ট্যাব দুর্নীতি কাণ্ডে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করল কলকাতা পুলিশ। শিলিগুড়ির একটি শপিং মলের সামনে থেকে রবিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের ট্যাব দুর্নীতির অন্যতম মাস্টারমাইন্ডও রয়েছে। ধৃতদের জেরা করছেন কলকাতা পুলিশের তৈরি সিটের আধিকারিকরা।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ট্যাব দুর্নীতির তদন্ত শনিবার কিষাণগঞ্জ পৌঁছয়। সেখান থেকে তথ্য পেয়ে রবিবার শিলিগুড়ির সেবক রোডের ওপর অবস্থিত একটি শপিং মলে হানা দেয় তদন্তকারীরা। মলের সামনে থেকেই ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
ধৃতরা হল – দিবাকর দাস (২৮), গোপাল রায় (২৮), বিশাল ঢালি (২৩)। ট্যাব দুর্নীতির অন্যতম মাস্টারমাইন্ড দিবাকর উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার বাসিন্দা। এই চোপড়া থেকেই ট্যাব দুর্নীতি কাণ্ডের সূত্রপাত। গোপাল এবং বিশাল শিলিগুড়ির চম্পাস্রারির বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা লোপাটের অভিযোগে শনিবার দিনহাটার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক মনোজিৎ বর্মনকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে মালদহ পুলিশ। ধৃতকে রবিবার মালদহ জেলা আদালতে তোলা হয়। ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন ব্যাংকে মনোজিতের নামে অন্তত ২০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। নিজে অন্তত ৮টি অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা গায়েব করেছে মনোজিৎ। অর্থাৎ, এটা স্পষ্ট যে কমপক্ষে ৮ জন পড়ুয়ার টাকা গায়েব করেছে মনোজিৎ। কোচবিহারের সিতাই সিংমারী স্টেট প্ল্যান্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোজিৎ। গত ৮ বছর শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
ট্যাব কাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে সিট গঠন করা হয়েছে। এটা প্রশাসনের কাজ। প্রশাসনকে করতে দিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনা মহারাষ্ট্র, রাজস্থান-সহ একাধিক রাজ্যে ঘটেছে। এই গ্রুপটাকে আমরাই ধরতে পেরেছি। সুতরাং, আমাদের প্রশাসন খুব স্ট্রং। রাফ অ্যান্ড টাফ। ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকি যা যা করার, তারা করবে। ট্যাবের যারা টাকা পায়নি, তারা পেয়ে যাবে।’
২০২১ সাল থেকে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প চালু করে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় এতদিন শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য টাকা দেওয়া হত। এবার একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও এই প্রকল্পের আওতায় যুক্ত করা হল। স্কুল কর্তৃপক্ষই যোগ্য পড়ুয়াদের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরের তালিকা তৈরি করে শিক্ষা দপ্তরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেই তালিকার ভিত্তিতেই ট্যাবের টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকউন্টে জমা পড়ে।
যদিও এবছর অনেক পড়ুয়া অভিযোগ করেন, তাদের অ্যাকাউন্টে ট্যাবের কোনও টাকাই ঢোকেনি। ট্যাব কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসার পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দেন, এরপর থেকে শিক্ষকরা নন, পড়ুয়ারাই ট্যাব সংক্রান্ত তথ্য পোর্টালে আপলোড করবে।
পুলিশ জানিয়েছে, ট্যাব কেলেঙ্কারির টাকা যেসব অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে, সেগুলি ভাড়া নেওয়া অ্যাকাউন্ট। ৩০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে অ্যাকাউন্টগুলি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ভাড়া করা সেই অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার ২ ঘণ্টার মধ্যেই তা তুলে নেওয়া হয়। টাকা তোলার আগে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ব্লক বা ফ্রিজ করা হয়েছিল। যে সব কম্পিউটার থেকে জালিয়াতি করা হয়েছে, সেগুলির আইপি অ্যাড্রেস চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
আইপি অ্যাড্রেসগুলি মূলত উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ও তার আশপাশের এলাকার। পাশাপাশি এই ঘটনায় জামতাড়া গ্যাং জড়িত থাকারও অভিযোগ সামনে আসছে। ট্যাব কেলেঙ্কারির চক্র দেশের একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এই জালিয়াতির টাকা বিহারের কিষাণগঞ্জ, ছত্তিশগড়ের রায়পুর সহ একাধিক শহরের একাধিক অ্যাকাউন্টেও গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।