এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বুধবার রাজ্যের হয়ে জোর সওয়াল করেন আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে। তাঁর বক্তব্যে উঠে এল ‘যোগ্য-অযোগ্য’ প্রসঙ্গ। নিয়োগ মামলার ক্ষেত্রে দাভে বলেন, যদি বৃহত্তর ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে চাকরি যেতে পারে। কিন্তু যদি সেভাবে দুর্নীতি না হয়ে থাকে, তাহলে যাঁরা যোগ্য তাঁদের চাকরি বাতিল হওয়া উচিত নয়। মামলার সওয়াল-জবাব শুনে এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, ‘এই মামলায় সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল দুর্নীতিকারী এবং দুর্নীতিহীনদের আলাদা করা। নইলে গোটা প্যানেলই বাতিল করতে হবে।’ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৭ জানুয়ারি।
বুধবার ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। আদালতে এদিন সওয়াল করেন চাকরিহারাদের আইনজীবীরা। সওয়াল জবাবের প্রথম ধাপেই বৈধ ও অবৈধ চাকরিপ্রাপকদের আলাদা করতে তদন্তের আবেদন করেন গ্রুপ সি চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে। আদালতের কাছে তাঁর আর্জি, অন্যের অনিয়মের জন্য যেন সব যোগ্য চাকরিপ্রাপকরা বঞ্চিত না হন। বুধবার আদালতে গ্রুপ সি চাকরিহারাদের আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভের সওয়াল, “দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে সঠিকভাবে কোনও অনুসন্ধান হয়নি। কীভাবে দুর্নীতি হয়েছে, কত জন এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তার অনুসন্ধান হয়নি। সঠিক তদন্ত হলে যোগ্য এবং অযোগ্য নিয়ে এত বিতর্ক হত না। সিবিআই হাই কোর্টের বিচারপতির নির্দেশে সাধারণ ভাবে তদন্ত করেছে। ‘ক্যাজুয়াল’ তদন্ত হয়েছে। ওই বিচারপতি রাজ্যের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তা নিয়ে আমরা আপত্তি করছি না। কিন্তু তদন্তে ত্রুটি রয়েছে।”
রাজ্যের হয়ে সওয়াল করে আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে বলেন, ‘২৫ জন লোক শুধুমাত্র প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্ত দিয়েছিলেন। সেই ২৫ জনই এখন তালিকাভুক্ত। নিয়োগ দুর্নীতির ফলে যোগ্য প্রার্থীরাও সমস্যায় পড়ছেন বলে প্রধান বিচারপতিকে জানান দাভে। তিনি বলেন, “আমরা চার বছর ধরে চাকরি করছি, একজন বিচারপতির সীমিত তদন্তের ভিত্তিতে করা নির্দেশের ফলে আমাদের সম্মান, পরিবারের সম্মান প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে।’
নবম–দশম এবং গ্রুপ ডি চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী মুকুল রোহতগি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সওয়াল করেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘নাইসার প্রাক্তন কর্মী পঙ্কজ বনশলের কাছ থেকে পাওয়া ৩টি হার্ডডিস্ককে গুরুত্ব দেওয়া কতটা যুক্তিপূর্ণ?’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না ওই হার্ডডিস্ক বিকৃত করা হয়েছে কি না।’ মুকুল রোহতগি বলেন, ‘আসল ওএমআর সিট নেই, স্ক্যান করা কপিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে ওই ৩টি হার্ডডিস্কের উপর কীভাবে ভরসা করা যায় ?’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা কোনও একটি নির্দিষ্ট বিষয় নয়, সব বিষয় গ্রহণ করেছি। দুটো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ–এক, কারা অসদুপায় অবলম্বন করে চাকরি পেয়েছে, আর কারা পায়নি।’
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ গত ৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানি পিছিয়ে দিয়েছিল। গত ১৯ ডিসেম্বর চাকরি বাতিল মামলার শুনানি হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মামলার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে হলফনামা জমা দিতে বলেছিল আদালত।
গত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট মূলত যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের বাছাই করার উপরে জোর দিয়েছিল। যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা না-গেলে পুরো প্যানেল বাতিল করতে হবে বলে জানিয়ে দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেছিল গত ২২ এপ্রিল। হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেয়। হাইকোর্টের সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পৃথকভাবে মামলা করেছিল।
এখন প্রশ্ন, এই প্রায় ২৬ হাজার চাকরিজীবীর ভবিষ্যৎ কী হবে? অযোগ্যদের চাকরি বাতিল করে যোগ্যদের চাকরি বহাল রাখা সম্ভব হবে? ২৭ জানুয়ারি ফের শুনানি হবে এই মামলার। ফলে এদিনও অমীমাংসিত থেকে গেল চাকরীপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ।