দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের পরে শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট থেকে ইডির মামলায় জামিন পেয়েছেন দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডল। তার আগেই তিনি জামিন পেয়েছেন সিবিআইয়ের মামলা থেকে। কিন্তু আদালত থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিহাড় জেলে না পৌঁছনোয় তিহাড় জেলের বাইরে মুক্ত আকাশের নীচে আসতে পারেননি অনুব্রত মণ্ডল। তিহাড় জেলে বন্দী অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডল ১০ সেপ্টেম্বর তিহাড় জেল থেকে মুক্তি পেলেও, তিনি বোলপুরে না ফিরে দিল্লিতেই থেকে গিয়েছেন। মনে করা হয়েছিলো যে, বাবার মুক্তির পরেই বাবা ও মেয়ে একসঙ্গেই বোলপুরে ফিরবেন। সুকন্যা মণ্ডলের তিহাড় জেলমুক্তির পর থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে শুরু করেন। অনুব্রত মণ্ডল জামিন পেতেই সেই উচ্ছ্বাস জেলায় সবুজ আবিরের অকাল হোলিতে পরিণত হয়েছে। প্রথমে শোনা গিয়েছিলো যে, সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর অনুব্রত মণ্ডল জেল থেকে ছাড়া পেয়েই মেয়ে সুকন্যাকে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চেন্নাই যাবেন। আবার এমনও বলা হয় যে, তিনি দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে করে মেয়েকে নিয়ে বোলপুরের বাড়িতে ফিরবেন।
এদিকে দিল্লির তিহাড় জেল থেকে সোমবার মুক্তি পাওয়ার পরেই অনুব্রত মণ্ডল দিল্লি থেকে বিমানে কলকাতায় ফিরতে পারেন বলে জানতে পারার পরই রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর সড়কপথে কলকাতায় যাচ্ছিলেন বোলপুরের বিধায়ক তথা অনুব্রত ঘনিষ্ঠ রাজ্যের কারমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। কিন্তু মাঝপথেই তাঁর কাছে বার্তা যায় যে, সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর রাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোলপুরে আসছেন। রাতে এসেই তিনি বল্লভপুরের আমার কুটিরে তাঁর প্রিয় আবাস রাঙাবিতানে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা কোর কমিটির একটি বৈঠক করবেন এবং পরদিন মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে জেলা প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। এই খবর জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছতেই জেলা প্রশাসনে হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছে। গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহের সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা প্রশাসনিক বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দিক থেকে মনে করা হচ্ছে যে, রাঙাবিতানে সোমবারই পৌঁছে যাবেন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় জেলে যাওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় দলের কাজ পরিচালনার জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করে দেন। কিন্তু দলের জেলা সভাপতির পদটি শূন্যই রেখে দিয়েছেন। ইতিপূর্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় এসে একাধিকবার জানিয়েছেন, ‘অনুব্রতকে মিথ্যা মামলায় আটকে রাখা হয়েছে। সে জেল থেকে বেরিয়ে যখন জেলায় আসবে তখন তাঁকে বীরের সম্মান দিয়ে বরণ করা হবে’। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষণে মনে করা হচ্ছে যে, অনুব্রত মণ্ডল ওরফে দিদি মমতার ‘কেষ্ট’ যদি সোমবার দিল্লির তিহাড় জেল থেকে মুক্তি পেয়ে যান তাহলে তিনি মেয়েকে নিয়ে বিমানে দ্রুত কলকাতায় পৌঁছে বোলপুরে চলে আসবেন। তখন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুনরায় অনুব্রত মণ্ডলের হাতে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্বভার তুলে দিয়ে যাবেন। অনুব্রত মণ্ডল রাজ্য সরকারের এসআরডিএ-র চেয়ারম্যানের পদেও ছিলেন। সে ক্ষেত্রে আইনি কোনও কারণে অনুব্রত মণ্ডলকে এখনই ওই পদে ফিরেয়ে আনা সম্ভব না হলেও, অনুব্রত মণ্ডলকে তিনি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করে যাবেন।