নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, ১৪ জুন– রাত পোহালেই শনিবারের ভোরে হাজার হাজার ট্রলার পাড়ি দেবে বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে জলের রুপালী শস্য ইলিশের খোঁজে । সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের মধ্যে দারুণ উৎসাহ । ঘাটে ঘাটে সাজো সাজো রব । ডায়মন্ড হারবার কাকদ্বীপ নামখানা ফ্রেজারগন্জ পাথরপ্রতিমা রায়দিঘি কুলতলি ঝড়খালি সাগরদ্বীপে কয়েক হাজার ট্রলারে চলছে গঙ্গা পুজো । দীর্ঘ দু মাস গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল মাছেদের প্রজননের সময়কাল থাকায় । পনেরো জুন ভোর থেকে উঠে যাচ্ছে মৎস্য দফতরের বিধি নিষেধ ।
জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গেল , প্রথম পর্যায়ে প্রায় চার হাজার ট্রলার যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরতে । ধাপে ধাপে সংখ্যাটা বাড়বে । নিয়ম মেনে এক একটি ট্রলারে পনেরো জন মৎস্যজীবী যেতে পারবে । প্রতিটি ট্রলারে থাকবে বিপদ সংকেত প্রেরক যন্ত্র , লাইফ জ্যাকেট , আপৎকালীন ওষুধ , পর্যাপ্ত খাবার , পানীয় জল ।
ইলিশের মরশুমে ইলিশ পাবার আশায় সুন্দরবনের মৎস্যজীবী মহল । জনৈক মৎস্যজীবীর কথায় , যদি মা গঙ্গা দয়া করেন তাহলে পাঁচ দিনের মধ্যেই এ বছরের প্রথম ইলিশ ঘাটে নিয়ে ফেরা যাবে । নাহলে সাত থেকে দশ দিন লাগবে ইলিশের ট্রলার নিয়ে তীরে ফিরতে । ইলিশ না পেলে তো , এতো খরচ করে গভীর সমুদ্রে যাওয়া বিফলে যাবে । প্রসঙ্গত , এক একটি ট্রলার পাঠাতে একবারের জন্য খরচ দেড় থেকে দু লাখ টাকা । ট্রলার চালানোর তেলের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ট্রলার মালিকই ইলিশ ধরা দিচ্ছে জানলে , ট্রলার ভাসান গভীর সমুদ্রে ইলিশের আশায় ।
আশা অবশ্য করছেন সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা । হাওয়া অফিসের বার্তা অনুযায়ী শনি রবিবার বৃষ্টি আসতে পারে । শনিবার ভোরে ট্রলার রওনা দিলে , সোম মঙ্গলবারের মধ্যেই গভীর সমুদ্রে ঢুকে যাওয়া যাবে । ইলিশ মাছের ঝাঁক এর দর্শন পেতে হলে অন্তত তিন দিন ট্রলার নিয়ে এগোতে হয় বঙ্গোপসাগরের বুকে । ঝিরঝিরে বৃষ্টি পূবালী হাওয়া ইলিশের পছন্দের সময়কাল । আর সেই সময় হল ইলিশের বসন্ত । ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ছুটে আসতে চায় মোহনার দিকে গঙ্গার মিষ্টি জলের স্বাদ নিতে । গভীর সমুদ্র থেকে ছুটে আসার পথেই মানুষের রসনা তৃপ্ত করতে , প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা ধরে আনেন জলের রুপালী ফসল মাছেদের সাম্রাজ্যের রাণী ইলিশকে । ইলিশের প্রত্যাশায় সাধারণ মানুষ থেকে কবি সাহিত্যিকের কলম । রাঙা সূর্য পূব আকাশ রাঙালেই জলে ভাসবে ইলিশের ঝাঁক বন্দি করা হাজার হাজার ট্রলার।