দর্জি বাবা’র সেই মেয়েটি কাপড় সেলাইয়ের টাকায়, অভাবের সঙ্গে লড়াই করে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু নিমেষেই সবটা শেষ হয়ে গেল। মধ্যবিত্ত পরিবারে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা মেয়েটির পরিণতির মর্মান্তিকতায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। প্রতিবাদের আঁচ বিদেশের মাটিকেও ছুঁয়েছে।
নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার বাবা বলেছিলেন, সেলাই করে তিনি মেয়েকে বড় করেছেন। সেই কথা মাথায় রেখেই পোশাকের রূপকারদের আখ্যান ফুটিয়ে তুলেছে কাঁকুড়গাছি যুবক বৃন্দের এবারের দুর্গোৎসব। ৯৫ তম বর্ষে যুবক বৃন্দের ভাবনা ‘দর্জি মহল্লা।’ থিম শিল্পী পাপাই সাঁতরার ভাবনায় মণ্ডপের একাংশে শোকাহত মা-বাবা’র প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে। স্বপ্নে ভরা তরণী মাঝ নদীতে ডোবার বেদনা স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে শিল্পীর ভাবনায়। স্টেথো গলায় এক তরুণী চিকিৎসকের ছবি ঘরের সেই দেওয়ালে টাঙানো। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বানানো এই ছবি নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার প্রতীকী। শিল্পী পাপাই সাঁতরা জানান, প্রথম থেকেই দর্জিদের জীবনযাত্রা তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু মাসখানেক পরেই আরজি করে এই নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীকালে ওই চিকিৎসক-পড়ুয়ার পরিবারের আর্তি জনসমক্ষে এলে শিল্পী জানতে পারেন ওই তরুণীর সাফল্যের অন্তরালে ছিল তাঁর পরিবারের সংগ্রাম। সেই সংগ্রামেরই একটি খন্ডচিত্র মণ্ডপে উঠে এসেছে।
উদ্যোক্তাদের কথায়, একজন প্রতিমা শিল্পী যেমন প্রতিমার রূপদান করেন, ঠিক তেমনই একজন মণ্ডপ শিল্পী সুদৃশ্য মণ্ডপ তৈরী করেন। অনুরূপভাবে একজন দর্জি পেশাগতভাবে কাপড় কাটা, সেলাই করা, রিপু করা ইত্যাদি একাগ্রচিত্তে করে থাকেন। দর্জিরা তাঁদের নিপুন হাতে সুসজ্জিত বস্ত্র তৈরী করেন। এখানেই শেষ নয়, একজন দর্জি দক্ষতার সঙ্গে জানালা-দরজার পর্দা, অসাধারণ সব বেডকভার তৈরী করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। যেগুলো আমাদের ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। সেই পুজোয় পূজিতা দেবী দুর্গা, দেবী সরস্বতী এবং দেবী লক্ষ্মীর পরনের পোশাক দর্জিরা তাঁদের নিপুন হাতে তৈরী করেন। বস্তুতঃ তাঁদের হাতের যাদুতে দেবী দুর্গার সুন্দর রূপটি বিকশিত হয়। অন্তরালে থাকা সেইসব রূপকার তথা দর্জিদের যাপিত জীবনের খন্ডচিত্র মণ্ডপে তুলে ধরছে কাঁকুড়গাছি যুবক বৃন্দ।
সুতোর জালে বোনা স্বপ্ন নিমেষেই চুরমার! নিহত সেই চিকিৎসকের আখ্যানের ছায়া পড়েছে এবারের কাঁকুড়গাছি যুবক বৃন্দের পুজোয়।