প্রতিবছর জেলার বইমেলা থেকে সরকার ২ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার বই কেনে। যে বাড়িতে বই নেই, সেই বাড়িতে প্রাণ নেই। জল ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, বই ছাড়া সেরকম বাঙালি বাঁচতে পারে না।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া ৪১ তম মুর্শিদাবাদ জেলা বইমেলার উদ্বোধন করতে এসে একথা বলেন জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিষেবা দফতরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের দুই প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা, আখরুজ্জামান, দুই সাংসদ আবু তাহের খান, খালিলুর রহমান, লোকাল লাইব্রেরি অথরিটির সদস্য শাঁওনি সিংহ রায়, মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি বিধায়ক আশিস মার্জিত, সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী বিশ্বময়ানন্দ মহারাজ প্রমুখ।
এছাড়াও এদিন জেলার প্রায় সমস্ত বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা কমিটির সম্পাদক তথা জেলা গ্রন্থাহার আধিকারিক মনঞ্জয় রায়।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিষেবা অধিকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও মুর্শিদাবাদ জেলা স্থানীয় গ্রন্থাগার কৃত্যকের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই মেলা ১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
বহরমপুর বারাক স্কোয়ার ময়দানে অনুষ্ঠিত এই বইমেলায় কোনও প্রবেশ মূল্য নেই। দুপুর ১২ টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। এবারের বইমেলার থিম ‘মোদের গরব, মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা’।
এবার বইয়ের স্টল রয়েচে ৭৬ টি এবং সরকারি স্টল সহ অন্যান্য স্টল রয়েছে আরও ২২টি। রয়েছে লিটল ম্যাগাজিনের জন্য আলাদা প্যাভিলিয়ন। গতবারের মতো এবারও সমস্ত কোভিড বিধি মেনেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানান বইমেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা এলএলএ সদস্য বিধায়ক সৌমিক হোসেন।
গতবার ছ’দিনের বইমেলায় ৮৫ লক্ষ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। মানুষ এসেছিল প্রায় এক লক্ষ। এবার বই বিক্রি এবং মানুষের উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এলএলএ সদস্য ফারুক হোসেন।
এদিন প্রকাশিত হয় কবি ও চিত্রশিল্পী অশোক দাসের লেখা কবিতার বই রাজলক্ষী। একযোগে উদ্বোধন করেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী থেকে বিশ্বময়ানন্দ মহারাজ মন্ত্রীকে বইটি পড়ে দেখার অনুরোধ করেন মহারাজ এবং জানান বইটির প্রতিটি কবিতার মধ্যে একদিকে রয়েছে গভীরতা এবং বইমেলা উদ্বোধনের পরে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মুর্শিদাবাদ বইপ্রেমী জেলা।
প্রতিবছর এই জেলায় বই বিক্রি এ কথাই বলে, এ জেলার মানুষ বই নিয়ে চর্চার মধ্যে রয়েছেন। যে বাড়িতে বই নেই, সেই বাড়িতে প্রাণ নেই। যেমন শরীরের সঙ্গে রক্তের, জলের সঙ্গে মাছের সম্পর্ক, ঠিক একইভাবে বইয়ের সঙ্গে রঙালির সম্পর্ক।
এখন প্রতিবছর সরকার ২ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার বই কেনে। মুর্শিদাবাদ জেলায় ১৪৬ টি গ্রন্থাগার চলছে। গ্রামীণ গ্রন্থাগারের জন্য দশ, শহরের জন্য তেরো এবং জেলা গ্রন্থাগারের জন্য পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। বই আমাদের ভবিষ্যৎ।
আমরা যেন যে কোনও উৎসবে একে অন্যকে বই উপহার দিতে পারি। রাজ্যে জেলাগুলিতে বিদ্যালয়ের মাধ্যমে অন্যদিকে অনেক কবিতার মূল বার্তাই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামুল্যে বই দেওয়া হচ্ছে।
এখনও আমরা বিনামুল্যে ৩১ হাজার বই দিয়েছি ১৬০০ বিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে। আগে বইমেলার জন্য কলকাতায় যেতে হত। এখন জেলায় জেলায় বইমেলা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্লকেও এই মেলা শুরু হয়েছে।
২০১১ সাল থেকে বরাদ্দ অর্থ সাতগুন বাড়িয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌমিক হোসেন বলেন, ‘মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগারের পূর্বের ভবনটি জরাজীর্ণ ছিল।
মন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর পরে সেটি হয়ে উঠেছে অত্যাধুনিক। ইন্টারনেটের যুগ্ম হলেও, এই জেলায় বই বিক্রি বা মেলায় মানুষের উপস্থিতির ক্ষেত্রে আলাদা কোনও পার্থক্য আমার চোখে পড়েনি। এখনও এই জেলার মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একে অপরকে বই উপহার দিয়ে থাকেন।’