সিএএ বিরোধিতার আবহে সরস্বতী বন্দনা

এনআরসি নিয়ে বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভ দেখা গেলেও শাড়ি-পাঞ্জাবি-প্রেম সব মিলিয়ে বুধবার শহরের সর্বত্র দেখা গেল সরস্বতী পুজোর চেনা ছবি। (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

বাণীবন্দনার দিনে এনআরসি-সিএএ বিরােধিতায় সরব হল ছাত্রছাত্রীরা। পুজো, জমায়েত করে অঞ্জলি দেওয়া, খিচুড়িতে ভুরিভােজ, প্রেম, আড্ডা সবটাই ছিল স্বাভাবিক, সরস্বতী পুজোতে যেমন হয়। ব্যতিক্রম শুধু পুজোর দিনে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ। উৎসবে মেতেও এনআরসি-সিএএ লাগু করার প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীদের সবর হতে দেখে কিছুটা অবাক অভিজ্ঞমহলও। তাঁদের কথায়, দেশের ঐক্য বজায় রাখতে সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম লড়াকু মনােভাব দেখিয়েছে প্রথম থেকেই। সরস্বতী পুজোর দিনে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভে ‘হাতেখড়ি’ হল এক নতুন আন্দোলনের এমনটাই মনে করছেন তাঁরা। এই প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাড়িয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

বুধবার সরস্বতী পুজোর দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর এবং বালিগঞ্জ ক্যাম্পাসে এনআরসি ও সিএএ’র বিরােধিতায় বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। শুধু এই দুটি ক্যাম্পাস নয়, বঙ্গবাসী, জয়পুরিয়া সহ বেশ কিছু কলেজেও পুজোর দিনে পড়ুয়াদের এনআরসি’র প্রতিবাদে সরব হতে দেখা যায়।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই এনআরসি এবং সিএএ লাগু করা নিয়ে দেশজুড়ে ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেছিলেন, ছাত্রদের প্রতিবাদের প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে পড়বে না। কিন্তু সরস্বতী পুজোর দিনেও পড়ুয়াদের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে অভিজ্ঞমহলের দাবি, ছাত্রছাত্রীরা অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে এই প্রতিবাদী আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়, এদিনের বিক্ষোভই তার প্রমাণ। এদিকে ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ছাত্ররাই প্রতিবাদের মুখ। কিভাবে তারা প্রতিবাদ জানাবে, তা ঠিক করবে তারাই। পাশাপাশি ছাত্রদের পাশে থাকার বার্তাও দেন তিনি।


অন্যদিকে এনআরসি নিয়ে বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভ দেখা গেলেও শাড়ি-পাঞ্জাবি-প্রেম সব মিলিয়ে বুধবার শহরের সর্বত্র দেখা গেল সরস্বতী পুজোর চেনা ছবি। শাড়িতেই ভরসা রাখতে দেখা গেল ‘সরস্বতী’-দের আর ছেলেরা বাঙালিয়ানা বজায় রাখলেন পাঞ্জাবিতে। শাড়ির কুচি সামলাতে না পারা তরুণীকে সাহায্যের জন্য নিঃসঙ্কোচে এগিয়ে আসতে দেখা গেল তরুণদের। সঙ্গে দেদার সেলফি। অঞ্জলি, খিচুড়ি আর প্রেম, সব মিলিয়ে জমজমাট পুজো। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে নতুন পড়ুয়াদের সঙ্গে সঙ্গে ভিড় জমিয়েছিল প্রাক্তনীরাও।

বছরে একটা দিন, পুরানাে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে ভেবেই ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসেছিল অধুনা বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা প্রীতম। তার কথায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একসময় দ্বিতীয় বাড়ি ছিল। কিন্তু পড়াশােনা শেষ হওয়ার পর যে যার মতাে কর্মজীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রায় দু’বছর পর সরস্বতী পুজোর দিন সমস্ত বন্ধুরা মিলে দেখা করার সিদ্ধান্ত হয়। আর সেই পরিকল্পনা মতােই ছুটি নিয়ে কলকাতায় দৌড়ে আসা। প্রীতমের পাশে বসা মহুল জানায়, দুই বছরে কিছুই বদলায়নি। ক্যাম্পাসের প্রথম সরস্বতী পুজোয় যেভাবে মজা করেছিল তারা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আনন্দ আরও বেড়েছে বলে দাবি এই প্রাক্তনীর।

শুধু ছাত্রছাত্রীদের নয়, এদিন সম্পূর্ণ অন্য মেজাজে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও। নীল-সাদা কাজ করা পাঞ্জাবি পরে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন আশুতােষ কলেজে। প্রসঙ্গত, এই কলেজে পড়াকালীনই ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তার। কিন্তু পুজোর দিন রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে পার্থবাবুকে দেখা গেল সম্পূর্ণ অন্য মেজাজে। প্রশ্নের খেই ধরে ছাত্রজীবনের স্মৃতি সামনে রাখেন তিনি। অল্প-বিস্তর লজ্জা পেলেও শেষমেশ বলেই ফেলেন, ছাত্রজীবনে তিনিও আর পাঁচটা যুবকের মতাে পাঞ্জাবি পরেই কলেজে আসতেন।

অন্যান্যদিন তাঁর কণ্ঠে রাজনীতি এবং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামাে নিয়ে কথা শােনা গেলেও এদিন ছাত্রদের মজার ছলে উপদেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। হাসিমুখে ছেলেদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন সরস্বতী পুজোর দিন মেয়ে পছন্দ না করতে। এদিন সমস্ত মেয়েকেই এক দেখতে লাগে।

আশুতােষ কলেজের অতীতের সরস্বতী পুজোর দিনগুলি স্মরণ করে তিনি বলেন, যােগমায়া দেবী কলেজের ছাত্রী ছিলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় কলেজের সামনে যে পুজো হত সেই পুজোর দায়িত্ব ছাত্রী থাকাকালীন একা হাতে সামলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতিচারণ করে এমনটাই জানান পার্থ চট্টোপাধ্যায়।