ক্যারাটে শেখানোর অজুহাতে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, অভিযুক্ত প্রশিক্ষক

Representational image.

প্রশিক্ষণ দেওয়ার বাহানায় নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল এক ক্যারাটে প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটে শিলিগুড়ির চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। অভিযোগ, ওই ক্যারাটে প্রশিক্ষক তিন বছর ধরে নাবালিকাকে নির্যাতন করেছে। নির্যাতিতা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। রবিবার প্রধাননগর থানায় চার পাতার লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে নির্যাতিতা। অভিযোগের ভিত্তিতে পকসো আইনে মামলা করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, আখড়া বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছে অভিযুক্ত রামচন্দ্র ছেত্রী।

নির্যাতিতা জানিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই ক্যারাটের প্রতি আগ্রহ আছে। ছোট একটি সবজির দোকান চালায় বাবা। যার জেরে পরিবারে অভাব রয়েছে। অভাব থাকলেও মেয়ের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েছেন বাবা। তিন বছর আগে মিলন মোড় এলাকায় রামচন্দ্রের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দেন বাবা।

নির্যাতিতার অভিযোগ, প্রথম দিকে সব ঠিকঠাক ছিল। প্রশিক্ষণ শুরুর বছর খানেক পর থেকে রামচন্দ্রের আচরণে পরিবর্তন নজরে আসে। তখন থেকে নানা অজুহাতে খারাপভাবে তার শরীরে স্পর্শ করতে থাকে প্রশিক্ষক। যতদিন গিয়েছে অত্যাচার বেড়েই চলেছিল। বিভিন্ন সময় তাকে একা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ডেকে যৌন নিগ্রহ করে রামচন্দ্র।


নির্যাতিতার কথায়, ‘প্রথমে ভয়ে, লজ্জায় কাউকে কিছু বলা হয়নি। একবার পড়াশোনার চাপের কথা বলে প্রশিক্ষণ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি তুললে বাবা মন খারাপ করেন। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাই।’ ২০২৩ সালে একটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য নির্যাতিতাকে জাপানে নিয়ে গিয়েছিল রামচন্দ্র। অভিযোগ, সেখানে নিয়ে গিয়েও তার উপর একাধিকবার যৌন নির্যাতন চালানো হয়। আর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কিছুদিন আগে মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা জানায় নাবালিকা। তারপরই লিখিত অভিযোগ করা হয়। নির্যাতিতা বলছে, ‘অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি চাই।’ তার বাবারও বক্তব্য, ‘পুলিশ অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করুক আর কঠোর শাস্তি দিক।’

চম্পাসারির একটি ক্লাবের সভাপতির পদে ছিল অভিযুক্ত ক্যারাটে প্রশিক্ষক। মঙ্গলবার ঘটনার কথা সামনে আসতেই তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ক্লাবের সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে আরজি করের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে মিলন মোড় এলাকায় মিছিলের আয়োজন করে রামচন্দ্র। সেই ব্যক্তির যৌন নির্যাতনে জড়িত থাকার কথা ছড়াতেই এলাকায় বাড়ছে ক্ষোভ। চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জনক সাহা বলেন, ‘শিক্ষক বাবার মতো। সন্তানসম ছাত্রীর সঙ্গে যদি ওই ধরনের কুকর্ম করে থাকে তাহলে তা ক্ষমার অযোগ্য। এখন আমরা জানতে পারছি আরও কয়েকটি মেয়ের সঙ্গেও রামচন্দ্র একই কাজ করেছে। বাধ্য হয়ে তারা মাঝপথে প্রশিক্ষণ ছেড়ে বেরিয়ে আসে।’

উল্লেখ্য, অভিযুক্তের সঙ্গে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্ত এবং একাধিক বিজেপি নেতার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।