রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে দ্রুত তদন্ত চাইলেন সিব্বাল

আইনজীবী কপিল সিব্বাল।

টানা দুদিন ধরে শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে আরজি কর হাসপাতাল মামলার শুনানি চলে সুপ্রিম কোর্টে। আদালতের নির্দেশে সিবিআইকে এর তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরজি কর কাণ্ডের পর ৯০ দিন কাটতে চলেছে। এখনও পর্যন্ত সুরাহা হয়নি। বিচার পাননি নির্যাতিতার পরিবার। সেই আবহে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আর জি কর মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি উঠছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টেও সেই দাবি উঠল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্যত্র মামলা সরানোর অনুরোধ গৃহীত হল না শীর্ষ আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে, মামলা স্থানান্তরিত করলে নিম্ন আদালতের প্রতি সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হবে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, ‘এভাবে নিম্ন আদালতকে সন্দেহ করা উচিত নয়। জেলা আদালতে শুনানি শুরু হতে চলেছে। বাকিদের ভূমিকা বিয়ে তদন্তের প্রয়োজন মনে করলে, নিম্ন আদালতের সেই নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, তাতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না।

আগামী ১১ নভেম্বর থেকে নিম্ন আদালতে চার্জগঠন এবং শুনানি হতে চলেছে আরজি কর কাণ্ডে। তাই নিম্ন আদালত চাইলে তেমন নির্দেশ দিতে পারে বলে জানায় আদালত’। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই তদন্তের ওপর নজর রাখছে এবং দ্রুততার সঙ্গে মামলাটি শেষ করার কথা বলেছেন।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ‘কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সপ্তম স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে হবে’। এই মামলায় সিবিআই ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে, যা আদালতকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত করেছে। এই মামলার প্রসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতকে জানান যে, ‘রাজ্য দ্রুত তদন্তের পক্ষপাতী’।


তাঁর মতে, ‘এই মামলার দ্রুত সমাধান এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ’। এই মামলার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং তাদের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন। আদালত সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগের সময় তাঁদের পূর্ব অপরাধমূলক তথ্য যাচাই করা হচ্ছে কিনা? সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সিভিক ভলান্টিয়ারদের নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছে। আদালত জানতে চায়, সিভিকদের নিয়োগের সময় কী ধরনের মানদণ্ড অনুসরণ করা হচ্ছে এবং তাঁদের অতীত অপরাধের বিষয়টি কীভাবে যাচাই করা হচ্ছে।

এছাড়া, সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জাতীয় টাস্কফোর্সের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে, যা আদালতকে এই মামলার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে সহায়তা করবে। এই রিপোর্টে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহারে এবং তাদের কার্যক্রমে নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে বিভিন্ন পক্ষ তাদের মতামত তুলে ধরেছে এবং আদালত বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট গভীরতায় আলোচনা করেছে। সিবিআইয়ের তদন্তে দ্রুততার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে এই মামলার শুনানি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে আদালত সিবিআইয়ের জমা দেওয়া স্টেটাস রিপোর্ট দিতে বলেছে।