বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলতে ও দর্শকদের মন্ডপে টেনে আনতে তিলােত্তমার দক্ষিণ ভাগে পুজো উদ্যোক্তরা বহুকাল আগেই থিমের ভাবনা নিয়ে এসেছিল। কালের নিয়মে তা ধীরে ধীরে উত্তর ভাগেও ছড়িয়ে পড়ে। পরে যা বিস্তৃত হয় উত্তর শহরতলিতে। তবে এবার সেই মিথ ভেঙে থিম স্টোরি বা গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছে সােদপুর পূর্বায়নের উদয়ন সংঘ।
শনিবার মহালয়ার বিকেলে নিজেদের থিম স্টোরি প্রকাশ করেন ক্লাবের কর্মকর্তারা। যদিও তার আগে থেকেই নিজেদের পুজোর ভাবনা কি হতে চলেছে তা নানান টিজারের মাধ্যমে সােশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরে পুজোর উদ্যোক্তারা। ইতিমধ্যেই যা ভাইরাল হয়েছে এবং যাকে কেন্দ্র করে দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা দেখা দিচ্ছে।
পুজো কমিটি সূত্রে খবর এ বছর ৪৮তম বর্ষে দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দিতে থিম স্টোরির ভাবনা তারা ভাবে। যার মধ্যে দিয়ে গােটা সমাজের কাছে বাতাও দিতে চাইছে বেশ কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে। এরমধ্যে যেমন রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তেমনি রয়েছে জল অপচয় রােধ করা, প্লাস্টিক বর্জন ইত্যাদি সামাজিক বিষয়গুলি। এর সাথেও থাকছে আরও একাধিক সামাজিক বিষয়। যা চাক্ষুষ করতে এবং সংলাপের মধ্যে দিয়ে তা অনুভব করতে আসতেই হবে সােদপুরের অন্যতম এই পুজো মন্ডপে।
পুজো কমিটির সুত্রে আরও খবর এবছর তারা যে ভাবনা ভেবেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার। যেখানে দেড়শাে দুশাে বছরের একটি পুরনাে রাজবাড়ির আদলে মন্ডল গড়ে তােলা হয়েছে। যেই রাজবাড়ির কর্তা ও তার কর্মচারী রহমতের সাথেই ওই রাজবাড়িতে থাকেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সকলেই বাইরে থাকেন। পুজোর দিনে তার সকলে বাড়িতে এসে বাড়ির পুজো উপলক্ষে। এবার তাদের ভরা সংসারের নতুন অতিথি হিসেবে এসেছে করি নাত বউ। যাকে কর্তা বাড়ির ইতিহাস থেকে পুজোর নানান বিতান্ত তুলে ধরেন। আর এই কথােপকথনের মধ্যেই পরিবারের অন্য সদস্যরাও যুক্ত হয়।
যেখানেই রহমতের পুজোর আয়ােজন নিয়ে প্রশ্ন তােলা হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়। এমনকি সংলাপের মধ্যেই জল অপচয় না করা প্লাস্টিক বর্জনের মত বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে। শিল্প সংস্থা প্যান্ডােমনিয়ামের পার্থ মাইতি, পিন্টু মােল্লা ও প্রবাল সেনগুপ্ত গােটা মন্ডপটি গড়ে তুলেছে প্লাই ও অন্যান্য সামগ্রী সহযােগে। যা খালি চোখে দেখলে মনে হবে সত্যিকারের পুরনাে দিনের রাজবাড়ি। এই মন্ডপ সজ্জার মধ্যেও সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
ক্লাবের সভাপতি বরুণ ভট্টাচার্য জানান, এবার তারা শুরু থেকেই অন্যরকম কিছু করার প্রয়াস নিয়েছিল। সেই থেকেই থিম স্টোরি। আর তাদের এই ভাবনার যথাযথ যােগ্য সম্মান দেন চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য মূলত চন্দ্রমৌলি বাবুর সংলাপই পুজো মন্ডপে গল্পের মত বাজবে। তার সাথেই রবীন্দ্র সঙ্গীতা থাকছেই। যা সাউন্ড ফিউশনের শব্দ ও আলােকে আরও উজ্জ্বলময় হয়ে উঠবে। যাকে পরিপূর্ণতা দেবে প্রদীপ কামারুর সাবেকি প্রতিমা।
ক্লাবের সম্পাদক তথা পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সম্রাট চক্রবর্তী জানান, থিম ভাবনা থেকে সরে এসে তারাই হয়ত পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রথম যে থিম স্টোরি করছে। যেখানে মন্ডপের প্রতিটি অংশকে নিয়ে গল্প বলা হয়েছে। আর গল্পের পরিবেশকে তুলে ধরার জন্য কবি গান থেকে নানান সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়েছে।