েই আমাদের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’ চালানোর অভিযোগ আনা হয়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ”মিথ্যাচারের উপর ভিত্তি করে চাপ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো তদন্ত কমিটি গঠন করে আমাদের ৫৩ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমাদের কেরিয়ার ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল অনিকেতদের দল।”
প্রসঙ্গত, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের আন্দোলনের জেরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে সম্প্রতি একটি তদন্ত কমিটি বসানো হয়, যেখানে থ্রেট কালচারের অভিযোগে হাসপাতালের ৫৩ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়। শ্রীশ চক্রবর্তী ও সৌরভ দাস এর মধ্যে অন্যতম। সাসপেনশনের বিরুদ্ধে তাঁরা হাইকোর্টেও যান এবং আদালত এই সাসপেনশনের সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। শ্রীশের দাবি, হাইকোর্টের ,স্থগিতাদেশের পরেও অনিকেত ও তাঁর দলের সদস্যরা তাঁদেরকে কলেজে ঢুকতে বাধা দেন। এমনকি তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই তাঁদেরকে ‘নটোরিয়াস ক্রিমিনাল’ বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শ্রীশ আরও দাবি করেন, ‘যাঁরা নির্যাতিতার নামে কোটি টাকা তুলেছে, তাঁরা কি অপরাধী নন?’ তিনি বলেন, নির্যাতিতার ময়নাতদন্ত রিপোর্টে সই করার জন্য রিয়া বেরা নামে এক চিকিৎসকের অ্যাকাউন্টে ২৮ লক্ষ টাকা ঢুকেছে। শ্রীশের মতে, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।
সৌরভ দাস, যিনি শ্রীশের সহকর্মী, অভিযোগ করেন, ”রিয়া বেরার বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। অথচ, সেও ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের সদস্য।” সৌরভ আরও বলেন, ”মূল ইস্যু থেকে সরে গিয়ে অনিকেত ও দেবাশিসরা আন্দোলনকে ভিন্ন পথে চালিত করছেন। আমরা এই ‘থ্রেট কালচারের’ শিকার। তাই মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরতে আমাদের নতুন সংগঠন গঠন করতে হয়েছে।”