নার্সের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য, ‘ভয় করছে’ উদ্ধার চিরকুট নিয়ে ঘনীভূত রহস্য

শিলিগুড়ির মিলন পল্লিতে নার্সিংহোমের আবাসনে এক নার্সের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মৃত তরুণীর নাম অর্চনা থাপা (২৫), যিনি দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা হলেও এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই নার্সিংহোমে কর্মরত ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয়রা দাবি করেছেন যে, মৃতদেহ লোপাটের চেষ্টা করা হয়েছিল এবং আবাসনের ভিতরে অসামাজিক কার্যকলাপেরও অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে রাতভর উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, যার জেরে স্থানীয়দের রোষ গিয়ে পড়ে একটি বাইকের উপর। আবাসনের এক নার্স জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে অর্চনা ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং ভেতর থেকে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দেন। অনেক চেষ্টা করেও তিনি দরজা খোলেননি। তাঁর মোবাইলও বন্ধ ছিল। বাথরুমের দরজা ভেঙে দেখা যায়, তিনি শাওয়ারের সঙ্গে টাওয়াল পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এরপরই সিনিয়র কর্মকর্তাকে খবর দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা পিন্টু দত্ত বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই বাইরের লোকের আসা-যাওয়া চলছিল। কিন্তু কী ঘটেছে জানতে চাইলে কেউ কিছু বলেনি। হঠাৎ দেখি নার্সদের বের করে দেওয়া হল। তারপর একটি অ্যাম্বুল্যান্সও এসে ফিরে গেল। আমরা পুলিশকে খবর দিই এবং পুলিশ আসার পর আমরা আবাসনের ভিতরে জোর করে ঢুকে বাথরুমে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাই।’

নার্সের মৃত্যুর তদন্তে নেমেই একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এই চিরকুটটিকে সুইসাইড নোট হিসেবে ধরা হলেও চিরকুটের শেষ একটি লাইন এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। চিরকুটের শেষে লেখা রয়েছে, ‘আমার প্রচণ্ড ভয় করছে।’ যদিও চিরকুটের অন্যান্য লাইনে লেখা রয়েছে, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসার কথাও লেখা রয়েছে তাতে। কিন্তু কেন ভয় পেয়েছিলেন ওই নার্স? এই বিষয়টিই ভাবাচ্ছে তদন্তাকীর আধিকারিকদের।


স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, আবাসনে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই। সিসিটিভিও লাগানো হয়নি। ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার জয়ন্ত সাহা বলেন, ‘এলাকাবাসীকে না জানিয়ে দেহ সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল, তবে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে তা ঠেকানো গেছে। পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পর উত্তেজিত স্থানীয়দের সামলাতে বেগ পেতে হয়। শিলিগুড়ি থানার আইসি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস এবং খালপাড়া ফাঁড়ির ওসি সুদীপ দত্ত সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে নার্সিংহোমের কর্মীরা মৃতার তথ্য দিতে দেরি করায় পুলিশকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার সীমা সাহা জানান, এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দরকার। সকাল থেকে আবাসনে কারা এসেছিল, এ সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।