• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

সূচনা হল সাতাশতম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, চলচ্চিত্রের সঙ্গে অর্থনীতিকে জুড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

এদিন স্মৃতিচারণা করেন সদ্য নির্বাচিত আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ শত্রুর সিন্হাও। তাঁর ভাষণে, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন শত্রুঘ্ন।

মমতা চলচ্চিত্র সংস্কৃতিরই অঙ্গ কিন্তু একই সঙ্গে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অর্থনীতিও।

সোমবার নজরুল মঞ্চে, সাতাশতম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে এসে চলচ্চিত্রের সঙ্গে অর্থনীতিকে জুড়ে দিলেন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঘিরে অনেক অর্থ সংস্থান হয়।

তিনি সদ্য নির্বাচিত আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ উৎসবের বিশেষ অতিথি বলিউডের স্টার শত্রুঘ্ন সিন্হাকে দায়িত্ব দিলেন টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ আনার।

অন্যদিকে শত্রুঘ্ন সিনহাও চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চ থেকে জয়ের জন্য আসানসোলবাসীকে ধন্যবাদ জানালেন। তাঁর ওপর আস্থা রাখার জন্য তৃণমূল নেত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

এভাবেই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চেই সংস্কৃতি, অর্থনীতি আর রাজনীতি রইল হাত ধরাধরি করে। অতিমারী কাটিয়ে এবারই প্রথম গরমকালে উদ্বোধন হল চলচ্চিত্র উৎসবে।

বাংলা সিনেমার জৌলুস এখন অনেক বেড়েছে বলেই মনে করনে মুখ্যমন্ত্রী। না হলে বাইরের দেশ থেকে ৪৭ টি সিনেমা আসত না। গত সপ্তাহেই শেষ হয়েছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, রাজ্য সরকারের একটা ভুল হয়ে গিয়েছে, সেই সম্মেলনে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ডাকা।

তিনি মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে দায়িত্ব নেন, আগামী বছর বাণিজ্য সম্মেলনে যেন ফিল্ম সেক্টরের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই বিনিয়োগ করেন। কিন্তু সেই বিনিয়োগের প্রাচুর্য বাংলায় নেই। তা সত্ত্বেও বাংলা সিনেমা এগিয়ে চলেছে।

বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বিশ্বের ইকোনমিক ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে চান মুখ্যমন্ত্রী।

এই উদ্দেশ্যে শত্রুঘ্ন সিন্হাকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনি একটু ফান্ড আনার বিষয়টা দেখুন। কারণ, কী নেই বাংলায়? এখানে ট্যালেন্ট রেডি। সমুদ্র, পাহাড় জঙ্গল সবকিছু রয়েছে এখানে।

বাংলা সিনেমার বিশ্বসেরা হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে শুধু ব্র্যান্ডিং নেই বলে পিছিয়ে রয়েছে। রাজ্যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ঢেলে সাজাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

টালিগঞ্জের রাধা স্টুডিওকে চলচ্চিত্রের শতবর্ষ ভবন হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে পূর্বাঞ্চলের প্রথম ফিল্ম আর্কাইভ তৈরি হয়েছে। যেখানে পুরনো ছবির রিল রেস্টোরেশন হয়।

এবছরই সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লার মতো একাধিক সিনেমার রেস্টোরেশন হয়েছে সেখানে।

এই কাজের জন্য এদিন তাঁর বক্তাবো রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান পরিচালক সন্দীপ রায়ও।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, রাধা স্টুডিওতে সারা বছর চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। নন্দনের মতো আরও এক সরকারি স্টুডিও হয়ে উঠবে রাধা স্টুডিও।

এছাড়া বারুইপুরে দশ একর জমির ওপর ১৩২.৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে টেলি আকাদেমি। সেখানে তৈরি হচ্ছে সিনে মিউজিয়ামও।

এছাড়া ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকনিশিয়ান স্টুডিও পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে রাজ্য সরকার। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর শুধু দায়িত্বই নেই, রয়েছে মমতাও।

সাতাশতম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে সেই আবেগের ছবিও ধরা পড়ল।

মমতা এদিন উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে প্রয়াত লতা মঙ্গেশকর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাপ্পি লাহিড়ি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় , টেলি তারকা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়কে স্মরণ করেন।

বলেন, লতাজিকে বঙ্গবিভূষণ দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও, উনি অসুস্থ থাকায় সেই সাধ অপূর্ণ রয়ে গেল।

একুশের বিধানসভা জেতার পর তাঁকে যে লতা মঙ্গেশকর কালি ঠাকুরের ছবি দেওয়া লকেট দিয়েছিলেন, সেকথার উল্লেখ করেন।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের তার কাছে গান শোনার আব্দার করা, বাপ্পি লাহিড়ির তাঁর কাছে গানের কথা লিখে দেওয়ার অনুরোধ জানানোর ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণও করেন।

একইভাবে এদিন স্মৃতিচারণা করেন সদ্য নির্বাচিত আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ শত্রুর সিন্হাও। তাঁর ভাষণে, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন শত্রুঘ্ন ।

বলেন মানিকদার, ভক্ত ছিলাম, আজীবন ভক্ত থাকব। ফিল্ম ইনস্টিটিউটের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, মৃণাল সেন ঋত্বিক ঘটকের থেকে অনেক কিছু শিখেছি এখানে।

সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় কাজ করতে না পারায় আক্ষেপের কথা ব্যক্ত করেন এই বাংলারই পরিচালক গৌতম ঘোষের ‘অন্তৰ্জলিযাত্রা’য় অভিনয়ের কথাও স্মরণ করেন।

মানিক-মৃণাল-ঋত্বিকদের পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে গৌতম ঘোষ, সন্দীপ রায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়রা যে কাজ করছেন, তারও তারিফ করেন আসানসোলের সদ্য নির্বাচিত সাংসদ চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধধন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে কুর্নিশ জানান রাজ থেকে রঞ্জিত সকলেই।

এবছর চলচ্চিত্র উৎসবে কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষকে স্মরণ করা হবে। তাই সত্যজিৎ রায়ের একাধিক ছত্রি পোস্টারেই সেজে উঠেছে নন্দন চত্বর।

উদ্বোধনী ছবি ছিল সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ সিনেমাটি এছাড়া শতবর্ষে পা রাখা চিদানন্দ দাশগুপ্ত এবং মিকলোস জানকসোর তৈরি ছবি এবং তথ্যচিত্রও দেখার সুযোগ থাকবে এবারের উৎসবে l।

এছাড়া রয়েছে উৎসবের থিমকান্ট্রি ফিনল্যান্ডের ছবি। এভাবেই চলচ্চিত্র উৎসবের হাত ধরে বাংলার সঙ্গে বিশ্বের বন্ধন হয় সংস্কৃতির সঙ্গে অর্থনীতির সুতোতে।