• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

বহরমপুরে তৃণমূল নেতা প্রদীপ দত্ত খুনে ভাড়া করা হয় দুই ‘শার্প শ্যুটার’, চলে রেইকি

রাধার ঘাট এলাকার একটি সরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় খুব কাছ থেকে গুলি করে আততায়ীরা। এরপর দ্রুত পালিয়ে গা ঢাকা দেয়। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আততায়ীদের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।

প্রতীকী চিত্র

বহরমপুরে তৃণমূল নেতা প্রদীপ দত্ত খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য এলো পুলিশের হাতে। পুলিশ জানতে পেরেছে, খুনের পিছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ ছিল না। ছিল ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। সেজন্য এই তৃণমূল নেতাকে খুনের জন্য দুই ‘শার্প শ্যুটার’কে ভাড়া করে শত্রুপক্ষ। কাজ সুষ্ঠূভাবে সম্পন্ন করার জন্য পাড়ার একটি ছেলেকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর। প্রদীপ দত্তকে খুনের জন্য শত্রুপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা চালাচ্ছিল। নিহত তৃণমূল নেতার চলাফেরা বা গতিবিধির ওপর তীক্ষ্ন নজর রাখছিল দুষ্কৃতীরা। কখন তিনি বাড়ি থেকে বেরোন, কখন বাড়ি ফেরেন, এমনকি প্রাতঃ ভ্রমণে বেরোনো থেকে শুরু করে কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরা, সব কিছুর ওপর নজরদারি করা হয়। খুনের সময় জরুরি পরিস্থিতিতে ‘এক্সিট রুট’ জানতে রেইকি করে দুষ্কৃতীরা। আর রেইকির দায়িত্বেও ছিল পাড়ার ওই ছেলেটি।

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটে। এবিষয়ে আমরা নিশ্চিত। গত কয়েক বছরে প্রদীপ দত্ত এলাকায় জমি জমার ব্যবসা করে বেশ লাভবান হয়েছিলেন। ইদানীং তিনি প্রোমোটারি ব্যবসাও শুরু করছিলেন।

জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেতা প্রদীপ দত্ত সম্প্রতি প্রোমোটারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। সেই কারণে তাঁর সঙ্গে স্থানীয় কিছু জমির দালালের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আচমকা এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতেই বেশ কিছু লোকের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি হয়। ফলে তিনি বহরমপুরের জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকায় একটি জমি কেনাবেচা নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে জাতীয় সড়কের ধারে প্রদীপের মালিকানাধীন একটি নির্মীয়মান প্রজেক্টের কাজ চলছিল। সেটিকে কেন্দ্র করে একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর সংঘাত বাধে। তাঁকে খুনের জন্য ‘শার্প শুটার’ ভাড়া করা হয়েছিল এটা নিশ্চিত। এবং এজন্য মোটা অঙ্কের টাকার বরাত পেয়েছিল দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে এই চুক্তি হয়। শুক্রবার ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃত ওই যুবকের নাম বুবাই দাস। পুলিশি জেরায় ইতিমধ্যেই সে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীই তাঁকে খুনের সুপারি দিয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বুবাইকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।

অভিযুক্ত বুবাই বহরমপুর পুরসভার সাফাই কর্মীদের সুপারভাইজার। তার বাবা রাধারঘাট এলাকায় জুতো সারাই করেন। তদন্তে পুলিস জানতে পেরেছে, এই বুবাইয়ের সাহায্যেই মূল অভিযুক্তরা খুনের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে। প্রদীপবাবুর বাড়ি ও তার দোকান তারা দেখে গিয়েছিল। বেশ কয়েকবার গোয়ালজান এলাকায় রেইকি করে তারা। তারপরই ভোরের দিকে অপারেশন চালানো হয়। কাজ সম্পন্ন করার জন্য বুবাইকে মোটা টাকার টোপ দেওয়া হয়। সেই টাকা পাওয়ার আশায় সে প্রদীপ দত্ত সম্পর্কে খুনিদের বিস্তারিত তথ্য দেয়। যদিও খুনের পর টাকা পাওয়ার আগেই সে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। শুক্রবার ভোরে পুলিশ তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে পাকড়াও করে।

উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে এই তৃণমূল নেতার খুনের ঘটনা ঘটে গত মঙ্গলবার। ঘটনার সময় তিনি প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। রাধার ঘাট এলাকার একটি সরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় খুব কাছ থেকে গুলি করে আততায়ীরা। এরপর দ্রুত পালিয়ে গা ঢাকা দেয়। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আততায়ীদের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।

এবিষয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাজিদ ইকবাল একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল নেতা খুনে একজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আততায়ীদের সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সে নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলব না। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।’