বুধবার দুপুরে কলকাতার স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা মামলায় রাজ্যকে দ্রুত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল স্যাটের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের রিভিউ পিটিশন খারিজ করে আগেকার রায়ই বহাল রাখল স্যাট। তবে রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করতে পারে বলে আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, স্যাটের এই রায়দানের বিরুদ্ধে হয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কিংবা সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হতে হবে রাজ্যকে। কেনা, ইতিপূর্বে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশেই স্যাট এই মামলার পুনরায় শুনানি চালিয়ে রায়দান দেয়। বুধবার স্যাটের বিচারবিভাগীয় সদস্য বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ এবং প্রশাসনিক সদস্য সুবেশকুমার দাসের ডিভিশন বেঞ্চ আগেকার রায়টি বহাল রাখে।
রাজ্য রিভিউ পিটিশন যেসব কারণ দেখিয়েছে, তা ভিত্তিহীন বলে মনে করে স্যাটের ডিভিশন বেঞ্চ। ২০০৬ সাল থেকে ধাপে ধাপে রাজ্য সরকারের কর্মীদের যে মহার্ঘভাতা বেড়েছে তা অর্থাৎ ৪২ শতাংশ বকেয়া মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্ট কিংবা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারে বলে আদেশনামায় উল্লেখ আছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দাবি নিয়ে বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠন স্যাটে মামলা দাখিল করে। সেখানে স্যাট রায়দানের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, ‘সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা রাজ্যের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল’ এক প্রকার মহার্ঘভাতাটি রাজ্যের দান হিসেবে উঠে আসে। স্যাটের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালে ৩০ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আবেদনকারী সরকারি কর্মী সংগঠনের কর্মকর্তারা।
২০১৮ সালে ৩১ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি শেখর ববি শরাফ এবং বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত স্যাটের আগেকার রায় খারিজ করে জানিয়ে দেয়, ‘রাজ্যের দয়ার দান হতে পারে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা।’ তিন মাসের মধ্যে স্যাটকেই এই মামলার পুনর্বিচারের নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
২০১৯ সালের ২৬ জুলাই স্যাট মহার্ঘভাতা মামলায় রায়দানে জানিয়েছিল, ‘কেন্দ্রীয় হারে রাজ্য সকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা দিতে হবে। সেই সঙ্গে ৬ মাসের মধ্যেই বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। এবং তা করতে হবে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালুর আগে।’ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল স্যাট। নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে রাজ্য এই মামলায় রিভিউ পিটিশন দাখিল করে।
পাশাপাশি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত রাজ্যের বেহাল আর্থিক অবস্থার তথ্য পেশ করেন। সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি উল্লেখ করে আগামী দেড় বছর রাজ কোনও আর্থিক দায়ভার বহন করতে পারবে না বলে জানান অ্যাডভোকেট জেনারেল।
তবে এইসব যুক্তি স্যাট ভিত্তিহীন বলে বুধবারের রায়দানে উল্লেখ করে থাকে। রাজ্যকে দ্রুত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় স্যাট। পাশাপশি, এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য কলকাতা হাইকোর্ট সহ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারে বলে জানিয়েছে স্যাট। স্যাটের আজকের রায়ে খুশি সরকারি কর্মী সংগঠনের মামলার অন্যতম আইজীবী সর্দার আমজাদ আলি। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় হারে রাজ্য সরকারি কর্মীরা মহার্ঘভাতা পাওয়ার যোগ্য, রাজ্য নানা অছিলায় সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য আর্থিক অনুদানকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।’
স্যাটের রায়কে সরকারি কর্মচারী সংগঠনের জয় হিসেবেই দেখছেন বামফ্রন্টের নেতা তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বুধবার তিনি বলেন, ডিএ তো সরকারি কর্মচারীদের আইনি প্রাপ্য। এটা না দেওয়ার জন্য সরকার এতদিন নানান ফন্দি ফিকির খুঁজছিল। এটা শাসক সরকারের পুঁজিবাদী ধনতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন। আমাদের দুর্ভাগ্য এইরকম অগণতান্ত্রিক সরকারকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
স্যাটের রায় ঘোষণার পর তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, আশা করি, স্যাট যে রায় দিয়েছে সেটা নিশ্চয়ই স্বীকার করে নেবে রাজ্য সরকার। কাল আদালতের রায় সর্বজনগ্রাহ্য। ডিএ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে সদর্থক মীমাংসা হোক, সেটাই চাই।
বাম সমর্থক কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে স্যাটের রায়কে স্বাগত জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে যে ৪২ শতাংশ ডিএ বাকি রয়েছে তা এখনই না দিয়ে প্রভিডেন্ট ফান্ডে রেখে দিন। অবসরের সময় এই বকেয়া ডিএ’র টাকা পেনশনের সঙ্গে কয়েকটি কিস্তিতে সরকার দিক।