• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

মহালয়ার দিনে ঠাসা অনুষ্ঠানের মাঝেও বন্যাদুর্গত ও নারী সুরক্ষায় জোর মুখ্যমন্ত্রীর

জনস্বার্থে 'নিঃশব্দ'-এ কাজ করার পরামর্শ

পিতৃপক্ষের অবসান এবং মাতৃপক্ষের শুভসূচনার মাহেন্দ্রক্ষণে একগুচ্ছ কর্মসূচি পালন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। একদিকে, শহর কলকাতা এবং জেলায় অগণিত দুর্গাপুজো উদ্বোধনের মাধ্যমে দুর্গোৎসবের সূচনা করলেন।  বুধবার মহালয়ার দিনে প্রতিবারের মতো চূড়ান্ত ব্যস্ত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সারাদিন ঠাসা ছিল একাধিক অনুষ্ঠানসূচি ও পুজোর উদ্বোধনের। এদিন তিনি হাতিবাগান সার্বজনীন, সেলিমপুর, বাবুবাগান, যোধপুর পার্ক, যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লী, সন্ধ্যা ৭টা ১৫ নাগাদ চেতলা অগ্রণী পুজোর উদ্বোধন করেন। এইসব ঠাসা অনুষ্ঠানের মাঝেও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বন্যাদুর্গত মানুষ ও নারী সুরক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেইমতো দলের নেতা, মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্তাদের এইসব বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

সূত্রের খবর, বুধবার সারা দিনে কলকাতার একাধিক পুজোর পাশাপাশি ভার্চুয়ালে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার প্রায় চার শতাধিক পুজো উদ্বোধন করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী পুজোর নানা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাজ্যের বন্যাদুর্গত মানুষের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি পুজোর সময়ে রাজ্যের মা-বোনেদের সুরক্ষার ওপর নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,’অনেক মানুষ এখনও বানভাসি আছেন। যতটা পারবেন সাহায্য করবেন। আমিও করেছি। যাঁরা মানুষের কাজ করেন, তাঁরা নিঃশব্দে কাজ করেন। যাঁরা কাজ করে না, তাঁরা বকে বেশি। আমি চাই, কথা কম কাজ বেশি। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘অনেকে বলেন, কেন পুজো করব, কেন উৎসব করব? কথাতেই আছে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। আমরা সব কাজ করি, ধর্ম কর্মও মানি। সর্ব ধর্ম সমন্বয়, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা। আমরা সেটাই করে থাকি। সবাইকে নিয়ে চলার মধ্যে একটা প্রাণ আছে।’

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট কর্ম বিরতি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিলেও সেই নির্দেশকে তোয়াক্কা করলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার থেকে ফের কর্ম বিরতি ঘোষণা করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মহালয়ার আগের দিন থেকেই তাঁরা রাত থেকে ভোর দখলে সামিল হন। প্রশ্ন তোলা হয়েছে দুর্গাপূজার যৌক্তিকতা নিয়েও। এরকম পরিস্থিতিতে মমতা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন,’দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে সব এলাকায় শান্তিতে পুজো করবেন। মা–বোনেদের বিশেষ করে খেয়াল রাখবেন। আমার পুজো উদ্বোধন শুরু হয়েছে। এটা চলবে।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি এবং সুপ্রিম-নির্দেশ উড়িয়ে কার্যত মঙ্গলবার থেকেই ফের রাজ্য জুড়ে নতুন করে কর্মবিরতিতে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকগণ। এই আবহে কিছু রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক সংগঠন পুজোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে ভোর দখল, রাত দখলের মতো কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এর নেপথ্যে ‘রাম’ এবং ‘বাম’-এর প্রত্যক্ষ মদত ও ইন্ধন রয়েছে বলেই শাসকদলের অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি, উৎসবকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়ে শক্তির আরাধনার সময়ে প্রতিবাদকেই উজ্জ্বল করে তোলার লক্ষ্য তাদের। বিরোধীরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পালে হাওয়া টানতে চাইছে। সম্ভবত সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী এদিনের মঞ্চ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুজো এবং উৎসবে ফেরার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

পাশাপাশি এদিন পুজো উদ্যোক্তাদের নিজ দায়িত্বও বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘নিজ এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে পুলিশদের সহযোগিতা করতে হবে।’ প্রবীণ, শিশু এবং নারী নিরাপত্তায় বাড়তি নজরদারির নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। বুধবার শহর কলকাতার হাতিবাগান সার্বজনীন দুর্গাপুজো, সেলিমপুর পল্লীর দুর্গাপুজো, চেতলা অগ্রণী দুর্গাপুজো, যোধপুর পার্কের দুর্গাপুজো, ৯৫ পল্লীর দুর্গাপুজো, বাবুবাগান দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই জেলাও। বুধবারই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কয়েক’শ পুজোর উদ্বোধন হয়ে গেল। এর মধ্যে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় একাই ৪০০টি পুজোর উদ্বোধন করলেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে।

উল্লেখ্য, কয়েকবছর আগেও জেলাগুলিতে দুর্গা পুজোর ষষ্ঠীতে মণ্ডপে দেখা মিলত প্রতিমার। তবে গত কয়েক বছরে কলকাতার পাশাপাশি জেলা স্তরেও দ্বিতীয়া, তৃতীয়া থেকে প্রতিমা দর্শন শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে থিমসজ্জাও। এবার তা আরও এগিয়ে নিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে এবার জেলাতেও মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনে মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়ে গেল দুর্গাপুজো। এদিন হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজো উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুজো তো বছরে একবারই আসে। আমরা যারা ধর্মকে মানি, তাঁরা মনে করি, সব উৎসবই আমাদের প্রাণের উৎসব।’ সেলিমপুর পল্লীর দুর্গাপুজো থেকেও তাঁর কণ্ঠে অনুরণিত হয়, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ প্রসঙ্গত, মাতৃপক্ষে হাতিবাগান থেকেই দুর্গোৎসবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এইসব নানারকম ব্যস্ততার মাঝেও নজরুল মঞ্চে দলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র পুজো সংখ্যার উদ্বোধনে হাজির হন তিনি। প্রত্যেক বছরের মত এ বছরেও তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারের সদস্য, রাজ্যের বিধায়ক মন্ত্রী এবং অগণিত সাধারণ দর্শকের উপস্থিতিতে দলীয় মুখপত্রের পুজোসংখ্যার উদ্বোধন করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন জাগো বাংলার মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ সহ তৃণমূল নেতৃত্বগণ। সেই মঞ্চে তিনি কেন উৎসব করব? কেন পুজো করব? এসব প্রশ্নের ব্যাখ্যা দেন।

সেখানে প্রতি বছরের মতো এবছরেও মহালয়ার দিনে নিয়ম করে পুজোয় নিজের লেখা গানের অ্যালবাম প্রকাশের অনুষ্ঠানের সামিল হন। আদতে এটি জাগো বাংলার পুজো সংখ্যা প্রকাশের অনুষ্ঠানে হলেও এই মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রীর গানের অ্যালবামটি মুক্তি পায়। ১০টি গান দিয়ে সজ্জিত গানের ডালি ‘অঞ্জলি’-তে মমতা নিজে কোনও গানে কণ্ঠ না দিলেও প্রতিটি গানের কথা তিনি নিজেই লিখেছেন, সুরও করেছেন নিজেই। অ্যালবামে মোট ১০টি গান রয়েছে। কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলার বিশিষ্ট গুণী শিল্পীরা। এই শিল্পীরা হলেন শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয়, নচিকেতা ঘোষ, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন, অদিতি দাশমুন্সি ছাড়াও রয়েছেন নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় শিল্পী তৃষা, ঐতিহ্য, সুজয়, দেবজ্যোতি।