গার্ডেনরিচ কাণ্ডে পুরসভার ৩ ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ

গ্রেফতার হওয়া প্রোমোটারের বিরুদ্ধে খুনের মামলা

নিজস্ব প্রতিনিধি— গার্ডেনরিচের ঘটনা শোরগোল ফেলে দিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে৷ ইতিমধ্যে এই ঘটনায় সুয়োমেটো মামলা দায়ের করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে৷ প্রোমোটারকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তিন ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ করেছে কলকাতা পুরসভা৷ গার্ডেনরিচের ঘটনা প্রোমোটার সহ অন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ ঘটনার তদন্তে নেমেছে ডিডি হোমিসাইড শাখা৷ পুরসভা ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ায় আটজনের মৃতু্য হয়েছে৷ এই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১৫ নম্বর বরো এলাকার মধ্যে পড়ে৷ওই বরোর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ করা হয়েছে৷ পুরসভা সূত্রে খবর, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান জানাতে বলা হয়েছে তাঁদের৷ সময়ের মধ্যে তাঁরা যদি সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে৷ কোন ওয়ার্ডে কত বেআইনি বাড়ি আছে, তা চিহ্নিত করা তাঁদের দায়িত্ব ছিল৷ সেই কাজে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করছে কলকাতা পুরসভা৷ এই তিন ইঞ্জিনিয়ার তাঁদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি৷ এই প্রসঙ্গে, কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাড়িটা উঠল কী করে? এই ধরনের বেআইনি বাড়ি নির্মাণের শুরুতেই আটকে দিতে না পারলে, বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে মানুষ সেখানে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক৷ তাই শুরুতেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল৷ ‘টক টু মেয়রে’ একথা বার বার বলেছি৷ এদিকে, যে তিনজন ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ করা হয়েছে, তাঁদের ঘনিষ্ঠমহল বলছে, বাড়িটা ভিতরের দিকে ছিল, সে কারণে নজর এড়িয়ে যায়৷

এদিকে সোমবার সকালে দুবাই থেকে কলকাতায় ফিরেছেন পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সামস ইকবাল৷ দুবাই থেকে কলকাতায় ফিরে দুপুরে ঘটনাস্থলে যান৷ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এই সামস ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন৷ কারণ, কয়েক বছর আগে কলকাতা পুরসভায় একটি লাল রঙের অ্যাস্টন মার্টিন গাড়ি চড়ে এসেছিলেন সামস৷ এই গাড়িটির দাম ছিল বেশ কয়েক কোটি টাকা৷ সম্প্রতি ৫ কোটি টাকা দিয়ে একটি বেল্টলে গাড়ি কিনেছেন কাউন্সিলর৷ সেই গাড়ির ছবি দিয়ে টু্যইট করেছেন শুভেন্দু৷ সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, এই টাকার উৎস কী? শুভেন্দু অধিকারী এক্স হ্যান্ডেলে সামস ইকবালের বিরুদ্ধে লিখেছেন, বেআইনি নির্মাণের অবিসংবাদিত রাজা সামস৷ যে মানুষগুলো ধ্বংসস্তূপের নীচে জীবন-মৃতু্যর সঙ্গে লড়াই করছে, তাঁদের জীবনের মূল্যে এই সামস ইকবালের বেড়ে ওঠা৷


এই জমিতে পাঁচতলা ফ্ল্যাট তৈরির কোনও অনুমতি ছিল না৷ প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম নিজেও জানতেন৷ সেকথা তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন৷ সে কারণেই অনুমতি ছাড়া বাড়ি তৈরি শুরু করেছিলেন৷ যে বহুতল ভেঙে পড়ল, সেই বহুতলের ভার বহনের যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল না৷ সেই কারণেই এই বিপর্যয়৷ যাঁর জমিতে এই বহুতল তৈরি হয়েছিল, তিনি দ্রুত ফ্ল্যাটের জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন৷ সে কারণে ফ্ল্যাটের নীচের তলা তৈরির আগেই উপর তলার কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছিল৷ গ্যারেজের উপরে চারটি তলা ছিল৷ মোট ১৬টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছিল৷ প্রতি বর্গফুটের দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা৷ একেক তলায় চারটি করে ঘর৷ যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে সাত-আট বছরের পুরনো একটি দোতলা বাড়ি ছিল৷ সেই বাড়ির উপরে আরও দুই থেকে তিনতলা নির্মাণের চেষ্টা করেছিলেন বাড়ির মালিক ও প্রোমোটারা৷ বাড়ির ভিত দোতলার বেশি ছিল না৷ সে কারণে বরো অফিস থেকে বাড়িটির উপর নতুন করে তল যাতে না করা হয়, সেকথাই বলা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত কোনও অনুমতি ছাড়াই নতুন করে তল বৃদ্ধি করায় এই বিপর্যয়৷