বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানো হোক, বিধানসভায় বললেন মুখ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান কী, এই নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছিল বিরোধী দলগুলি। এমনকি বাংলাদেশে হিন্দু অত্যাচারে তৃণমূলের পথে না নামা নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই পরিপেক্ষিতে চলতি অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও হিন্দু সহ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য শান্তি বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার সময় এমনই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী। চাইলেন রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপও। তাঁর কথায়, ‘আমরা প্রস্তাব দিলাম। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিন। রাষ্ট্রসংঘের নজরে আনা হোক বিষয়টি। কেন্দ্র রাষ্ট্রসংঘের কাছে আবেদন করুক, শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য।’

বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে নবান্নের কী অবস্থান, তা জানার ব্যাপারে দুই বাংলার মানুষেরই আগ্রহ রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ পড়শি রাষ্ট্র। দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা লাগাতার আক্রমণ ও অত্যাচারের মুখে পড়লে পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তি যেভাবে মাথা তুলছে, তা পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও আশঙ্কাজনক। এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব এদিন বিধানসভায় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধ্বেই যোগ দেন তিনি। একাধিক বিষয় নিয়ে বিবৃতি দেন। ওঠে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘ভারতের ইতিহাস বুঝতে হবে। দেশভাগের পরে বাংলাদেশ, পাকিস্তান আলাদা হয়েছে। বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক।’ তাঁর কথায়, ‘এটা কেন্দ্রের ব্যাপার। পররাষ্ট্রের ব্যাপার। তবে এও ঠিক যে, আমাদের অনেক বন্ধু আত্মীয়স্বজন বাংলাদেশে রয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, জাতি যেখানেই আক্রান্ত হোক আমরা নিন্দা করি। আমরা চাই শান্তি ফিরুক। তা নিশ্চিত করা হোক। এই সভা থেকে প্রস্তাব নেওয়া হোক যে আমাদের বন্ধুদের ওপর যেন অত্যাচার না হয়।’


মুখ্যমন্ত্রী এদিন অসন্তোষের সঙ্গে বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে দেখছি, কেন্দ্রীয় সরকার চুপ করে আছে। তার দল রোজ মিছিল করছে। বলছে সীমান্ত আটকে দেব। খাবার দেব না। এটা আমাদের এক্তিয়ার নয়। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী কথা বলুন। বিদেশমন্ত্রী কথা বলুন। দুই দেশ কথা বলুক। না হলে কেন্দ্র ভারতীয়দের ফেরাক। আমরা খাবার জোগাতে পারব। আমি ইসকনের সঙ্গে কথা বলেছি। জাতীয় পতাকার অপমান এভাবে হতে পারে না। কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। দরকারে ওই দেশে কেন্দ্র সরকার প্রতিনিধি পাঠাক শান্তির বার্তা নিয়ে। কেন্দ্র রাষ্ট্রসংঘের কাছে আবেদন করুক, শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য।’

সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাব আবেদন আকারে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে পাঠাবেন বিধানসভার স্পিকার। বৃহস্পতিবারও বিধানসভার অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মমতা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ নিয়ে দেশের সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তিনি তার সঙ্গে আছেন। বুধবার সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রায় একই কথা বলেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, বাংলাদেশের ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।