• facebook
  • twitter
Thursday, 14 November, 2024

রাজ্যে অশান্তি ছাড়াই মিটল উপনির্বাচন

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, 'ভোটের আগে বাহিনী চায় বলে চিৎকার করছিল। কিন্তু দেখা গেল, ২০২১ সালে যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল তাঁদেরও অনেকে এবারে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে দেউলিয়া অবস্থা হয়ে গিয়েছে। তাই এখন আবার কাঁদছে কেন্দ্রীয় বাহিনী কী করল। ওরা যেভাবে কুৎসা করছে, তাতে তো কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এবার বুথে ঢুকে বিজেপির হয়ে ভোট দিয়ে আসতে হবে!'

রাজ্যের উপনির্বাচনে ভোট প্রদানে লাইন দিয়েছেন ভোটাররা। নিজস্ব চিত্র

১০৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পরও রাজ্যের ৬টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে এড়ানো গেল না বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা। এদিন সিতাই, মাদারিহাট, নৈহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর ও তালড্যাংরায় নির্বাচন হয়েছে। বুধবার সকালে এই ৬ কেন্দ্রে উপনির্বাচন চলাকালীন উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় এক তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ভাটপাড়া এলাকাটি নৈহাটি বিধানসভা এলাকার পাশেই অবস্থিত। এর জেরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের কাছে এই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বুধবার সকাল ৭টা থেকেই রাজ্যের এই ৬টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এদিন সিতাই, মাদারিহাট সহ একাধিক কেন্দ্রে অশান্তির ঘটনা সামনে এসেছে। এই নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেনি বামেরা। হাড়োয়া আসনতে আইএসএফ প্রার্থীকে সমর্থন করেছে তারা। অপরদিকে নৈহাটিতে সিপিএমএল (লিবারেশন)–এর প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদারকে সমর্থন করেছে বামফ্রন্ট। ভোটের শুরুতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সিতাইয়ে। সিতাই হাই স্কুলে আদর্শ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সকালে কোনও পোলিং এজেন্ট এসে উপস্থিত না হওয়ায় তাঁদের ছাড়াই মকপোল পর্ব সারেন ভোটকর্মীরা। নৈহাটির ৬৩ নম্বর বুথে বিজেপি এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। যদিও পরে বিজেপি প্রার্থী রূপক মিত্র এসে তাঁকে বুথের ভিতরে বসানোর ব্যবস্থা করেন। অপরদিকে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

ভোট শুরু হতেই হাড়োয়ার সদরপুর ২০০ নম্বর বুথে বিজেপি প্রার্থী বিমল দাসের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তৃণমূলের বুথ এজেন্ট। অপরদিকে মেদিনীপুরের শালবনির সাতপাটিতে আক্রান্ত হন বিজেপির মণ্ডল সভাপতি বাবলু ঘোষ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করে দলীয় নেতৃত্ব। কোচবিহারের সিতাইয়ের একটি বুথে ইভিএমের দুটি বোতামে সেলোটেপ লাগানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই বুথে ঢুকে বিজেপি প্রার্থী নিজেই ইভিএম থেকে সেলোটেপ খুলে দেন। অপরদিকে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে তৃণমূল। বুথ পরিদর্শন করতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন মাদারিহাট বিধানসভার উপনির্বাচনের বিজেপির প্রার্থী রাহুল লোহার। তাঁর অভিযোগ, তাঁর গাড়ি আটকে ইট ছোঁড়া হয়। যদিও তৃণমূলের দাবি, এতদিন প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ টিগ্গার দেখা পাওয়া যায়নি। এলাকার উন্নয়নও হয়নি। তাই রাহুলকে গো ব্যাক স্লোগান শুনতে হয়েছে। বুধবার বিকেলে মেদিনীপুরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে তৃণমূল প্রার্থী সুজয় হাজরার পোলিং এজেন্টকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে বুথের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে বচসায় জড়ান তৃণমূল প্রার্থী।

এদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রাজ্যের ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মোট ৬৯.২৯ শতাংশ ভোট পড়ে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ভোট পড়েছে বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় এবং সবথেকে কম ভোট পড়ে নৈহাটিতে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত সিতাইয়ে ভোট পড়ে ৬৬.৩৫ শতাংশ। মাদারিহাটে, ৬৬.৩৫ শতাংশ, নৈহাটিতে ৬২.১০ শতাংশ, হাড়োয়ায় ৭৩.৯৫ শতাংশ, মেদিনীপুরে ৭১.৮৫ শতাংশ এবং তালড্যাংরায় ৭৫.২০ শতাংশ ভোট পড়েছে। সর্বশেষ ভোটের হার আরও কিছুটা বাড়তে পারে।

বুধবারের উপনির্বাচনের সাম্প্রতিক ছবি পর্যালোচনা করে তৃণমূলকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  কারণ, উপনির্বাচনে এই ছয়টি বুথেই বামফ্রন্ট ও বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা বেশ ভালোভাবেই নজরে পড়েছে। সাংগঠনিক দিক থেকে যে সমস্ত এলাকায় বিরোধীরা দুর্বল সেই সব এলাকায় ভোটও বেশি পরিমাণে পড়ল। যেমন তালড্যাংরা, হাড়োয়া বিধানসভা এলাকায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ভোট পড়েছে। অপরদিকে নৈহাটি লাগোয়া ভাটপাড়া এলাকায় গুলির আঘাতে মৃত্যু হয় এক তৃণমূল নেতার। পাশাপাশি এই কেন্দ্রে দিনভর অশান্তি লেগে ছিল। এর স্পষ্ট ছাপ পড়েছে ভোট শতাংশে। আগামী ২৩ নভেম্বর এই উপনির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে। তৃণমূলের দাবি, আরজি কর আন্দোলনের কোনও প্রভাব এই নির্বাচনের ফলাফলে পড়বে না।

এই ৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে পাঁচ গতবার তৃণমূলের দখলে ছিল। শুধুমাত্র মাদারিহাট আসনে জিতেছিল বিজেপি। ভোটের পরে শাসকদল দাবি করে, এবার সবকটি আসনেই জিতবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। বিজেপির মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, ‘ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। বাহিনীকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি।’

যদিও তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘ভোটের আগে বাহিনী চায় বলে চিৎকার করছিল। কিন্তু দেখা গেল, ২০২১ সালে যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল তাঁদেরও অনেকে এবারে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে দেউলিয়া অবস্থা হয়ে গিয়েছে। তাই এখন আবার কাঁদছে কেন্দ্রীয় বাহিনী কী করল। ওরা যেভাবে কুৎসা করছে, তাতে তো কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এবার বুথে ঢুকে বিজেপির হয়ে ভোট দিয়ে আসতে হবে!’ এদিন মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষের প্রসঙ্গ টেনে কটাক্ষ করেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের কোন্দল নিয়ে না ভেবে বিজেপিকে বরং নিজেদের দলের কথা ভাবতে বলুন! মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষকে যেভাবে বাক্স প্যাঁটরা গুটিয়ে বান্ডিল করে দুর্গাপুরে হারতে পাঠিয়েছিল, সেখানে বিজেপি আগে নিজেদের গোলমাল ঠেকাক!’