শৃঙ্খলারক্ষায় কঠোর মমতা পর পর ৩ শোকজে সাসপেন্ড

সোমবার কালীঘাটে দলীয় কর্ম সমিতির বৈঠকে মমতা ও অভিষেক। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠককে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাসভবন সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের বৈঠকে মধ্যমণি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে দলের মুখপাত্র করা হয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের অবস্থান কী হবে, সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানান রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

এর পাশাপাশি, ইচ্ছে হলেই ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করা যাবে না, দলের শৃঙ্খলারক্ষায় এবার এই বার্তাই দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের জানান, ‘দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে যা খুশি মন্তব্য করতে পারবেন না কেউ। দল বিরোধী কাজের অপরাধে যদি কাউকে শোকজ করা হয় তাহলে তাঁকে সেই উত্তর দিতে হবে এবং পরপর তিনটি শোকজ নোটিশ পাঠানো হলে সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বকে সাসপেন্ড করা হবে।’ অর্থাৎ ভুল করলে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে ঠিকই, কিন্তু যা খুশি মনোভাব আর বরদাস্ত করা হবে না।

কেন তৃণমূল আগের থেকে অনেক বেশি কঠোর হচ্ছে? এই প্রসঙ্গে চন্দ্রিমা জানান, ‘তৃণমূল আর আঞ্চলিক দল নয়, সর্বভারতীয় দল। নির্বাচন কমিশনে আমরা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস হিসাবে নথিভুক্ত। সুতরাং, সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ নিয়মকানুনও যথেষ্ট।


তাই এবার সংসদ, বিধানসভা এবং দলের অভ্যন্তরে তিনটি বিশেষ শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গড়েছেন দলনেত্রী। এবার প্রশ্ন হলো, তৃণমূল নেতারা কি নিয়ন্ত্রিত হলেন? এবার কি তাহলে তাঁরা নিজেদের ইচ্ছে মতো মন্ত্রব্য করতে পারবেন না? জবাবে চন্দ্রিমা বলেন, ‘আলোচনা ক্ষেত্র বেঁধে দেওয়া নয়! যিনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাঁকে সেই প্রসঙ্গে বলার সুযোগ করে দেওয়া হলো। তবে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের মতো অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতারা নিশ্চয়ই প্রত্যেক বিষয়ে আলোকপাত করবেন।’  একই সঙ্গে জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটিতে এদিন আরও পাঁচ নেতাকে অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে।’ চন্দ্রিমার ভাষায়, ‘এতদিন তৃণমূলের জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিল ২২ জন। এদিন নতুন করে পাঁচজনকে অন্তর্ভুক্ত করার পর এই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াল ২৭। নতুন পাঁচজন সদস্য হলেন-বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভুঁইয়া, মালা রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জাভেদ খান।’

এছাড়াও সংসদ, বিধানসভা এবং দলের অভ্যন্তরের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এদিন তিনটি ডিসিপ্লিনারি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, আগামী দিনে তৃণমূলের একগুচ্ছ কর্মসূচিও গৃহীত হয়েছে। চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, জেলায় জেলায় তৃণমূলের ইতিহাস সম্পর্কে নবীন দলীয় কর্মীদের আরও অবহিত করতে এবার মাঠে নামবেন অভিজ্ঞ দলীয় নেতারা। তাঁর ভাষায়, ‘নবীনদের তৃণমূলের গৌরবের ইতিহাস জানাতে প্রবীণদের এগিয়ে আসতে হবে। সেই উদ্দেশ্যেই জেলায় জেলায় বাড়তি নজর রাখতে বলা হয়েছে।’ এর সঙ্গে ‘মানুষের সাথে, মানুষের পাশে’ নামের দলীয় কর্মসূচিও গৃহীত হয়েছে, যদিও এর দিনক্ষণ এখনও নির্ধারিত হয়নি বলেই জানিয়েছেন চন্দ্রিমা। এর পাশাপাশি রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়া ‘অপরাজিতা বিল’ দ্রুত আইনে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে আগামী ৩০ নভেম্বর এবং ১ ডিসেম্বর দুপুর ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত ব্লকে ব্লকে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস মিছিল, ধরনা করবে।

এরপর চন্দ্রিমা জানান, ‘১০ ডিসেম্বরের পর রাষ্ট্রপতির কাছে একদিনের সময় চাওয়া হবে, ১৫ জনের মহিলা প্রতিনিধি দল যাবেন। সেই দলে থাকবেন ৫ জন মহিলা বিধায়ক, মন্ত্রী এবং বাকি দশ জন থাকবেন সাংসদ। সেই সঙ্গে রাজ্যপালের কাছেও একটি চিঠি দেওয়া হবে।’ মন্ত্রী আরও জানান, ‘তৃণমূলের এই কর্মসূচি এবং অপরাজিতা বিল প্রসঙ্গ অভিষেক তুলেছেন বৈঠকে। তিনিই রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।’ লোকসভার চলতি অধিবেশনে তৃণমূল কী কী প্রসঙ্গ তুলবে তাও জানিয়েছেন চন্দ্রিমা। তাঁর ভাষায়, ‘মূল্যবৃদ্ধি, সার, বেকারত্ব, মণিপুর, আবাস ও একশো দিনে বাংলায় বরাদ্দ বন্ধ— এই সকল প্রসঙ্গ লোকসভায় তুলবেন আমাদের সাংসদরা।’

তবে এদিনের বৈঠকে কি বহু প্রতীক্ষিত সাংগঠনিক রদবদল প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে? চন্দ্রিমা সাফ জানিয়েছেন, জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে রদবদল প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়নি। এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন, রাজেশ ত্রিপাঠি, সুব্রত বক্সী, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বোস,  অরূপ বিশ্বাস, পার্থ ভৌমিক, সুস্মিতা দেব, গৌতম দেব, মলয় ঘটক, অনুব্রত মণ্ডল, বীরবাহা হাঁসদা, বুলুচিক বরাইক, অসীমা পাত্র সহ প্রমুখেরা। বৈঠকের পর অভিষেক সন্ধ্যায় দিল্লি চলে যান লোকসভার অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য।

কে কোন বিষয়ে বলবেন

কর্মসমিতির নতুন সদস্য

বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
মালা রায়
ডা. মানস ভুঁইয়া
জাভেদ খান

সংসদে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
ডেরেক ও’ব্রায়েন
ডা. কাকলি ঘোষ দস্তিদার
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
নাদিমুল হক
দলীয় মুখপাত্র (দিল্লির ক্ষেত্রে)
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
ডেরেক ও’ব্রায়েন
ডা. কাকলি ঘোষ দস্তিদার
কীর্তি আজাদ
সুস্মিতা দেব
সাগরিকা ঘোষ

বিধানসভা কেন্দ্রিক কমিটি

শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়
নির্মল ঘোষ
ফিরহাদ হাকিম
অরূপ বিশ্বাস
দেবাশিস কুমার
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য

দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি

সুব্রত বক্সি
ফিরহাদ হাকিম
অরূপ বিশ্বাস
সুজিত বোস
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য

বিধানসভা ইস্যুতে

শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য
মলয় ঘটক
ডা. মানস ভুঁইয়া
ডা. শশী পাঁজা
কুণাল ঘোষ
সুমন কাঞ্জিলাল

অর্থনীতি প্রসঙ্গে

অমিত মিত্র
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য

শিল্প বিষয়ে

ডা. শশী পাঁজা
পার্থ ভৌমিক

উত্তরবঙ্গ প্রসঙ্গে

গৌতম দেব,
উদয়ন গুহ
প্রকাশ চিক বরাইক

ঝাড়গ্রাম প্রসঙ্গে

বীরবাহা হাঁসদা

চা-বাগান সংক্রান্ত

মলয় ঘটক

দলীয় মুখপাত্রদের পরিচালনায়

অরূপ বিশ্বাস