জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন কর্মসূচিকে ফের পূর্ণ সমর্থন জানালেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। শুধু সমর্থন জানানোই নয়, অনশনে বসতে চলেছেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও। রবিবার একথা জানান সিনিয়র চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। ‘আমরণ অনশন’- কর্মসূচিকে তাঁরা যে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করছেন, এ দিন তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। অন্যদিকে, রবিবারই জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর একটি প্রতিনিধি দল জয়নগরের উদ্দেশে রওনা হয়। সিনিয়র চিকিৎসকদের তরফে উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘জয়নগরের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন আরও সক্রিয় হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটত না।এই শিশুর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে আমরা জয়নগরে যাচ্ছি।’
দাবি পূরণে সরকারের উপর চাপ জারি রাখতে এবার আমরণ অনশন শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা । রিলে করে ৬-৭ জন জুনিয়র চিকিৎসক প্রতিদিন অনশন করছেন। শনিবার এই আন্দোলন শুরুর আগেই তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন, অনশন করতে গিয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। তাঁদের এই অনশনকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেছেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও। প্রসঙ্গত ,আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনের শুরু থেকেই জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে রয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। এবার জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন কর্মসূচির পাশে থাকার কথাও জানিয়ে দিলেন তাঁরা। জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরসদের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে অনশনে বসবেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও। জুনিয়রদের এতদিনের আন্দোলনকে তাঁরা ব্যর্থ হতে দেবেন না। তবে কবে থেকে এবং কোথায় তাঁরা অনশনে বসবেন তা স্থির হবে রবিবার সন্ধ্যার পর। তারপর ঘোষণা করা হবে।
জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার পরামর্শ দিলেও আন্দোলন থেকে সরে না আসার বার্তা দিয়েছিলেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। সেই মতো ওপিডি থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত কাজ করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। এবার তাঁদের অনশন কর্মসূচির পাশে দাঁড়ালেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরসদের তরফে এই অনশনকে সমর্থন জানিয়ে সিনিয়র চিকিৎসক ছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মী, এবং নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। অনশনে ভলান্টিয়ার চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন সিনিয়র চিকিৎসকরা।
জুনিয়র চিকিৎসকদের সমর্থনে রবিবার সকাযে অনশনমঞ্চে উপস্থিত হন সিনিয়র চিকিৎসকরা। দুপুরেই তাঁরা অনশনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। তবে তাঁরা একই মঞ্চ ভাগ করে নেবেন , নাকি তাঁদের অনশনমঞ্চ পৃথক হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে শনিবার জয়নগরের কুলতলিতে ৯ বছরের নাবালিকার ধর্ষণ-খুনের ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সিনিয়র চিকিৎসকদের ১২ জনের একটি দল রবিবার ঘটনাস্থল মহিষমারি গ্রামে রওনা হন পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। তার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধ যেখানেই সংঘটিত হবে, আমরা সেখানেই যাব। এটাই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। প্রশাসন আগে থেকেই সতর্ক হতে পারত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক থাকলে এমন ঘটে না। এখানেই ব্যর্থ প্রশাসন।’
জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন কর্মসূচি এবং তাতে সিনিয়রদেরও যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে ফের অনিশ্চয়তার মেঘ বঙ্গের শারদ আকাশে। এর জেরে পুজোর দিনগুলিতে সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হলে সমস্যায় পড়বেন সাধারণ, দরিদ্র রোগীর পরিবারগুলি। এই নিয়ে বারংবার সতর্ক করেছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু এরপরেও সিনিয়র চিকিৎসকদের অনশনে সামিল হওয়ার ঘোষণায় কার্যত প্রশ্নের মুখে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা।