• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

কনকনে ঠান্ডায় লন্ডনে পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী

মঙ্গলবার থেকে টানা কর্মসূচি

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

লন্ডন, ২৩ মার্চ— দুবাই হয়ে লন্ডনে পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ভারতীয় সময়ে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পৌঁছন তিনি। নেমেছিলেন সেই হিথরো বিমানবন্দরেই। বিপর্যয় কাটিয়ে শনিবারই ছন্দে ফিরেছে হিথরো। যে বিপর্যয়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সফর শুরুর সময় প্রায় ১২ ঘণ্টা পিছিয়ে গিয়েছিল। এদিন লন্ডনের আকাশ সকাল থেকেই মেঘলা। মাঝেমধ্যে হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে চলছে কনকনে হাওয়া।

রবিবার মমতার কোনও সরকারি কর্মসূচি নেই। তিনি উঠেছেন সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে। মুখ্যমন্ত্রী যে হোটেলে থাকছেন, তা বাকিংহাম প্যালেস থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে। এর আগেও লন্ডনে এই হোটেলেই থেকেছেন তিনি। হাঁটতে গিয়েছেন কাছের পার্কে।

শনিবার মধ্যরাতে দুবাই বিমানবন্দরে যখন তিনি পৌঁছেছিলেন বিমানবন্দরের বিজনেস লাউঞ্জে একদল তরুণী নিজেদের মধ্যে নাচ-গান করছিলেন। ইউরোপে এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের মেহেন্দির নাচের অনুশীলন করেছিলেন তাঁরা। তা দেখেই থমকে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তরুণীদের আরও উৎসাহ দিয়ে তিনি নৃত্য পরিবেশনের অনুরোধ করেন। তাঁদের লজ্জা কাটাতে তিনি উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘আমিও তো কিছুদিন আগে ভাঙড়া নাচলাম।’ ব্যাস এটুকু উৎসাহ দানেই দুই তরুণী মেহেন্দির প্রস্তুতি নাচ নেচে মাতিয়ে তুলেছিলেন দুবাইয়ের বিজনেস লাউঞ্জ। নাচ শেষ হতেই শুরু হল অনুগামীদের সেলফি তোলার হিড়িক।

লন্ডন সফরে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিল্পসচিব বন্দনা যাদব, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা প্রধান পীযূষ পাণ্ডে এবং মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সচিব গৌতম সান্যাল রয়েছেন মমতার সঙ্গে। কলকাতা থেকে একই উড়ানে এসেছিলেন শিল্পপতি সত্যম রায়চৌধুরী এবং উমেশ চৌধুরী। মমতার সঙ্গে এসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দুবাই থেকে যোগ দিয়েছেন শিল্পপতি উজ্জ্বল সিনহা এবং মেহুল মোহানকা। সেই টিম বেঙ্গলকে সঙ্গে নিয়ে বিলেতে পৌঁছোলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

রবিবার লন্ডন পৌঁছনোর কিছু সময় পর থেকেই একাধিক ফাইলে চোখ রাখতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। দফায় দফায় ডেকে নেন তাঁর সঙ্গে আসা মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিল্পসচিব বন্দনা যাদব, প্রিন্সিপাল সচিব গৌতম সান্যালদের। ফাইল ধরে ধরে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে চলেছে প্রস্তুতি বৈঠক। কারণ সামনের তিন-চারটে দিনের একাধিক কর্মসূচিতে বাংলাকে তুলে ধরাই হবে প্রধান কাজ। ফলে বাংলার শিল্প-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থনীতি, সংস্কৃতি সবকিছু নিয়েই একটা হোমওয়ার্ক করে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কারণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলা এখন অন্যতম সেরা গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

শনিবার সকালের উড়ানে মমতার লন্ডন রওনা হওয়ার কথা থাকলেও হিথরো-বিপর্যয় তাতে বাদ সেধেছিল। বিদ্যুৎবিভ্রাটের জেরে শুক্রবার ১৮ ঘণ্টা ব্রিটেনের ব্যস্ততম বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা করেনি। মুখ্যমন্ত্রীর সফর নিয়ে উৎকণ্ঠাও তৈরি হয়েছিল প্রশাসনিক মহলে। যদিও মমতা গোড়া থেকেই বলেছিলেন, তিনি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে পৌঁছোবেন। সফর শুরুর সময় পিছিয়ে যাওয়ায় ধকল বেড়েছে। কলকাতা থেকে দুবাই, সেখানে কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা, তারপর দুবাই থেকে লন্ডন দীর্ঘ বিমানযাত্রা, মমতার কথায়, ‘শিডিউলটা হেক্টিক হয়ে গেল।’ কারণ সোমবার থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে।

সোমবার ভারতীয় হাইকমিশনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। ২৫, ২৬ এবং ২৭ মার্চ পরপর তিনদিন লন্ডনে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মঙ্গলবার রয়েছে বাণিজ্য সম্মেলন। বুধবার সরকারি স্তরে বাণিজ্য বৈঠক। সেই বৈঠকের আগে আরও কয়েক জন ভারতীয় শিল্পপতিও লন্ডনে গিয়ে পৌঁছোবেন। আগামী বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে ভাষণ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। এদেশের প্রবাসী ভারতীয় এবং বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালিরা মুখিয়ে আছেন মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে। তাঁদের প্রাণের বাংলাকে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মা-মাটি মানুষের সরকার কীভাবে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাচ্ছে তা তাঁরা লন্ডনে বসে খবরে কিংবা আত্মীয়স্বজনের কাছে শোনেন। এবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সরাসরি শুনবেন। সমস্ত কর্মসূচি শেষ হলে ২৮ তারিখ লন্ডন থেকে ফের কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তিনি।

News Hub