স্যালাইন কাণ্ডে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী ও স্ত্রীরোগের বিভাগীয় প্রধান মহম্মদ আলাউদ্দিনকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন তদন্তকারী কমিটির সদস্যরা। এই হাসপাতালেই প্রসূতিদের নিম্নমানের স্যালাইন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এই কমিটির সদস্যরা মৌসুমী ও মহম্মদ আলাউদ্দিনকে কলকাতায় তলব করে। তলব পেয়ে তদন্তকারীদের সহযোগিতা করেছেন তাঁরা। অপরদিকে, অসুস্থ তিন প্রসূতিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে একই দিনে অস্ত্রোপচার করিয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন পাঁচ প্রসূতি। এরপরই তাঁরা প্রত্যেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুক্রবার সকলে অসুস্থ এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। তাঁর নাম মামণি রুইদাস (২২)। বাকিদের মধ্যে দুইজন এখনও ভেন্টিলেশনে এবং একজন আইসিইউতে ভর্তি আছেন। মৃত ও অসুস্থ রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, নিম্নমানের স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। এই কারণেই একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বাকিরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। শনিবার সেই তদন্ত কমিটির সদস্যরা মেদিনীপুর মেডিক্যালে গিয়েছিলেন। এদিন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে একাধিক প্রশ্ন করেন তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, একটি ইউনিটই ওই পাঁচ প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেছে। ওটিতে কোনও সিনিয়র চিকিৎসক ছিলেন কি না সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজ ও রেজিস্টারের তথ্য সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, হাসপাতালে থাকা স্যালাইন ও ওষুধপত্রের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
রবিবারই গ্রিন করিডোর করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে আনা হল গুরুতর অসুস্থ ৩ প্রসূতিকে। তাঁরা প্রত্যেকেই নিম্নমানের স্যালাইনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও রোগীদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরের ঘটনা পরিবারকে আগে থেকে জানানো হয়নি। রবিবার মেদিনীপুর মেডিক্যালের আইসিইউ বিল্ডিংয়ের সামনে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স এসে পৌঁছানোর পরে তাঁরা বিষয়টি জানতে পেরেছেন।
উল্লেখ্য, এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত হওয়া তিন প্রসূতির নাম, মাম্পি সিংহ (২৩), নাসরিন খাতুন (১৯) এবং মিনারা বিবি (৩১)। গ্রিন করিডোর করে তাঁদের কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে ৩টি অ্যাম্বুল্যান্সে চিকিৎসক ও নার্সদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, প্রায় আট মাস আগে স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে সরিয়ে রাখা হয়েছিল রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন। আর এই স্যালাইন মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসুতিদের শরীরে ব্যবহারের পরই মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। যদিও এই স্যালাইনের কারণেই ওই পাঁচ প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। এবিষয়ে তদন্ত করে দেখছেন ১৩ সদস্যের একটি তদন্তকারী দল। রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল নামে এক কোম্পানির তৈরি। বর্তমানে এই কোম্পানির তৈরি সব স্যালাইন সরকারি হাসপাতালে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর।