আধঘণ্টায় শেষ, ফের ১১ নভেম্বর আরজিকর মামলার সুপ্রিম–শুনানি

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

দুই দিনে তিন বার পিছিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে ওঠে আরজি কর মামলা। তবে শুনানি শুরুর মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই ইতি পড়ল। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোর কিছুক্ষণ পরে শুনানি শুরু হয়। পরবর্তী আধ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় শুনানি। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১১ নভেম্বর।

বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু হতেই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি মনোজ মিশ্র ও বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালার বেঞ্চে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। পাশাপাশি জাতীয় টাস্ক ফোর্সের তরফেও একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। সব পক্ষের রিপোর্ট জমা পড়ার পর তা খতিয়ে দেখেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। বিচারপতিরা জানান, বিষয়টি সংবেদনশীল। প্রকাশ্যে আলোচনার মতো নয়। তাছাড়া শিয়ালদহ আদালতে চার্জ গঠন হয়েছে। ১১ নভেম্বর বিচারও শুরু হবে। ওই দিনই ফের শীর্ষ আদালত আরজি কর মামলাটি শুনবে।

সিবিআই-এর দেওয়া স্টেটাস রিপোর্ট পড়ে এদিন তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। চার সপ্তাহ পরে পরবর্তী রিপোর্ট (সপ্তম স্টেটাস রিপোর্ট) দিতে হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। জানা গিয়েছে, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় এদিন শুনাতিতে থাকতে পারেননি সিবিআই-এর আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল আরজি কর মামলায় দ্রুত তদন্ত হওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। তিনি জানান, চার্জ গঠন হয়েছে। রাজ্য চায়, আসল দোষী যাতে শাস্তি পায়।


৯০ দিন ধরে তদন্ত চলছে, কিছুই হয়নি–– এদিন শুনানি চলাকালীন এই দাবি করলেন দিল্লি এইমসের আইনজীবী। এর পাল্টা প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে নিম্ন আদালতের। যদি তথ্যপ্রমাণ দেখে তাঁদের মনে হয়, তেমন নির্দেশ দিতে পারেন তাঁরা।’

আরজি করের ঘটনার পর চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ১১ সদস্যের জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠন করে দেয় শীর্ষ আদালত। এদিন অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দিল এই টাস্ক ফোর্স। এই রিপোর্ট সব রাজ্যের মুখ্যসচিব, সমস্ত কৌঁসুলিদের পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রিপোর্ট দেখে তাঁরা কোনও পরামর্শ দিতে চাইলে দিতে পারবেন। জানা গিয়েছে, দুটি ক্যাটেগরিতে টাস্ক ফোর্সের অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। যৌন হিংসা ও শারীরিক হিংসা বন্ধের জন্য রিপোর্টে প্রস্তাব পেশ হয়েছে। সমস্ত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এই প্রস্তাব গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করতে হবে। কীভাবে একটি স্বাধীন নজরদারি ব্যবস্থা গোটা ভারত জুড়ে প্রয়োগ করা যায় তা নিয়ে পরামর্শ চান প্রধান বিচারপতি। অপরদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ সওয়াল করে বলেন, ‘বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের এই টাস্ক ফোর্সে রাখা না হলে জাতীয় টাস্ক ফোর্স যে কারণে গঠিত হয়েছে, সেই কাজ সঠিকভাবে হবে না।’’

গত শুনানিতে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের হলফনামা চাওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে তিন দিন আগেই হলফনামা জমা দিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু এই নিয়ে বৃহস্পতিবারের শুনানিতে কোনও আলোচনা হয়নি। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে আমাদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রিপোর্ট জমা পড়েছে। বৃহস্পতিবার এই বেঞ্চে অন্য মামলাও রয়েছে। তাই পরে এই নিয়ে শুনানি হবে।’

এদিন আদালতে প্রশ্ন ওঠে, শুধুমাত্র সঞ্জয়কে কেন অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে চন্দ্রচূড় জানান, এভাবে নিম্ন আদালতকে সন্দেহ করা উচিত নয়। জেলা আদালতে শুনানি শুরু হতে চলেছে। বাকিদের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের প্রয়োজন মনে করলে নিম্ন আদালতের সেই নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এই বিষয়ে শীর্ষ আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না বলেও জানায় সুপ্রিম কোর্ট।