রাজ্যে খুলছে স্কুল-কলেজ আরও শিথিল কোভিডবিধি

(File Photo: SNS)

সংক্রমণের হার কমায় আগেই বিধি কিছুটা শিথিল করেছিল নবান্ন। সোমবার বিধিতে আরও বেশ কিছুটা ছাড় দেওয়ার কথা আজ পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়ে দিলেন মমতা।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে অষ্টম শ্রেণি থেকে স্কুল কলেজ খোলার কথা ঘোষণা দিলেন নবান্ন থেকে। একইসঙ্গে অফিস কাছারিতে হাজিরার পরিমাণও বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা হল, পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে।

আগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রাজ্যে কোভিড বিধি বজায় ছিল ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। সোমবারই তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এদিনই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেন নয়া কোভিডবিধির। স্কুল কলেজ খোলার দাবিতে ক্রমশ সরব হচ্ছিল বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং অভিভাবকরা।


এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানালেন অষ্টম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ক্লাস চালু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে। পলিটেকনিকসহ অন্যান্য কারিগরি প্রতিষ্ঠানও খোলা থাকবে বিধি মেনে স্কুল কলেজের এই পড়ুয়ারা যাতে সরস্বতী পুজোতে অংশ নিতে পারে, সেজন্যই ৩ তারিখ থেকে এই স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।

তবে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনই ঝুঁকি নিতে চায় না রাজ্য সরকার। তাই প্রাথমিক স্তর থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয়ে পঠনপাঠন শুরু হবে। এর আগে পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলিতে ৫০ শতাংশ কর্মচারীর হাজিরায় অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এদিন তা বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা হল।

সরকারি এবং বেসরকারি সব অফিসই ৭৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে চালু রাখা যাবে বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে সিনেমা হল, থিয়েটার, রেস্তোরাঁ এবং বারও ৭৫ শতাংশ আসন পূর্ণ রাখা যাবে। পার্ক, সুইমিং পুল, পর্যটন কেন্দ্র খোলার ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে এই শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে।

বিয়েবাড়ি বা ওই ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে ৭৫ শতাংশ উপস্থিতিতে অনুমতি দেওয়া হল। একই সঙ্গে রাত্রীকালীন নিয়ন্ত্রণ আরও কিছুটা শিথিল করে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত করা হল।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ৭৫ শতাংশ আসনে লোক নিয়ে ক্রীড়া সংক্রান্ত কাজ হবে। সামনেই সিএবি’র আইপিএল আসছে। সুতরাং একটি ভেন্যু থেকে ৭৫ শতাংশ আসন পূর্ণ রাখা যাছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক কর্মসূচিও ৭৫ শতাংশ আসন পূর্ণ রেখে করা যাবে।

এই প্রসঙ্গে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামেও ৭৫ শতাংশ আসন ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সংক্রমণের কথা বিবেচনা করে রাস্তার মিটিং মিছিলে এখনও কিছুটা কড়াকড়ি জারি রাখার কথা জানান মমতা। কারণ, তাঁর আশঙ্কা সবটা একসঙ্গে ছাড়লে সমস্যা হতে পারে। তাই এক্ষত্রে সর্বাধিক ২০০ জনের সমাগম করা যাবে।

এছাড়া দিল্লি এবং মুম্বইয়ের সঙ্গে কলকাতার আকাশ পথে সংযোগে ছাড় দেওয়া হলেও কলকাতা-বেঙ্গালুরু উড়ান পরিষেবায় এখনই পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হচ্ছে না সেখানকার সংক্রমণের হার বেশি থাকার কারণে একই সঙ্গে কলকাতা এবং ব্রিটেনের মধ্যে উড়ানেও বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হল পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে। যাত্রীসংখ্যা বাড়ানো হল মেট্রো এবং লোকাল ট্রেন পরিষেবার ক্ষেত্রেও যাত্রীসংখ্যা ৫০ শতাংশ করোনা সংক্রমণের সংখ্যা এখন অনেকটাই কম তাই স্কুল কবে খুলবে?

এই নিয়ে শিক্ষা মহল থেকে অভিভাবক সব মহলই চিন্তিত। রাজ্যজুড়ে স্কুল খোলার দাবিতে আন্দোলনে নামতে দেখা গেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ও গেরুয়া শিবিরের ছাত্র সংগঠনগুলোকে। এবার সব জল্পনার অবসান ঘটাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার নবান্ন থেকে এক সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যের সব স্কুল খুলে যাবে। এর সাথে বলেন, তবে সবার জন্যই এখনই স্কুলের দরজা খুলছে না অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের জন্য স্কুলের দরজা খুলছে। প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য পাড়ায় স্কুল কর্মসূচী চলবে।

একইসঙ্গে ৩ তারিখ থেকে খুলে যাচ্ছে রাজ্যের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ও মূলত করোনা অতিমারীর জেরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। প্রায় ২ বছর ধরে চলে আসছে অনলাইনে ক্লাস। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আগে গত বছর জানুয়ারিতে কয়েকদিনের জন্য নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন শুরু হলেও ফের করোনার বাড়বাড়ন্ত জন্য তা বন্ধ হয়ে যায়।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগেই বলেছিলেন, রাজ্য সরকার স্কুল খোলারই পক্ষে। শিশুদের ক্ষতি না করে, সংক্রমণ না বাড়িয়ে স্কুল খোলার পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এবার স্কুল কবে খুলবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু এরপরও বারবার দেখা যায় রাজ্যে স্কুল খোলার জন্য তুমুল আন্দোলন শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। সোমবার অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি দেখা যায় বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র পরিষদ।

অন্যদিকে এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেট, সোদপুর, বারাসাত, কলেজ স্ট্রিটে বিক্ষোভ দেখায় SFI। সেই আন্দোলনে কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে যানবাহন চলাচল। কেননা যেখানেই পুলিশ বাধা দিয়েছে আন্দোলনে সেখানেই রাস্তায় বসে পড়ে অবরোধ শুরু করে আন্দোলনকারী।

যদিও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যেহেতু সামনেই সরস্বতী পুজো তাই ৩ তারিখ থেকে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য স্কুলের দরজা খুলে দেওয়া হল। এরফলে ওইদিন থেকেই ৫ শ্রেণীর পড়ুয়ারা স্কুলে স্কুলে গিয়ে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করতে পারবে।

বাকি প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য অবশ্য পাড়ায় শিক্ষালয় নামে যে কর্মসূচী রাজ্য সরকার চালু করেছে সেটাই চলবে। একই সঙ্গে রাজ্যের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ও ৩ তারিখ থেকে খুলে যাচ্ছে। ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও আর কোনও বাধা রইল না বঙ্গের পড়ুয়াদের সামনে। থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার কথা ঘোষণা করা হল নবান্ন থেকে।

রাজ্যে খুলছে স্কুল-কলেজ আরও শিথিল কোভিড বিধি (Photo-SNS)

 

অন্যদিকে আজ পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকেই টোকেন সিস্টেম চালু করার সিদ্ধান্ত নিল মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। সপ্তাহের শুরুতেই রাজ্যে লাফিয়ে নামল কোভিড গ্রাফ। গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯১০ জন। যা রবিবারও ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার। তবে মৃত্যুর হার চিন্তায় রাখছে।

একদিনে বঙ্গে করোনার বলি ৩৬ জন। বরাবরই এই সংখ্যা ৩০-এর বেশি। ফলে সংক্রমণ কমলেও সেই তুলনায় মৃত্যুর হারে হ্রাস না থাকায় চিন্তা জারি। সংক্রমণের নিরিখে এবার কলকাতাকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উত্তর ২৪ পরগনা। স্বাস্থ্যদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পজিটিভিটি রেট ৫.৪৯ শতাংশ।