নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক শিক্ষায় বড়সড় রদবদল। এবার থেকে প্রাথমিকেও চালু সেমেস্টার পদ্ধতি, যার পোশাকি নাম ‘ক্রেডিট বেসড সেমিস্টার সিস্টেম’। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির খুদে পড়ুয়াদের উপর থেকে গতানুগতিক সিলেবাসের চাপ কমাতে এবং তাদের পড়াশোনায় উৎসাহী করতে সেমিস্টারের সঙ্গে চালু হবে ক্রেডিট পয়েন্ট সিস্টেমও। শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান গৌতম পাল। তাঁর ভাষায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর অনুমোদন ক্রমে বিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগ বৃহস্পতিবার আমাদের অনুমতি দিয়েছে এই নয়া পাঠক্রম কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য।’ এবার থেকে বছরে একবার ‘বার্ষিক পরীক্ষা’ নয়, বরং একই শ্রেণিতে দু’বার করে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
গৌতম পাল জানিয়েছেন, ২ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত হবে প্রথম সেমিস্টার এবং জুলাই থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হবে দ্বিতীয় সেমিস্টার। তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের ‘রাইট টু এডুকেশন’ আইন অনুসারে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘নো ডিটেনশন’ পলিসি রয়েছে। তাই প্রাক প্রাথমিকে ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক আনা সম্ভব না হলেও প্রাথমিকের ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে পর্ষদ। সেই অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সিঙ্গল সেমিস্টারে ৩৭৬ ঘণ্টা এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে সিঙ্গল সেমিস্টারে ৪৬০ ঘণ্টা পঠনপাঠনের সময় ধার্য হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য সিঙ্গল সেমিস্টারে বরাদ্দ ১৩.৫ ক্রেডিট পয়েন্ট এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য সিঙ্গল সেমিস্টারে বরাদ্দ ১৬.৫ ক্রেডিট পয়েন্ট। এক্ষেত্রে গৌতম পালের বক্তব্য, ‘ধার্য সময়সীমায় শিক্ষকদের পড়াতে হবে। নয়তো পরীক্ষায় বসানো যাবে না পড়ুয়াদের। এতে শিক্ষক এবং পড়ুয়া উভয়ের দায়িত্বই বাড়বে।’
এখানেই শেষ নয়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত খাতায় কলমে কোনও শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে হবে না। সারাবছর শ্রেণিতে কী করবে সে, তা দেখে মূল্যায়ণ করা হবে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষা দিতে হবে। প্রত্যেক সেমিস্টারের প্রত্যেক বিষয়ে ৪০ নম্বরে গঠনমূলক মূল্যায়ণ হবে (হাতে-কলমে পরীক্ষা নয়) এবং বাকি ৬০ নম্বরে লিখিত পরীক্ষা হবে। রাজ্য জুড়ে প্রাথমিকে যার প্রশ্নপত্র তৈরি করবে পর্ষদ-ই। ক্রেডিট পয়েন্ট-এ সাম্যতা আনতে এবং প্রাথমিকে ‘ইউনিফর্ম প্যাটার্ন’ তৈরির লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন গৌতম পাল। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের মার্কশিটে প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে দেওয়া হবে ক্রেডিট পয়েন্টও। প্রত্যেক বিষয়ের প্রত্যেক চ্যাপ্টারের জন্য থাকবে পৃথক ইউনিট।
গৌতম পালের ভাষায়, ‘সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে এই ক্রেডিট পয়েন্ট গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং এর ভিত্তিতেই ছাত্রছাত্রীদের যোগ্যতা যাচাই করা হবে।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘কেন্দ্রের অনুমোদনে এনসিইআরটি-র জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামোর অনুসরণে এবং ২০২৩ সালের রাজ্য শিক্ষানীতির প্রাসঙ্গিকতা মেনে এই ক্রেডিট বেসড সেমিস্টার সিস্টেম চালু করা হলো। কেবল পাঠ্যপুস্তক পড়াই নয়, ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক মূল্যায়ণে জোর দেওয়া হবে।’
তবে কোন সিলেবাসের উপর বাস্তবায়িত হবে এই নয়া নিয়ম? এ বিষয়ে গৌতম পাল জানিয়েছেন, ‘এ বছর পুরনো পাঠক্রমেই এই নিয়ম বাস্তবায়িত হবে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন পাঠ্যক্রম শুরু হবে। ইতিমধ্যেই সিলেবাস পরিবর্তনের কাজে হাত দিয়েছি।’ এই নয়া কঠোমোর জন্য শিক্ষকদের নিয়ে ভার্চুয়াল মিটিং-র পাশাপাশি ট্রেনিংও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে গৌতম পাল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সচিব রঞ্জন ঝাঁ, ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকার, কলকাতা প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিলের সভাপতি কার্তিক চন্দ্র মান্না।