উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরুর দিন সোমবার রাজ্যজুড়ে সিপিএম সহ অতি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি যে কাণ্ড করেছে, তা বলতে গেলে নজিরবিহীন। অনেকেই মনে করছে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ওপর হামলার ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতেই বাম সংগঠনগুলি ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মতো এত বড় একটা শিক্ষাযজ্ঞ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, অর্থাৎ গৌণ। মুখ্য হল, রাজনীতি।
বামেরা আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গ্রেপ্তার দাবি করেছে। তাঁর অপরাধ? শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি এক ছাত্রকে চাপা দিয়েছে। তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। অবশ্যই আমরা আহত ছাত্রের দ্রুত আরোগ্য কামনা করব। কিন্তু চলন্ত গাড়িতে উঠে পড়ে যারা হামলা চালাল, ড্রাইভারকে ঘুঁষি মারল, ব্রাত্যবাবুকে হেনস্থা করল, তাদের অপরাধের কী হবে? শাস্তি হবে না? রেহাই পাননি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। তাঁদের ওপরও হামলা হয়েছে। একটি অফিস গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য শিক্ষাক্ষেত্রে এরকম ঘটনার নজির বামেদের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি আছে। আশির দশকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সন্তোষ ভট্টাচার্যের ওপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনা আমরা ভুলে যাইনি। বামপন্থী মনোভাবাপন্ন মানুষ ছিলেন সন্তোষবাবু। কিন্তু আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সব নির্দেশ, বিশেষ করে অন্যায় এবং অন্যায্য কিছু দাবি তিনি মানতে চাননি। আর সেই অপরাধে প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে বিক্ষোভের নামে তাঁকে চরম হেনস্থা করা হয়েছে। এমনকি চায়ের ভাঁড় ছুঁড়েও সন্তোষবাবুকে মারা হয়েছিল।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই সহ-উপাচার্যের হালও তাঁর মতোই হয়েছিল। তাঁরাও সিপিএমের কথামতো চলতে চাননি। ভারত বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অম্লান দত্তকে নিজের চেম্বারে ঘেরাও করে অকথ্য গালিগালাজ, তাঁর চেয়ার তুলে দোলানোর মতো ঘটনা ঘটেছিল। প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। অম্লানবাবু তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী উপাচার্য ছিলেন।
বিশিষ্ট চিন্তাবিদ এবং বামপন্থী ঘরানার মানুষ ভারতী রায়ের ওপর যে ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছিল, তা কি আমরা ভুলে যাব? তিনিও ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য। সিপিএমের ক্যাডাররা ভারতীদেবীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গায়ে হাত তুলেছিলেন। তাঁর শাড়ি টেনে খুলে দেওয়া হয়েছিল দিনেদুপুরে কলেজ স্ট্রিটের রাস্তার ওপর।
বাম আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে সেই বিভীষিকার রাজত্ব কি ফিরিয়ে আনতে চাইছে সিপিএম? ব্রাত্য বসুর পাশে রাজ্য সরকারের আর এক মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হেনস্থা হয়েছিলেন।
আসলে সিপিএম সহ অতিবাম কিছু ছাত্র সংগঠন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে। এর উদ্দেস্য হয়, শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে প্ররোচিত করা। যাতে তারা পাল্টা হামলার পথে চলে। আর শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়। তাদের এই অপচেষ্টা রুখতে কেবল প্রশাসন নয়, সাধারণ ছাত্র সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।