আপাতত রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনের সিম্ফনিতে ছন্দপতন ঘটালাে ‘ফণী’। এই ঝড়ের দাপটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সফরের সময়সূচিতে ঘটল পরিবর্তন। ফণী ঝড়ের তাণ্ডব ঠেকানাের প্রস্তুতি নিতে নবান্নে দু’দফায় বৈঠক হল বৃহস্পতিবার। পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভা সকলকেই তৎপর থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ফণীর ছােবল সামলাতে।
স্কুল শিক্ষা দফতর সরকারি ও সরকার অনুমােদিত স্কুলগুলিতে আজ থেকেই গরমের ছুটি ঘােষণা করা হল। জেলাশাসকদের সঙ্গে যােগাযােগ রাখার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে খােলা হল হেল্পলাইন, যার নম্বর ১০৭০। বিমান এবং ফেরি সার্ভিস নিয়ন্ত্রিত হল ফণীর জন্য।
পয়লা মে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে বিপর্যয় মােকাবিলা ব্যবস্থায় দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন। আজ শুক্রবার হেলিকপ্টারে তাঁর খড়গপুর যাওয়ার কথা ছিল নির্বাচনী সভায় যােগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু দুর্যোগে হেলিকপ্টারের উড়ান বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবারই তিনি খড়গপুর পৌছে যান। এখান থেকেই তিনি দুর্যোগ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবেন বলে জানা গিয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলের পর থেকেই ফণীর দাপট মালুম হবে রাজ্যের প্রায় পনেরােটি জেলায়। এর মধ্যে দুই চব্বিশ পরগণা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে ঝড়ের দাপট প্রবল হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, বীরভূম, দুই বর্ধমান, পুরুলিয়া জেলাতেও ঝড়ের দাপট মালুম হবে।
দশ বছর আগে রাজ্যে আয়লা’র ক্ষয়ক্ষতির কথা মনে রেখে জোরকদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার দুপুরে নবান্নে মুখ্যসচিব আপৎকালীন বিভাগের সংশ্লিষ্ট অফিসার, উপকূল রক্ষী বাহিনী, পূর্ত, সেচ, পুলিশ, জাতীয় বিপর্যয় মােকাবিলা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
নবান্নে এসে বৈঠক করেন জাতীয় বিপর্যয় মােকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-এর ডেপুটি কমান্ড্যান্ট। এনডিআরএফ ৬ টি দল বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যােগাযােগ রেখে চলবে বলে জানা গিয়েছে।
ঝড়ের সময় সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার জন্য প্রয়ােজনীয় নির্দেশ দেবেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় উত্তর পরিস্থিতির মােকাবিলায় জাতীয় বিপর্যয় মােকাবিলা বাহিনীর সেকেন্ড ব্যাটেলিয়ান বিভিন্ন জেলায় রওনা হয়ে যান শুক্রবার। দুর্যোগ সামলাতে এদিন রাজ্যের জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে সমস্ত প্রয়ােজনীয় প্রতিরােধ ব্যবস্থা নিতে বলেন বিপর্যয় মােকাবিলা দফতরের প্রধান সচিব দুষ্মন্ত নারিয়াল।
ফণীর সংক্রান্ত সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে নবান্ন থেকে। মৎস্যজীবীদের শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দরকারে কাছাকাছি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে বা নিরাপদ পাকাবাড়িতে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
জরুরি নথিপত্র, সামগ্রী, খাবার, জল, ওযুধ হাতের কাছে রাখতে বলা হয়েছে। ভেঙে পড়া বিদ্যুতের খুটি ও তারের থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়ােজনে রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মােকাবিলা ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের হেল্পলাইন (১০৭০)-এর যােগাযােগ করতে বলা হয়েছে।
আপাতত ফর্ণী’র জন্যই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের উচ্চপদস্থ আধিকারিক এমনকী উচ্চসারির নেতারাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।