রতন টাটার মৃত্যুর পর সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে টাটা গোষ্ঠীকে ফেরানোর কথা বললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরে আবার টাটা গোষ্ঠীকে ফিরিয়ে আনা হবে বলে দাবি করলেন তিনি। সিঙ্গুরে আয়োজিত একটি সভায় এই দাবি করেন এই বিজেপি নেতা। সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় শুভেন্দু অধিকারী মমতার ‘সৈনিক’ ছিলেন বলে এদিন কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এখনও ক্ষমতায় না এসেই এই প্রতিশ্রুতি শুভেন্দুর মুখে সাজে না। রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে বিজেপিকে এখনও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। তাই ক্ষমতায় এলে টাটা গোষ্ঠীকে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি হাস্যকর বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ।
এদিন শুভেন্দু অভিযোগ করেন, সিঙ্গুরে শিল্পও হয়নি। কৃষিও হয়নি। তাঁর কথায়, ‘ভাতা কোনও সমাধান নয়, কর্মসংস্থান আর সরকারের রাজস্ব বাড়াতে গেলে প্রয়োজন শিল্পের। আমার দম আছে, তাই অকথিত তথ্য দিচ্ছি। সিঙ্গুরে টাটার কারখানার বিরোধিতা করার কথা মুখ ফুটে বলতে পারিনি। তৃণমূল দলের মধ্যেই ছিলাম ঠিকই, কিন্তু এই ধ্বংসযজ্ঞে সামিল হইনি। ২৬ দিনের স্যান্ডুইচ-চকলেট খাওয়া অনশনে একমাত্র বিধায়ক আমি, যে যাইনি।’
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ন্যানো কারখানার জন্য সিঙ্গুরে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সেই সময় কৃষকরা অভিযোগ করেছিলেন তাঁদের জমি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এরপরই গড়ে ওঠে সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। ধীরে ধীরে এই আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনের ঝাঁঝ বাম সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। কৃষকদের হয়ে মমতা আন্দোলন রাজ্যজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সেই সময় তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মাঝে কেটে গিয়েছে ১৮ বছর। বর্তমানে শুভেন্দু বিজেপির বিধায়ক। এছাড়াও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। এই গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে ফের টাটাকে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করতে গিয়ে সিঙ্গুরের গণআন্দোলনকেই শুভেন্দু কটাক্ষ করেছেন বলে দাবি করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এদিন শুভেন্দু বলেছেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে হাতে-পায়ে ধরে টাটাকে ফেরাব। টাটা ছাড়া শিল্প হয় না। শপথ করছি, আমরা ক্ষমতায় এলে আপনার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসব।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় সড়ক বন্ধ করে নেচেছে, গেয়েছে। বুদ্ধবাবু যদি মমতাকে মেরে তুলে দিতেন, তাহলে সিঙ্গুরের এই অবস্থা হত না। জ্যোতিবাবু থাকলে হত না এমন। একটা কারখানাকে ভেঙে তুলে দিল, অন্তরটা জ্বলে যেত।’
এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘তিনফসলি কৃষিজমি জোর করে সস্তায় দখল করে বেসরকারি কোম্পানিকে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এটা সেই জমি-নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ছিল। টাটাদের সরানোর লড়াই ছিল না। সিপিএমের ভুল নীতি ও জেদে টাটাদের সরে যেতে হয়েছিল। সে সময়ে সিঙ্গুর আন্দোলনে শুভেন্দুবাবু ছিলেন তৃণমূল দলের হয়ে। ২০০৯ সালে এই আন্দোলনের উপর দাঁড়িয়ে লোকসভার সাংসদও হয়ে যান। এখন উনি বিরোধী দলে গেছেন বলে এসব কথা বলছেন। এত বছর পরে এর দাম নেই।’