বিনামূল্যে কাটা যাবে খাল, উল্টে রাজ্য পাবে রাজস্ব! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৎপরতায় এক যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করল রাজ্য সেচ দপ্তর। তবে আদৌ কি তা সম্ভব? বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে এই নয়া প্রকল্পের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বহু খাল, ছোট নদী নিয়মিত ড্রেজিং করা হয় না। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের অভাব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলে বন্যার সময় সেই জল উপচে পড়ে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হয়। গোটা উত্তর ভারতের জল বাংলার উপর দিয়েই প্রবাহিত হয়, তাই স্বভাবত বর্ষাকালে বাংলার বহু জেলা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই সমস্যা রুখতে আমরা হোমওয়ার্ক করে রাখতে চাইছি।
এক্ষেত্রে একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নদীবক্ষ, খাল ইত্যাদি কাটবে, তারা কিছুটা মৃত্তিকা নেবে। এর বিনিময়ে রাজ্য সরকার রয়্যালটি পাবে। সংস্থাও স্বাধীন মত কাজ করতে পারবে।’ এই প্রকল্পে ঠিক কতটা লাভবান হবে রাজ্য? তথ্য-পরিসংখ্যান সামনে এনে মন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র ২৮টি খালের জন্য আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার তরফ থেকে ১১২কোটি টাকা রয়্যালটি এবং রেভিনিউ পেতে চলেছি। সব ঠিকঠাক চললে রাজ্যকে সেচ দপ্তর থেকে বছরে কমপক্ষে ৫০০কোটি টাকা দিতে পারব।’ মন্ত্রী আরও জানান, ‘প্রতি বছর ২২৬ কিলোমিটার ড্রেজিং করতে রাজ্য সরকারের খরচ হয় প্রায় ৫০০কোটি টাকা! মুখ্যমন্ত্রীর এই নয়া চিন্তায় কেবল এই বিপুল অর্থ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে তা নয়, পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের প্রয়োজনও পূরণ হচ্ছে এবং ড্রেজিং-র কাজও হচ্ছে।’
এই প্রসঙ্গ তুলেই কেন্দ্রকে আক্রমণ শানিয়ে মন্ত্রী মানস বলেন, ‘কেন্দ্রের উপর আমরা নির্ভরশীল নই কারণ কেন্দ্র বাংলার প্রাপ্য অর্থ দেয়না। মালদহের ভাঙন প্রতিরোধেও আমরা প্রকল্প করছি। ঝড়, বন্যার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ক্ষয়ের কারণে মানুষের বাসস্থান হারালে কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়না কেন্দ্রের তরফে। মুখ্যমন্ত্রী এই ভেদাভেদ ভুলে ভূমিক্ষয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, তিলপাড়া বাঁধ-সহ একাধিক বাঁধের ক্ষেত্রে এই নয়া উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাঁধের সংস্কার কার্যও চলবে জোর কদমে।’ আদেও কি এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে? মন্ত্রী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বীরভূমের ৭৫টি খাল শনাক্তকরণ হয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক নদী এবং উত্তর ২৪ পরগনার ইছামতি নদী থেকে এই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
সেচ দপ্তরের এই নয়া প্রকল্পকে ‘ঐতিহাসিক উদ্যোগ’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন সেচমন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, ‘বন্যা প্রতিরোধে নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করবে এই প্রকল্প।’ সর্বোপরি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ কতদূর? এরও বিবরণ দিয়েছেন মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের একাধিক বিষয়ের টেন্ডার সম্পূর্ণ হয়েছে। এবার মুখ্যমন্ত্রী নির্দিষ্ট তারিখে সবুজ সংকেত দিলেই তাঁর হাত ধরে এই কাজের শুভ সূচনা হবে।’