হীরক কর
শুরু হয়ে গেছে মকর সংক্রান্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৫৮ থেকে এই যোগ বুধবার সকাল ৬টা ৫৮ পর্যন্ত চলে। এই উপলক্ষে হয়েছে বিশাল জমায়েত। সকাল থেকেই সাগর মেলায় আসছেন কাতারে কাতারে মানুষ। আর সেই ভিড়ের সুযোগ নিয়েই উপকূলবর্তী সীমানা দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার সাগর হয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে বাংলাদেশিরা। কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছ থেকে এমনই সতর্কবার্তা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই তথ্য পাওয়ার পরেই নিরাপত্তার বিষয়ে তৎপরতা শুরু করে দেয় সুন্দরবন জেলা পুলিশ। কারণ, তাদের অধীনেই পড়ে সাগর দ্বীপ। উপকূলের প্রবেশ পথ থেকে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নয়া দিল্লির নর্থ ব্লকে কথা হচ্ছিল ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির এক কর্তার সাথে। কথায় কথায় তিনি জানিয়েছিলেন, এবারে জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা এবং এলাহাবাদের মহাকুম্ভ মেলায়। বিশেষ করে গঙ্গাসাগর মেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে বাংলাদেশের জামাত। সুন্দরবন জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘সাগর দ্বীপে যাওয়ার দুটি উপকূলীয় প্রবেশপথ হল— কাকদ্বীপের লট নম্বর ৮ ও নামখানার চেমাগুড়ি। গঙ্গাসাগর মেলায় প্রায় ১৩ হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর আমরা এই দুই পয়েন্টে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সাগরদ্বীপের নিকটস্থ উপকূলীয় জলপথে ক্রমাগত টহলদারি চালাচ্ছেন কোস্টাল পুলিশ ডিভিশনের কর্মীরা। রয়েছে বিশেষ কমান্ডো ট্রেনিং নেওয়া ‘স্ট্রেকো’ বাহিনী।
সোমবার দুপুর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে সাগর মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুরো দায়িত্বটাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এডিজি, আইন শৃঙ্খলা, সুপ্রতিম সরকার। তিনি নিজেই মেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টহল লাগাচ্ছেন।
এর পাশাপাশি গঙ্গাসাগর মেলায় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীও। এ বছর গঙ্গাসাগর মেলা চলার কথা ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। মকর সংক্রান্তির পুণ্য স্নানের দিনেই বরাবর সবথেকে বেশি ভক্তের জমায়েত হয়। এই উপলক্ষে সাগর দ্বীপে ১১৫০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের কথা মাথায় রেখে সীমান্ত সুরক্ষা আরও জোরদার করার পাশাপাশি স্থল, বায়ু ও জলপথে নজরদারি বাড়ানোর বার্তা দিয়েছেন নর্থ ব্লকের ওই কর্তা। গঙ্গাসাগর চত্বরের সুরক্ষায় উপকূলরক্ষী বাহিনী ও নৌ-বাহিনীর সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছে পুলিশ প্রশাসন। সুন্দরবন জেলা পুলিশ প্রশাসন মূলত এই দায়িত্ব পেয়েছে। সম্প্রতি কল্যাণী থানার পুলিশ একটি বাড়িতে হানা দিয়ে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে। কাদের সাহায্যে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছে, তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গঙ্গাসাগর মেলায় তাই কড়া নজরদারি চালাচ্ছে রাজ্য পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘বাংলাদেশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকানোর পাশাপাশি সাগর মেলার বাৎসরিক অনুষ্ঠানও যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হয় তা নিশ্চিত করাও লক্ষ্য রয়েছে। সেই কারণে আমরা এই বছরে অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করেছি। সাধারণত, প্রতি বছরই গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যদিও এবার অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ, এই সময়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে বার্তা এসেছে। প্রতিবেশী দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই এই ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
এই প্রথম গঙ্গাসাগর মেলায় ‘এনডিআরএফ’-এর তরফে নামানো হয় ডগ স্কোয়াড। বস্কো এবং ম্যাক্সি নামের এই দুই কুকুর জলপথ এবং স্থলপথে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাচ্ছে। এনডিআরএফের সেকেন্ড ব্যাটেলিয়নের ইন্সপেক্টর বিশ্বজিৎ পাল জানিয়েছেন, এ বছর ডগ স্কোয়াডের সঙ্গে রয়েছে একজন ডিপ ডাইভার স্পেশালিস্ট।