• facebook
  • twitter
Monday, 20 January, 2025

আমৃত্যু কারাদণ্ড সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে হাইকোর্টে যাবে রাজ্য

সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে একাধিক যুক্তি দেখিয়েছিল সিবিআই। আরজি কর হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, ৯ আগস্ট ভোরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় সঞ্জয় গিয়েছিলেন।

ফাইল চিত্র

বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয়। তাই ফাঁসির সাজা পেলেন না আরজি করে ধর্ষণ–খুনের মামলায় দোষী সঞ্জয় রায়। তবে আমৃত্যু তাঁকে থাকবে হবে জেলে। সোমবার এই নির্দেশ দিলেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। পাশাপাশি মৃত তরুণী চিকিৎসকের পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সোমবার সকাল থেকেই নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ছিল শিয়ালদহ আদালত চত্বর। আদালতের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন অভয়া মঞ্চের সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। সকলের চোখ ছিল আদালতের ২১০ নম্বর কোর্টরুমে। সেই রুমেই আরজি করে ধর্ষণ–খুনের মামলার সাজা ঘোষণা হল। সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছিলেন নির্যাতিতার পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে দেশের আপামর জনগণ। তবে তাঁদের আরও বক্তব্য ছিল, এই ঘটনা একমাত্র সঞ্জয় রায়ের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। এর পিছনে আরও অনেকে জড়িত রয়েছেন। সব দোষী যেন সাজা পায়।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ শিয়ালদহ আদালতে আরজি কর মামলার এজলাস বসে। তার আগে জেল থেকে কোর্টের লকআপে আনা হয় সঞ্জয় রায়কে। একে একে কোর্টরুমে উপস্থিত হয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আধিকারিকরা, তাঁদের আইনজীবী, নির্যাতিতার বাবা–মা, দোষীর আইনজীবী এবং বিচারক। এজলাস চলাকালীন সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলেন বিচারক অনির্বাণ দাস। বিচারককে সঞ্জয়ের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘যা হয়েছে, আপনার থেকে ভালো আর কেউ জানেন না।’ এরপর তাঁকে জিজ্ঞেস করেন বাড়িতে কে কে আছেন। জবাবে সঞ্জয় জানান, তাঁর বাড়িতে মা রয়েছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। এদিনও একাধিকবার সঞ্জয় দাবি করেন যে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

এজলাসে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা দাবি করেন, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ। সমাজ একজন চিকিৎসককে হারিয়েছে। সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হোক। অপরদিকে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেন সঞ্জয়ের আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, আরজি করের ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয়। সেই দাবিই মেনে নিলেন বিচারক অনির্বাণ দাস। তিনিও মনে করেন, এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়। এরপর সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদানের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। যদিও এই আর্থিক সাহায্য নিতে নারাজ নির্যাতিতার বাবা। তাঁর উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘আপনি মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে এমন বলা হলে আমিও তাই করতাম।’

ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের এমন আঘাত করা, যে কারণে মৃত্যু হতে পারে) ও ১০৩ (১) (খুন) —এই তিন ধারায় সঞ্জয় রায়কে শনিবার দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সোমবার তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক অনির্বাণ দাস। এর পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ দিতে না পারলে আরও পাঁচ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। ধর্ষণের জন্য ৭ লক্ষ এবং খুনের জন্য ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য তরুণী চিকিৎসকের পরিবারকে দিতে হবে। মোট ১৭ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন বিচারক অনির্বাণ দাস।

এদিন আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শুনে কাঁদো কাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সঞ্জয় রায়কে। এজলাসে দাঁড়িয়েই বিড়বিড় করে কিছু বলতে থাকেন। সঞ্জয়ের আইনজীবী তাঁকে জানান, যে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়নি, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যা শুনে সঞ্জয়কে বলতে শোনা যায়, তাঁর বদনাম হয়ে গেল।

সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে একাধিক যুক্তি দেখিয়েছিল সিবিআই। আরজি কর হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, ৯ আগস্ট ভোরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় সঞ্জয় গিয়েছিলেন। ঘটনার দিন সঞ্জয় আরজি করের সেমিনার হলেই যে ছিলেন তা তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন থেকে স্পষ্ট হয়েছে। এটি সিবিআইয়ের কাছে বড় প্রমাণ। খুন হওয়া চিকিৎসকের দেহে মেলা লালারসের নুমনার সঙ্গে সঞ্জয়ের লালার নমুনার মিল পাওয়া গিয়েছে। ক্রাইম সিন থেকে যে ছেঁড়া ব্লু টুথ হেডফোনের অংশটি উদ্ধার করা হয়েছিল সেটি সঞ্জয়ের ফোনের সঙ্গে কানেক্ট করা ছিল। বস্তুত, এই ব্লু টুথ হেডফোনের সূত্র ধরেই সঞ্জয়ের নাগাল পেয়েছিল কলকাতা পুলিশ। এছাড়াও পুলিশ ব্যারাক থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া সঞ্জয়ের পোশাকে নির্যাতিতার রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। সঞ্জয়ের দেহের ক্ষতচিহ্ন পরীক্ষা করেও গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হাতে পেয়েছে সিবিআই। ঘটনাস্থল থেকে ছোটো ছোটো চুল উদ্ধার করা হয়েছিল। সেগুলি সঞ্জয়ের নমুনার সঙ্গে মিলে গিয়েছে। এসবের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে সঞ্জয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। সোমবার দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক অনির্বাণ দাস।