রেকর্ড ভোটে জিততে চলেছেন দিনহাটার সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সঙ্গীতা রায়। কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এবং প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ভোট শেষে এই দাবি করলেন।
সিতাই বিধানসভা উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে জেলার প্রথম সারির নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, এই উপনির্বাচনে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তাদের দলীয় প্রার্থী সঙ্গীতা রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করবেন। যা হবে একটি রেকর্ড । এখানে উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়া এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০ হাজার ভোটে জয়ী হন। এবছর লোকসভা ভোটে তিনি দলের হয়ে সাংসদ পদে প্রার্থী হলে ২৯ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেন। তার পদত্যাগের কারণে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থী হন তারই স্ত্রী সঙ্গীতা রায়। এদিন দিনভর ভোট চলাকালীন বিক্ষিপ্ত কয়েকটি অভিযোগ ছাড়া কোথাও তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
কার্যত নিঃশব্দে আরেকটি ভোট উৎসব শেষ হলো দিনহাটার সিতাইয়ে। বুধবার রাজ্যের ছয়টি কেন্দ্রের সঙ্গে দিনহাটার সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রেও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধীদের অবাধ ছাপ্পা ভোটের অভিযোগের মধ্যেই শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি করা হয়। তিন লক্ষাধিক ভোটারের এই কেন্দ্রে এদিন বেলা পাঁচটা পর্যন্ত ৬৬.৩৫ শতাংশ ভোট দাতা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন বলে জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক অঙ্গীরা দত্ত জানান। এদিন দিনহাটা মহকুমার অন্তর্গত সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে ভোট চলাকালীন বিরোধীদের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ উঠে আসে। খালিসা গোসানিমারীর ৬/১০৪ নং বুথে ভোট কেন্দ্রে বসে থাকা বিজেপি এজেন্টকে তৃণমূল নেতা দিনহাটা পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মতিউর রহমান ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে ভোট কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন এবং সেইসঙ্গে তার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেন। এ সম্পর্কে মতিউর রহমান অবশ্য কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। এ সম্পর্কে এলাকার সাংসদ জগদীশ বর্মা বসুনিয়া বলেন, বিরোধীরা এজেন্ট খুঁজে না পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের উপর দোষারোপ করছে। ভোট কেন্দ্রে বসানোর মত এজেন্ট তাদের নেই। তাই তুলে দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। এ নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ও দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বিরোধীদের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন, বিরোধীরা আগেই যদি তৃণমূল নেতাদের জানাতেন যে তাদের এজেন্ট প্রয়োজন সে ক্ষেত্রে তা জোগাড় করে দেওয়া যেত।
দিনহাটা ১ নং ব্লকের অন্তর্গত বড় শৌলমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন একটি বুথে ইভিএম মেশিনের এক ও দুই নম্বর বোতাম সেলোটেপ দিয়ে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। এরপরে ভোটারদের অনেকেই বাধ্য হন অন্য বোতামে ভোট দিতে। অন্যদিকে, দিনহাটা শহর সংলগ্ন ঝুড়িপাড়ায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ফরকার বাজার এলাকায় একশ্রেণীর ভোটারকে ভোট কেন্দ্রমুখী হতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে এই বুথে ভোট দিতে আসা মহিলা ও পুরুষ ভোটাররা ভোট না দিয়েই ফিরে যান। এদিকে, উপনির্বাচনের এই ভোটকে কেন্দ্র করে যাতে কোথাও কোন অশান্তির সৃষ্টি না হয় তার জন্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। দিনহাটার সীমান্ত গ্রাম গিতালদহের দুর্গম এলাকা জারিধরলা ও দরিবস গ্রামেও এদিন ভোট গ্রহণ করা হয়। একাধিক নদীর চড়াই উতরাই অতিক্রম করে মঙ্গলবার ভোটকর্মীরা কখনো নৌকায় কখনো বা বালির চর ভেঙে কাঁটাতারহীন বাংলাদেশ ঘেসা এই দুই গ্রামে পৌঁছায়। সেখানেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররা নির্বিঘ্নে এবং উৎসবের মেজাজে ভোট দেন বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। যদিও এই নির্বাচনকে ঘিরে সর্বোপরি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোটের আগে তেমন উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি।