• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

৯০ দশকে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে সামাজিক প্রভাব

হিন্দু মুসলিম বিভেদ বারংবার উঠে এসেছে এই সময়ের চলচ্চিত্রগুলোতে

সুব্রত রায়

৯০ দশকের বাংলা প্রকৃত পক্ষে নকশাল বাড়ীর আন্দোলনের পরবর্তী সময়ের বংলা। যেখানে কংগ্রেস সরকারের তত্ত্বাবধানে নকশাল বাড়ীর আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্য তরুণদের কখোনো ঘর থেকে খুঁজে বের করে বা রাস্তায় তাড়িয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে বা পিটিয়ে মেরে ফেলা হতো। সেই বাংলা পরবর্তী ৩৫ বছর একাধারে কমিউনিস্ট সরকারের দ্বারাই পরিচালিত হয়েছিলো। এহেন রাজনৈতিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ন নাটকীয় সময় এই ৯০ এর দশক।
৯০ দশকে সত্যজিৎ রায় ৫টি চলচ্চিত্র নির্মিত করেন। চলচ্চিত্র গুলো হলো- হিরক রাজার দেশে (১৯৮০), ঘরে বাইরে (১৯৮৪), গণ শত্রু (১৯৮৯) এবং শাখা প্রশাখা (১৯৯০)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “ঘরে বাইরে” উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে আমরা দেখতে পাই স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ ছাত্রকে পড়ালেখা ব্যতিত নেতার ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত করে ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেয়। স্বদেশীকাজ করবে বলে সে অসম্ভব ভালো ছাত্র হওয়া স্বত্তেও এন্ট্রেন্স পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। কথা প্রেক্ষিতে এও জানায় যে নিজের জীবন দিতেও সে প্রস্তুত।

কিন্তু যেই নেতা কে দেখে তার এই বোধের উদয়, সেই নেতা কিন্তু সব কিছুর বাইরে নিজের ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে খুবই সচেতন। এমন কি প্রকাশ্যে বলছেনও যে জীবন দেওয়ার মত এতো সাহস তার নেই। স্বদ্বেশী ডাক দিয়ে সবাইকে বিদেশী পন্য বর্জনে উৎসাহিত করলেও নিজে বিদেশী সিগারেট কখোনোই ছাড়তে পারবেন না তা বলছেন নির্লজ্জ্ব নির্লিপ্ততায়। এমন ধরণে স্বার্থান্বেষী মানুষের সমাগম ঐ সময়ের রাজনৈতিক ডামাডোলে খুব বেশী পরিলক্ষিত হয়। যার উল্লেখ আমরা সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র ছাড়াও তৎকালীন সাহিত্যেও দেখা যায়। যেমন সমরেশ মজুমদারের লেখা কালবেলা, কালপুরুষ, উত্তরাধিকার উপন্যাসে নকশাল আন্দোলনে সম্পৃক্ত কমিউনিষ্ট নেতা অঙ্গ হানী হয়ে দীর্ঘদিন কারাবাসের পর ফেরত আসা সত্ত্বেও তৎকালীন ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট মনভাবের মানুষরা তাকে গ্রহন করছে না। এর কারন আমরা বলতে পারি ব্যক্তি স্বার্থের কারনে রাজৈনিক নেতারা মানুষের মনে এমন বদ্ধমূল ধারনা তৈরি করে রেখেছিলো যে সাধারণ মানুষেরা প্রগতীশীল ঘটনা গুলোকে সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতির সাথে বদলে ফেলছিলো।

সুতরাং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯১৬ সালের লেখা উপন্যাসের ঘটনা পরিস্থিতি নব্বইয়ের দশকেও সমকালীন রাজনীতির সাথে সামঞ্জস্যতা ছিলো বলেই হয়তো সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র গল্প হিসেবে ঐ সময়ে বেছে নিয়ে ছিলেন। এই ছবির অন্যতম আরেকটি বিষয়বস্তু নারীমুক্তি। যা সত্যজিতের অন্য অনেক সিনেমায় বহু ভাবে উঠে এসেছে।

নারীর মুক্তিকামনা তার ভালবাসার পাত্রকে কিভাবে স্পর্শ করে, তা এই ছবিতে বিশেষভাবে পরিস্ফুট হয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যে প্রেক্ষাপটে গল্পটি লিখেছেন তখন ঘটনাটা অসাধারন কিছু হলেও ৯০ এর দশকে এই ঘটনার এমন আড়াম্বরপূর্ণ উপস্থাপন ঠিক স্বাভাবিক কোন ব্যাপার না। কারন ইতিমধ্যে ইন্দিরা গান্ধীকে দীর্ঘ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখনের সমাজ দেখে ফেলেছিলেন।

সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে নারী মুক্তির এমন বাড়াবাড়ি উপস্থাপন প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে মনে। হয়তো অল্প পরিসরে নারী মুক্তি ঘটেছিল সমগ্র ভারত জুড়ে বা হয়তো তার ব্যপ্তিও ছিল কিছু ক্ষেত্রে কিন্তু সার্বিক ভাবে নারী মুক্তি হয়তো সমাজে একটা গালভরা শব্দই হয়ে ছিলো তখন পর্যন্ত।

শান্তিনিকেতনে ইন্দিরা গান্ধীর পড়ার সময় মেয়েরা মাঠের মধ্যে সবাইকে পাত পেতে খাওয়াচ্ছে এমন ছবি আমরা দেখতে পাই। এটা কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সময়কার গল্প আর সেই ভারতেই ১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে একজন রাজ পরিবারের নারী প্রথম বারের মত অন্দর মহল থেকে বাইরে বের হয় ও রাজনীতিতে তার সম্পৃক্ততা করে এবং তার মতামতের গুরুত্ব দেয়া হবে কিনা এই ঘটনাকে এভাবে উপস্থাপন করার মানে এটা হতে পারে- তৎকালীন সময়ে মেয়েরা শারীরিক ভাবে ঘরের বাইরে বের হলেও মানুষিক ভাবে সমাজ মেনে নিতে পারিনি।

যখনই একটা রজনৈতিক অস্থিরতা তৈরী হচ্ছে কিছু সুবিধাভোগী মানুষ সব সময়ই সামনে আসছে। ছবিতে দেখতে পাই স্বদেশী আন্দোলনের নেতা বিদেশী পন্য বর্জনে মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করছে, সাধারন মানুষের ঘর সর্বস্ব পুজি পর্যন্ত আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে সেই একই ব্যাক্তি বিলেতি সিগারেট ত্যাগ করতে পারছে না। অন্যদিকে তিনি বলছেন রংপুরে দলের সেন্টার করলে ভালো হয় কিন্তু তা না করে সুখ সাওর গ্রামে সেন্টার করতে চায় কারন সে তার বন্ধুর স্ত্রীর কাছে থাকতে পারবে। নীতির আন্দোলনের ডাক দিয়ে নিজের অনৈতিক সম্পর্কে চালিয়ে যেতেও দিধা বোধ করছেন না। এই সব চিত্র ঐ সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাসের সাথে কোনভাবেই সংঘতপূর্ন নয়।

হিন্দু মুসলিম বিভেদ বারংবার উঠে এসেছে এই সময়ের চলচ্চিত্রগুলোতে। আমরা দেখতে পাই সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি একটা স্বাভাবিক ঘটনা রূপে উপস্থাপন হয়েছে অনেক জায়গাতেই। প্রথম দিকে স্বদেশী আন্দোলনে মানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহন থাকলেও পরবর্তীতে মানুষ কে জোর করে বাধ্য করা হচ্ছে এই আন্দোলনের সাথে সহমত প্রকাশের জন্য। টাকা খাইয়ে নৌকা ডুবিয়ে ক্ষতিগ্রস্থকে আবার টাকা দিয়ে সাহায্য করছে।

এই যে একটা অসাধু কাজ করার প্রবণতা সেটা ঘুরে ফিরে প্রত্যেকটা ছবিতেই দেখতে পাই ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে ও গল্পে। বাস্তব চিত্রেও ইন্দিরা গান্ধী কে যখন হত্যা করা হয়, যিনি হত্যা করেন তিনি ছিলেন তারই একজন দেহরক্ষী। সে জাতিতে ও ধর্মে ছিলেন একজন পাঞ্জাবী শিখ। আর তারই জের ধরে ৪/৫ দিনের মধ্যে দিল্লী ও মুম্বাইতে সহিংসতায় ১৭০০০ শিখ মানুষকে আহত ও নিহত হতে হয়। যদিও অফিসিয়াল তথ্যে তার সংখ্যা অনেক কম দেখানো হয়েছে। সুতারাং এখানে ধর্ম একটি বড় ভূমিকা পালন করছে একটা গোষ্টি হিসেবে। এক মানুষের দোষকে পুরো গোষ্টীর হিসেবে চালানো হচ্ছে যা তখনো ছিলো, যা আজও আব্যাহত আছে।

কলকাতায় বসবাসরত একটি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার, বাবা সুধীন্দ্র বোস, মা অনীলা এবং একটি ছোট ছেলে। হঠাৎ একদিন অনীলার কাছে একটি চিঠি আসে, ৩৫ বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া তার ছোট মামার কাছ থেকে। ৩৫ বছর পর তিনি ফিরে এসেছেন, কিছুদিন কলকাতায় তাদের বাড়িতে থাকতে চান। ১৯৫৫ সালে মামা যখন দেশ ছাড়েন তখন অনীলার বয়স মাত্র ২ বছর, তাই এ নিয়ে তার কোন স্মৃতিই নেই। তাছাড়া বর্তমানে এই ছোট মামার রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় বলতে একমাত্র সেই।

সুতরাং তার পরিচয় নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোনই উপায় নেই। স্বামী প্রচণ্ড সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠে যা কিছুটা ভর করে স্ত্রীর উপরও। আর ছোট ছেলেটি শুরু থেকে সম্ভাব্য জাল দাদুর আগমনে রোমাঞ্চ অনুভব করতে থাকে। আগন্তুক মামা মনোমোহন মিত্র কলকাতায় পৌছানোর পরই কাহিনী শুরু হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে মামা নিজের পাসপোর্ট দেখিয়ে বলেন পাসপোর্টে আইডেন্টিটি চেনা যায় কিন্তু মানুষ চেনা যায় না। তার দীর্ঘদিনের ভ্রমন অভিজ্ঞতা ও জীবন উপলব্ধির মাধ্যমে তাকে এক অন্য মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে একজন সাধারণ মানুষকে ভাবাতে বাধ্য করে। বড় পরিবার ভেঙ্গে ছোট ছোট পরিবার তৈরি হওয়া বা মানুষের পরস্পরের সাথে যোগাযোগ কমে যাওয়ার চিত্র খুব সুন্দর ভাবে এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। আত্মকেন্দ্রীকতা যে ঐ সময়ের সমাজ ব্যবস্থাপনার একটি বড় অসুখ ছিল এই উপস্থাপনায় তা পরিষ্কার ভাবে বোধগম্য হয়। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমরা ধারনা করতে পারি তৎকালীন সময়ে মানুষের মানুষীকতার গঠন। মানুষের মধ্যে সন্দেহ, অহেতুক অবিশ্বাস এর প্রতিফলন এখানে স্পষ্ট। মানবিক গুনাবলী, প্রকৃতি উন্মেষণ ও অজানাকে জানার যে বার্তা তিনি দিয়েছেন তা তৎকালীন তথা বর্তমান সময়ের জন্যও প্রযোজ্য।আধুনিকতার নামে সামাজিক যে দুরত্ব তখন মানুষ স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেছিল তার ভয়াবহতা আর কেউ বুঝে উঠতে পেরেছিলেন কিনা জানা নেই কিন্তু দুরদর্শী একজন মানুষ হিসেবে সত্যজিৎ রায়ের অন্তর্নিহিত উপলব্ধি আমাদের সামনে চলে আসে চলচ্চিত্রে তার এই উপস্থাপনা মধ্য দিয়ে।

সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণী নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের ধর্মবোধকে কিভাবে ব্যবহার করে, তা ছবিটিতে উঠে এসেছে। ছবিটি হেনরিক ইবসেনের An Enemy of the People অবলম্বনে তৈরি করা। এছাড়া ধারাবাহিক ভাবে তার বিভিন্ন চলচ্চিত্রে এই দৃশ্য উঠে এসেছে। ডাঃ আশোক গুপ্ত তার এলাকার রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে অনুধাবন করেন যে অধিকাংশ রোগীই জন্ডিসে আক্রান্ত। আর এরা বেশিরভাগই ডাক্তারের এলাকার মন্দিরের চরণামৃত পান করে রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার সন্দেহ হয়েছিলো এই রোগটি এলাকার জলের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এলাকার বিভিন্ন জায়গার জল সংগ্রহ করে তিনি শহরের ল্যাবে পাঠান এবং ডাক্তার এই রিপোর্ট নিয়ে পরবর্তী সময়ে একটি প্রতিবেদন পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। চণ্ডীপুর , মানে ডাক্তারের নিজ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ বিশেষ করে ডাক্তারের ভাই ও অন্যান্য ব্যক্তিগণ যখন বিষয়টি জানতে পারেন তখন ডাক্তারকে নানাভাবে বাঁধা দেন, যাতে এ বিষয়ে আর কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। তার কারণ মন্দিরের পবিত্র জলে রোগের জীবাণু আছে এটা জানলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ধর্ম বিভ্রম তৈরি হতে পারে।

কিন্তু ডাক্তার বিভিন্নভাবে গবেষণা করে এবং পত্রিকার সম্পাদক হরিদাস বাগচীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে, এই কাজে বাঁধা দেবার ব্যাপারে প্রত্যেকের ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত। ধর্মীয় বিভ্রম সৃষ্টিটা আদতে মুখ্য বিষয় নয়। অতঃপর ডাক্তার একটি সাধারণ সভার আয়োজন করেন। কিন্তু সে সভায়ও তার ছোট ভাই ধর্মীয় বিভ্রান্তি তুলে দিয়ে সভা পণ্ড করে দেন। তার কারণ ডাক্তার হিন্দু ধর্মীয় অনেক বিধি-বিধান মানেন না। এভাবে মৌলিক বিষয়টাই এক পর্যায়ে সবার কাছে চাপা থেকে যায়। প্রগতিশীল ডাক্তার পরিণত হন গণশত্রুতে। সিনেমার শেষটায় কিছু আশার মাঝে সমাপ্তি ঘটে।

একটা সামাজিক ব্যাধি যখন মহামারী রূপে দেখা দেয় তখন তার সমাধান হতে পারে সাধারন মানুষের সচেতনতার মাধ্যেমেই। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রগুলোর একটি ভালো দৃষ্টান্ত যে সিনেমার শেষগুলো ইতিবাচক। প্রচলিত রাজনীতির করুণ চিত্রের সহজ ভাষা “গণশত্রু” সিনেমাটি। শাখা প্রশাখা চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায় সমাজে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী রূপ তুলে ধরেছেন।

আমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ চোখের সামনে তিলে তিলে নষ্ট করে দিচ্ছি। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন বড়দের দ্বারা শিশুরা কত প্রভাবিত। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে সত্যজিৎ রায় আধুনিক সমাজের প্রতিটি স্তরে দূর্নীতির স্বরুপ ফুটিয়ে তুলেছেন। সিনেমাটিতে আনন্দ মজুমদার একজন সৎ ও প্রভাবশালী ব্যাক্তি। তাকে সকলে সমানভাবে শ্রদ্ধা করে, কারন তার জীবনে অসততার কোন নজির নেই।

আনন্দ মজুমদারে ধারণা তার চার ছেলে তার আদর্শ পেয়েছে। আদতে তার ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। তার ২ টি ছেলে নানান ভাবে সম্পদের পিছে ঘুরে ও ক্ষমতার সন্ধানে অদর্শগত জায়গা থেকে সরে আসে। অতঃপর ক্ষমতা আর সম্পদের পিছে ছুটে সবাই এখন দুর্নিতিগ্রস্থ। শাখা প্রশাখা সিনেমার শেষ একটি দৃশ্যে দেখা যায় খাওয়া টেবিলে বসে তারা পরস্পরের দোষ নিয়ে উচ্চ স্বরে কথা বলে একে অন্যকে নিন্দা করছে।

তাদের এই সম্পূর্ণ কথোপকথনটি পর্দার আড়াল থেকে অবোলোকন করছে তাদের ছোট ছেলেটি। তাদের কথায় বারবার উঠে আসে এক নং ও দুই নং কাজ ও পথের কথা। যার মাধ্যমে তারা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। কিছু পরের একটি দৃশ্যে ঐ ছেলেটিকে তার দাদা কে বলতে শোনা যায় সে দুই নম্বরও জানে। এটি আসলে আমাদের জন্য খুবই সুস্পষ্ট একটি বার্তা ছিল যে আমারা আমাদের সমাজকে যে অবস্থায় রেখে যাচ্ছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ঠিক তার পর থেকেই কাজ করা শুরু করবে। যে অবস্থা আমারা বর্তমানে উপলব্ধি করছি আমাদের বর্তমানের কার্যক্রম থেকে।

৯০ এর দশকের শুরুতেই টেলিভিশনের আমদানি শুরু হয় ঘরে ঘরে। যার প্রভাবে সিনেমা পৌছে যায় সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি। এই মাধ্যমের জনপ্রিয় হওয়ার কারণেই অনেক পরিচালক এই সময়ে দারিত্বশীলতার জায়গা থেকে সরে এসে জনপ্রিয় ও সাধারণ মানের ছবি নির্মান শুরু করেন। সত্যজিৎ রায় সম্পুর্ণ তাদের পথের অনুসারি না হলেও খুব বেশী আলাদা পথে হাটেননি। শুধু তার দর্শনের জায়গাটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি নিজের দায়িত্ববোধ থেকে সরে না যেয়ে বরং ঐ সময়ের উল্লেখিত ও সাধারণ এবং জনপ্রিয় সমস্যাগুলোকেই আমাদের সামনে শুধু তুলেই ধরেনি দেখিয়েছেন সমাধানের পথও। তাই তার ঐ সময়ের সিনেমাগুলো হয়ে আছে তার সময়ের সামাজিক অবস্থা ও প্রতিবান্ধকতার অকাট্য দলিল।